ইরানে পুলিশের হেফাজতে নিহত কুর্দি নারী মাহশা আমিনির কবরস্থানের কাছে বড় ধরনের বিক্ষোভ আয়োজন করা হয়েছে। তার মৃত্যুর ৪০তম দিনে এই বিক্ষোভ আয়োজন করা হয়। বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এখবর জানিয়েছে।
অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, সাকেজ শহরে কয়েক হাজার নারী ও পুরুষ নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি উপেক্ষা করে বিক্ষোভে জড়ো হয়েছেন। তারা স্লোগান দেন, ‘নারী, জীবন ও মুক্তি’ এবং ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’।
আমিনি নিহতের পর শুরু হওয়া বিক্ষোভে এই দুটি স্লোগান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সব বিক্ষোভে এই স্লোগান উচ্চারিত হচ্ছে।
রাজধানী তেহরানে উপযুক্তভাবে হিজাব না পরায় ১৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয়েছিল মাহশা আমিনিকে। পুলিশি হেফাজতে অসুস্থ হওয়ার পর ১৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
আমিনির মৃত্যুর পর এই সাকেজের প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। ওই সময় অনেক নারী বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজেদের হিজাব খুলে ফেলেন। দ্রুত বিক্ষোভটি পুরো ইরানে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর এই বিক্ষোভ দেশটির শাসকদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।
চলমান বিক্ষোভের অগ্রভাগে রয়েছেন নারীরা। তারা দৃঢ়তার সঙ্গে বাতাসে নিজেদের হিজাব উড়াচ্ছেন, কেউ কেউ আগুনে পোড়াচ্ছেন। অনেকে প্রকাশ্যে নিজেদের চুল কেটে প্রতিবাদ করছেন।
খেলার মাঠ ও রাজপথে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন স্কুলছাত্রীরা। যা দেশটিতে নজিরবিহীন বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন।
নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস-এর তথ্য অনুসারে, চলমান বিক্ষোভে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে ২৯ শিশুসহ অন্তত ২৩৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে।
বুধবার সাকেজে বিপুল সংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী বাসিজ রেসিস্ট্যান্স ফোর্স-এর সদস্য মোতায়েন করা হয়। আমিনির মৃত্যুর ৪০তম দিনে নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে এই এদের মোতায়েন করা হয়। ইরানে মৃত্যুর ৪০তম দিন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ভিডিওতে দেখা গেছে, আইচি কবরস্থানে পৌঁছাতে বিক্ষোভকারীরা রোড ব্লক এড়াতে মহাসড়ক ও পাশের ক্ষেত দিয়ে হেঁটে চরছেন।
এক বিক্ষোভকারী বলেন, নিরাপত্তাবাহিনী কবরস্থানে আমাদের প্রবেশ ঠেকাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি ঠিকই পৌঁছাতে পেরেছি।
বিক্ষোভে নিহত আমিনির পরিবারের কোনও সদস্য উপস্থিত ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অ্যাক্টিভিস্টরা জানিয়েছেন, নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষ থেকে আমিনির পরিবারকে শোক অনুষ্ঠানে যোগ না দিতে সতর্ক করেছে।