ইরানে নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় চলমান বিক্ষোভে আটক বিক্ষোভকারীদের বিচার শুরু করেছে দেশটির বিচার বিভাগ। ইসলামি শাসনের বিপক্ষে যায় এমন যেকোনো আন্দোলনের ক্ষেত্রে বরাবরই কঠোর অবস্থান নিয়ে আসছে দেশটির বিচার বিভাগ।
তেহরানের রৌয়েদাদ-২৪ সংবাদ ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ২৪ অক্টোবর থেকেই রুদ্ধদ্বার বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে ইরানের বিচার বিভাগ। প্রাথমিকভাবে আটক ২০১ জনকে অভিযুক্ত করে বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে তারা।
ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনিকে উদ্ধৃত করে ইরানের আলবোর্জ প্রদেশের বিচার প্রশাসনের প্রধান হোসেন ফাজেলি অভিযোগ করেছেন যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক কয়েকজন ইসলামি প্রজাতন্ত্রের শত্রুদের এজেন্ট এবং আটক অনেকেই শত্রুদের (পশ্চিমা, ইসরায়েল) প্রতি সহানুভূতিশীল। আবার অনেকে আবেগতাড়িত হয়ে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন।
ফাজেলি বলেন, বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী সরাসরি বিদেশি গোয়েন্দাদের কাছ থেকে নির্দেশ পেত এবং এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে আটক ব্যক্তিদের অনেকের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
ইরানে যেকোনো আন্দোলনের ক্ষেত্রে শাসকগোষ্ঠী বরাবরই বিদেশি শক্তিকে অভিযুক্ত করে আসছে। সামাজিক বিধিনিষেধ ও বিরাজমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য কখনোই দেশটির শাসকগোষ্ঠীকে দায় নিতে দেখা যায়নি। মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া আন্দোলনকে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পরিকল্পনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এদিকে কট্টরপন্থি ধর্মীয় স্কলার মাহমুদ নাবাভিয়ান কোনো প্রমাণ না দিয়েই বিবিসি ফার্সিকে বলেছেন, ইরানের একজন বিক্ষোভকারী আন্দোলনের সময় ১ হাজার কোটি ইরানি রিয়াল বহন করছিলেন এবং বিক্ষোভকারীদের নগদ অর্থ দিচ্ছিলেন, যাতে তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।
নাবাভিয়ান অভিযোগ করে বলেন, বিদেশিরা ইরানকে অনিরাপদ করার লক্ষ্যে দাঙ্গা উসকে দিয়েছিল।
তবে বিচার শুরু হওয়াকে তোয়াক্কা করছেন না বিক্ষুব্ধরা। ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবারও দেশব্যাপী বিক্ষোভ প্রদর্শনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের।
এর আগে কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।
পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।
মাহসার মৃত্যুর পর রাস্তায় বিক্ষোভের পাশাপাশি ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ। শুরুতে পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হলেও একসময় তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয়। অনেক বিক্ষুব্ধই সরাসরি তাদের দুরবস্থার জন্য ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে দায়ী করেন।
ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পরই নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। দেশটির ধর্মীয় শাসকদের কাছে নারীদের জন্য এটি ‘অতিক্রম-অযোগ্য সীমারেখা’। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।