বিশ্বব্যাপী নারী সাংবাদিকদের ওপর অনলাইনে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের সহিংসতা থেকে পরবর্তীতে নারী সাংবাদিকদের হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
সম্প্রতি এক সমীক্ষাভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এটিকে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জার্নালিস্ট (আইসিএফজে) ও শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি ১৫টি দেশের এক হাজারেরও বেশি নারী সাংবাদিকের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৮% নারী সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন। ২৫% শারীরিক আক্রমণের শিকার এবং ১৪% যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
অনলাইনে সহিংসতা-হুমকির শিকার নারীরা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাটপর্মগুলোর অ্যালগরিদম সংশোধনের অনুরোধ করেছে। তারা বলেছে, নারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায় এমন তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। লিঙ্গ-ভিত্তিক অনলাইন সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করতে তাদের সরকার ও জায়ান্ট টেক কর্পোরেশনগুলোর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
প্রতিবেদনে সহিংসতার শিকার নারী সাংবাদিকদের ক্রমবর্ধমান প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, অফলাইনে নারীর প্রতি “ভুক্তভোগী দোষারোপ”, “যৌন সহিংসতা”র মতো ঘটনাগুলো অহরহ ঘটে থাকে। পুরুষতান্ত্রিক শাসনকাঠামোর কারণে এই বিষয়গুলো অনলাইন মাধ্যমেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের মধ্যে দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য অবজার্ভারের প্রখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিক ক্যারোল ক্যাডওয়ালাদরও ছিলেন। যিনি দেখিয়েছিলেন, কীভাবে লাখ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য গোপনে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে চলে যেতো।
সমীক্ষা দলটির পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ক্যাডওয়ালাদরের বিরুদ্ধে ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অনলাইনে এক হাজারেরও বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের সহিংসতার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বেশিরভাগই ব্যক্তিগত ও পেশাগত দুই জায়গা থেকেই নারী সাংবাদিকদের হেয় করে কথা বলেছেন।
প্রতিবেদনটি অফলাইনে নারীর প্রতি কী ধরনের সহিংসতা ঘটে তার একটি ইঙ্গিতও দেয়। অনলাইন মাধ্যমের হয়রানি পরে কীভাবে অফলাইনে আক্রমণাত্মক করে তোলে তারও একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে একটি উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। মেক্সিকান সাংবাদিক মারিয়া এলেনা ফেরালের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। যিনি খুন হওয়ার আগে শহরের মেয়রের বিরুদ্ধে অনলাইনে হয়রানির বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছিলেন।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত সিনিয়র গবেষক অধ্যাপক কালিনা বোনচেভা বলেছেন, “আমরা এখন নারী সাংবাদিকদের প্রতি সহিংসতার স্তরের সবচেয়ে সংকট পর্যায়ে আছি। যারা গবেষণায় অংশ নিয়েছিল তারা অনলাইন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যারা সমাজে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন তাদের জীবন রক্ষা করার জন্য নীতিনির্ধারকদের এখনই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।”