পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে সভাপতি বদলের জল্পনায় অস্বস্তিতে মুরলীধর সেন লেনের কর্তারা। বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে সরিয়ে তার জায়গায় আনা হচ্ছে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে! দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে অসম্ভব জনপ্রিয়তা আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াইয়ের জন্য তাকেই রাজ্যের বিজেপির কাণ্ডারী হিসেবে ভাবছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যদিও গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও কথা না বলা হলেও এমন জল্পনায় উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি।
বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরেও চলছে ব্যাপক আলোচনা। দিল্লি সূত্রের খবর বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, এ বিষয়ে সবুজ সংকেত মিলেছে শাহ-নাড্ডাদের তরফে।
বলা হচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলকে সাংগঠনিকভাবে ঢেলে সাজাতেই নাকি সভাপতি বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেক্ষেত্রে শুভেন্দু অধিকারীকে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি করে সুকান্ত মজুমদারকে সর্বভারতীয় সম্পাদক পদে পাঠানো হলেও তিনি কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের মতো পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনের বাড়তি দায়িত্বে থাকবেন। শুভেন্দু সভাপতি হলে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার পদে আনা হবে উত্তরবঙ্গের বিধায়ক মনোজ টিগগাকে। দলের বর্তমান নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় দুই পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল ও মঙ্গল পাণ্ডে। যুব মোর্চা, তপশিলি মোর্চা, সংখ্যালঘু মোর্চার নেতৃত্বের দুর্বলতা কারণে বুথ স্তর থেকে জেলা পর্যন্ত সংগঠনের হাল খুবই খারাপ! আর তাই সরতে হচ্ছে বর্তমান নেতৃত্বকে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, শুভেন্দুর সাংগঠনিক ক্ষমতাই তাকে সভাপতি পদে এগিয়ে রাখছে। এই মুহূর্তে রাজ্য বিজেপির নেতা হিসেবে তিনি শুধু বিধানসভায় নন, দলের কর্মীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। বিজেপিতে এসে একুশের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে তিনি যেভাবে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে চমক দিয়েছিলেন তা বিস্মিত করেছিল রাজ্যবাসীকে। তার এই জয়ই তাকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘গুডবুকে’ স্থান করে দিয়েছিল। একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপির মর্মান্তিক হারের পরেও তিনি প্রথম দিন থেকেই শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে বারবার সরব রয়েছেন। এর পাশাপাশি শুভেন্দু হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসেবে তার ইমেজ তৈরি করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। যা বিজেপি শুধু নয়, সংঘ পরিবারের কাছেও নিজেকে আস্থাশীল করে তুলেছেন। তৃণমূল থেকে বিজেপি এসে এত দ্রুত জনপ্রিয়তা মুকুল রায়ও গড়ে তুলতে পারেননি। শুভেন্দুর প্রতিটি সভার ভিড় তাই প্রমাণ করছে। এসব কিছুই তার সভাপতি হওয়ার জল্পনাকে আরও উসকে দিচ্ছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। যদিও এই জল্পনা নিয়ে শুভেন্দু কোনও কথা বলেননি প্রকাশ্যে।
অপর দিকে, দিলীপ ঘোষের পর দলের সভাপতি পদ নেওয়া পর বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার রাজ্য কমিটি, জেলা কমিটির পদ নিয়ে যে ডামাডোল শুরু হয়েছিল তা দক্ষতার সঙ্গে মেটান। যদিও ভোট রাজনীতিতে বিজেপির ফল তেমন আশাব্যাঞ্জক হয়নি। তার নেতৃত্বে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাম্প্রতিক সময়ে নবান্ন অভিযানের মতো আন্দোলনগুলিতে কর্মী-সমর্থকদের ফের ভিড় বাড়তে থাকে।
বিজেপির বিধায়ক অম্বিকা রায় এ বিষয়ে বলেন, ‘এসব জল্পনা দলের অভ্যন্তরে বিবাদ তৈরি করতে তৃণমূল ছড়াচ্ছে। একাধিক দুর্নীতি নিয়ে জর্জরিত তৃণমূলের এছাড়া আর উপায় নেই। তাই তারা এসব বলছেন। তৃণমূলের নেতারা এখন জেলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাই বিজেপি কর্মী আর সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তারা অপ্রচার চালাচ্ছেন। আমাদের দলের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। সুকান্তদা দল চালান আর শুভেন্দুদা বিধানসভা আর মাঠে নেমে লড়াই করেন। বিজেপি একটা পরিবার। এখানে বিরোধের কোনও প্রশ্নই নেই।’