টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আজ ভারত জিতলে কাগজে কলমে সেমিফাইনালের সম্ভাবনা উজ্জ্বল থাকতো পাকিস্তানের। কিন্তু রোহিত শর্মাদের ৫ উইকেটে হারিয়ে বাবর আজমদের আরও নড়বড়ে অবস্থানে ফেলে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের ১৩৪ রানের লক্ষ্য ২ বল হাতে রেখেই ছুঁয়েছে প্রোটিয়া দল।
ভারতের এই পরাজয়ে বৃহস্পতিবার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে পাকিস্তানকে জিততেই হবে। একই সঙ্গে প্রার্থনায় থাকতে হবে ভারত যেন বাংলাদেশের কাছে এবং জিম্বাবুয়ে অথবা দক্ষিণ আফ্রিকা যেন নেদারল্যান্ডের কাছে হারে। অর্থাৎ সেমির সম্ভাবনা এখন আর পাকিস্তানের হাতে নেই!
৩ ম্যাচে গ্রুপ দুইয়ে ৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে প্রোটিয়া দল। টুর্নামেন্টের প্রথম হারে সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে নেমে গেছে ভারত। তিনে থাকা বাংলাদেশেরও পয়েন্ট ৪। জিম্বাবুয়ে ৩ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে চারে রয়েছে। পাকিস্তান সমান ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচেই রয়েছে।
পার্থের উইকেটের গতি আর বাউন্সে ভারতীয় ব্যাটারদের কাবু করার হুমকি দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। টস হেরে বোলিং করতে হলেও পরিকল্পনায় কোনও বদল হয়নি প্রোটিয়াদের। পাওয়ার প্লেতে বিশ্বের সেরা ৩ ব্যাটারদের একে একে সাজঘরে পাঠিয়েছেন লুঙ্গি এনগিদি। রোহিত শর্মা (১৫), লোকেশ রাহুল (৯) ও ফর্মে থাকা বিরাট কোহলির (১২) কেউ প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। দলীয় ৪২ রানে দীপক হুদা ফিরলে আরও বিপদ বাড়ে তাদের। তবে সূর্যকুমার যাদব নিজের স্বভাব সুলভ ব্যাটিংটা করে যাওয়ায় স্কোরবোর্ড যে একটা জায়গায় যাবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল না। দীনেশ কার্তিক ও সূর্যর ৫২ রানের জুটিতেই শতরানে পৌঁছানো গেছে। দলীয় ১০১ রানে কার্তিক ৬ রানে ফিরেছেন। কিন্তু আগ্রাসী ব্যাটিংটা ধরে রাখেন সূর্যকুমার। তার ব্যাটে চড়েই ১২৭ রান পর্যন্ত আসা। ১৮.৫ ওভারে সূর্যর বিদায়ের পর স্কোরবোর্ডে সেভাবে রানও যোগ হয়নি। ৯ উইকেটে ভারত ১৩৩ রান করতে পেরেছে। ইনিংসের পুরো ভিত গড়ে দেওয়া সূর্য ৪০ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৮ রান করেছেন।
২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ভারতীয়দের কাঁপিয়ে দিতে অবদান ছিল লুঙ্গি এনগিদির। ম্যাচসেরাও তিনি। ১৫ রানে ৩টি নিয়েছেন ওয়েইন পারনেলও। তাছাড়া আইনরিখ নর্কিয়া ২৩ রানে এক উইকেট নিয়েছেন।
সাধারণ এই স্কোরের পর প্রোটিয়াদের জয়ের পাল্লাই ছিল ভারি। কিন্তু প্রোটিয়া দল ৩ রানে দুই উইকেট হারিয়ে জয়ের পথটাকে নিজেরাই জটিল করেছে। ২৪ রানে অধিনায়ক বাভুমা বিদায় নিলে ভীষণ চাপে পড়ে যায় প্রোটিয়ারা। তার পর তো এইডেন মারক্রাম ও ডেভিড মিলারের আগ্রাসী ব্যাটিং-ই ম্যাচটা বের করে এনেছে। অবশ্য শেষটা রোমাঞ্চকর করে তোলা ভারতেরও এই হারের জন্য দায় কম নয়। ১৩তম ওভারে মিলারের রানআউট মিস করেছেন রোহিত। তার আগের ওভারে মারক্রামের ক্যাচ ছেড়েছেন কোহলি। শেষ পর্যন্ত এই দুই ব্যাটারই জয়ের মূল নায়ক।
১৬তম ওভারে মারক্রামকে ফিরিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। ফেরার আগে ৪১ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৫২ রান করেছেন।
তার পরেও ম্যাচটা হাতছাড়া করতে দেননি মিলার। অশ্বিনের ১৮তম ওভারেই দুই ছয় মেরে সমীকরণ ১২ বলে ১২ রানে নামিয়ে আনেন তিনি। একই ওভারে স্টাবসের উইকেট ও ডট বল দিয়ে প্রোটিয়াদের ওপর চাপ তৈরি করেছিল ভারত। পরের ওভারেও সামি ৬ রান দিয়ে ম্যাচটা শেষ ওভার পর্যন্ত নিয়ে যেতে পেরেছেন। কিন্তু শেষ ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে দুই চার মেরে সব চাপ দূর করেন মিলার। প্রোটিয়া দল নিশ্চিত করে ৫ উইকেটের জয়। মিলার ৪৬ বলে ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ছিলেন ৫৯ রানে।
দারুণ শুরু এনে দেওয়া পেসার আরশদ্বীপ সিং ২৫ রানে দুই উইকেট নিয়েছেন। ১৩ রানে একটি নেন মোহাম্মদ সামি। ২৯ ও ৪৩ রানে সমসংখ্যক শিকার যথাক্রমে হার্দিক পান্ডিয়া ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের।