রাশিয়ার দখলকৃত ইউক্রেনীয় শহর খেরসনে বেসামরিকদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সেখানে অবস্থান নিচ্ছে রুশ সেনারা। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া শহরটির এক বাসিন্দা এই অভিযোগ করেছেন। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এখবর জানিয়েছে।
খেরসনের বাসিন্দার ভাষ্য অনুসারে, রুশ সেনারা খেরসন শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। ইউক্রেনীয়দের এগিয়ে আসার অনুমান করে রুশ সেনারা শহুরে যুদ্ধে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
রুশ মনোনীত খেরসনের বেসামরিক কর্তৃপক্ষ এখনও বেসামরিকদের শহর ছেড়ে যেতে আহ্বান জানাচ্ছে। খেরসন অঞ্চলের প্রাদেশিক রাজধানীও খেরসন শহর। এটি ডিনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। ইউক্রেনীয় গোলাবর্ষণে পশ্চিম তীরে সরবরাহ পাঠাতে পারছে না রাশিয়া।
বৃহস্পতিবার শহরটির উপ-প্রধান কিরিল স্ট্রেমোসোভ বলেছিলেন, রুশ সেনারা হয়ত খেরসন থেকে পিছু হটতে পারে। কিন্তু শুক্রবার বক্তব্য পাল্টে তিনি বলছেন, বেসামরিকরা যাতে শহর ছেড়ে যেতে উৎসাহী হয় সেজন্য এই কথা বলেছেন তিনি।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, খেরসনে রুশ সেনাদের পিছু হটার বিষয়টি সাজানো হতে পারে। যাতে করে ইউক্রেনীয় সেনাদের ফাঁদে ফেলতে পারে। ডিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীরে বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়াকে নাটক হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
খেরসনের এক বাসিন্দা এপিকে বলেছেন, খালি করা বাসাগুলোতে অবস্থান করছে রুশ সেনারা। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে, বাড়ির মালিকানা দলিল যাচাই করছে। ভবনের মালিকানার প্রমাণ দিতে না পারলে বাসা থেকে বের করে দিচ্ছে।
ওই ব্যক্তি বলেন, রুশ সেনারা স্থানীয়দের জোর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে এবং তারা সেখানে অবস্থান করছে। নিশ্চিতভাবে তারা শহরে ইউক্রেনীয় সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
খেরসনের হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে এখন আর রোগীদের সেবা দিচ্ছে না। শহরের বাসিন্দারা খাবারের সরবরাহে ঘাটতি নিয়েও অভিযোগ করছেন।
কনস্টানন্টিন নামের ব্যক্তি বলেন, শহরে প্রায় কোনও সরবরাহ নেই বললেই চলে। লোকজন নিজেদের জমিয়ে রাখা খাদ্য ব্যবহার করছেন। যে অল্প কয়েকটি দোকান খোলা রয়েছে সেগুলোতে অনেক দীর্ঘ লাইন মানুষের।
ইউক্রেনীয় সামরিক বিশ্লেষক ওলেহ ঝাডানব বলেছেন, খেরসনকে পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণের অংশ হিসেবে ডিনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীরে রুশ সেনাদের সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এতে করে নদী দিয়ে অস্ত্র ও খাদ্য সরবরাহ করতে পারছে না। ইউক্রেনীয় গোলাবর্ষণে নদীর বিভিন্ন সেতুও ধ্বংস হয়েছে।
তিনি বলেন, পরিবহন রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিপদ বুঝতে পারছে রুশরা। বাস্তবিক অর্থে এখন তাদের ডিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীরে পিছু হটতে হচ্ছে। কিন্তু রুশ সেনারা শান্তিপূর্ণভাবে খেরসন ছাড়তে রাজি না। তারা শহরের ভেতরে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা নতুন নিয়োগ দেওয়া সেনাদের এবং নতুন ট্যাকটিক্যাল ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করেছে।
ঝাডানব মনে করেন, খেরসনের পশ্চিম তীরে রুশদের তুলনায় ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী বেশি সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। খেরসনে গোলাবর্ষণ করতে পারবে ইউক্রেনীয়রা কিন্তু রুশদের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে লিপ্ত হতে হবে না।
তিনি বলেন, কিয়েভ সময় নিচ্ছে। কারণ খেরসনে রুশদের শক্তি কমে যাচ্ছে, তারা প্রতিদিন দুর্বল হচ্ছে। যা ইউক্রেনকে প্রধান হামলার জন্য শক্তি জমা করার সুযোগ দিচ্ছে।
ইউক্রেনীয় দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক নারী মুখপাত্র নাতালিয়া হুমেনিউক ইউক্রেনের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে বলেছেন, রুশ সেনা সদস্যদের অনেকে নিজেদের বেসামরিক বেশ ধরছে।