সাড়ে আট মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। অভিযানের শুরু থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি রাশিয়ার কাছ থেকে কম দামে তেল কিনছে এবং ভবিষ্যতেও এটি বন্ধ করবে না। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর রাশিয়া সফরে গিয়ে এই কথা জানিয়েছেন।
গত সোমবার দু’দিনের রাশিয়া সফরে যান জয়শঙ্কর। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর মস্কোতে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটিই প্রথম সফর। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন আক্রমণ করার পর রাশিয়ায় নিজের প্রথম সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর বলেছেন, ভারত রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রাখবে। কারণ এটি দেশের জন্য সুবিধাজনক।
মূলত ভারতের এই বার্তা রাশিয়ার অর্থনীতিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পঙ্গু করার পশ্চিমা প্রচেষ্টার পাল্টা পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর রাশিয়াকে ঠেকাতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এতে করে অনেক দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে দূরে সরে গেলেও কৌশলী অবস্থান নেয় ভারত।
মূলত নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে ডিসকাউন্টে তেল কিনতে থাকে ভারত। আর কম দামে তেল আমদানি করে ভারতের আর্থিক লাভও হয়েছে অনেক বেশি।
আল জাজিরা বলছে, জয়শঙ্কর মঙ্গলবার মস্কোতে রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় কৃষি, পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস, বন্দর ও শিপিং, অর্থ, রাসায়নিক এবং সার ও বাণিজ্যের দায়িত্বে নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্বের সঙ্গে দেখে ভারত। রাশিয়া ভারতের দৃঢ় এবং পরীক্ষিত অংশীদার। বহু দশক ধরে আমাদের সম্পর্ক আমাদের উভয় দেশকে খুব, খুব ভালো সেবা করে এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল ও গ্যাসের ভোক্তা দেশ এবং আমরা এমন ভোক্তা যেখানে আয়ের মাত্রা খুব বেশি নয়। তাই এটা নিশ্চিত করা আমাদের মৌলিক বাধ্যবাধকতা যে, আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে সুবিধাজনক শর্তে ভারতীয় ভোক্তারা সর্বোত্তম পথটি বেছে নিতে পারে।’
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখছি যে, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক আমাদের জন্য সুবিধাজনক। আর যদি এই সম্পর্ক আমার সুবিধার জন্য কাজ করে তবে আমি এটি চালিয়ে যেতে চাই।’
রুশ আগ্রাসন শুরুর পর সাড়ে ৮ মাস পার হলেও ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানকে’ এখনও নিন্দা জানায়নি ভারত। এমনকি পশ্চিমা ক্রেতারা রুশ জ্বালানি বয়কট করলেও চীনের পরে রাশিয়ার তেলের বৃহত্তম গ্রাহক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে ভারত।
এদিকে জয়শঙ্করের এই ঘোষণাটি এমন সময়ে সামনে এলো যখন চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেনের নয়াদিল্লি সফরে আসার কথা রয়েছে। ওই সফরে তিনি ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাশিয়ান তেলের দাম কমানোর জন্য জি-৭ এর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে নয়াদিল্লি এবং বেইজিং উভয়ই এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলোতে যোগ দিতে অস্বীকার করে এসেছে।