মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য কাচিনে স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর আয়োজিত এক কনসার্টে দেশটির সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে দেশটির প্রখ্যাত শিল্পী ও গায়করাও রয়েছেন।
গত রোববার রাতে কাচিনের হপাকান্ত শহরে এই বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। বেশ কয়েকটি রিপোর্টের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জেনারেলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। একইসঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে অস্ত্র ও বিমানের জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
আলজাজিরা বলছে, কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের জন্য গত রোববার রাতে জড়ো হওয়া শত শত লোকের কনসার্টে বোমা হামলা চালায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এতে প্রাথমিকভাবে নিহতের সংখ্যা ৩০ জনের বেশি বলে জানানো হলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮০ জনে পৌঁছেছে।
কাচিন আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের একজন মুখপাত্র সোমবার ফোনে বার্তাসংস্থা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছেন, বিমান হামলায় ৮০ জনের মতো মানুষ নিহত হয়েছেন এবং আরও প্রায় ১০০ জন আহত হয়েছেন।
হামলায় হতাহতের প্রাথমিক তথ্যের হালনাগাদ প্রতিবেদনে ৬০ জন নিহত হওয়ার কথা বলা হলেও কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মির কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, এখন প্রায় ৮০ জন মারা গেছে বলে জানা গেছে।
ওই মুখপাত্র বলেছেন, সামরিক বিমান গত রোববার সন্ধ্যায় কনসার্টে চারটি বোমা নিক্ষেপ করে। এখানে সঙ্গীতশিল্পী এবং অন্যান্য অভিনয়শিল্পীসহ ৩০০ থেকে ৫০০ জনের মতো মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
নিহতদের মধ্যে কাচিন সামরিক কর্মকর্তা এবং সৈন্য, সঙ্গীতশিল্পী, জেড খনির ব্যবসার মালিক, অন্যান্য বেসামরিক ব্যক্তি এবং নেপথ্যে কাজ করা বাবুর্চিও রয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়া একজন কাচিন গায়ক এবং কীবোর্ড প্লেয়ারও হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।
আলজাজিরা বলছে, মিয়ানমারের সুদূর এই উত্তরাঞ্চলে বিমান হামলার বিশদ বিবরণ স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে কাচিনের প্রতি সহানুভূতিশীল মিডিয়া যেসব ভিডিও পোস্ট করেছে তাতে বিমান হামলার পরবর্তী বিধ্বংসী ছবি উঠে এসেছে।
এদিকে কাচিন নিউজ গ্রুপও জানিয়েছে, বিমান হামলায় আহতদের কাছাকাছি শহরের হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে বাধা দিয়েছে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী।
এই পরিস্থিতিতে ওই এলাকার পাশাপাশি বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী ও মানবিক সংস্থাগুলোকে প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। বন্দি করা হয় গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের কাচিন, শান-সহ বেশ কিছু প্রদেশ ফের অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের জাতিগত সংখ্যালঘু বিভিন্ন গোষ্ঠী মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের বিরোধিতা ও বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
এরপর থেকে মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মির (কেআইএ) ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। জাতিগত সশস্ত্র কাচিন বিদ্রোহী অধ্যুষিত এসব এলাকায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিও আগের তুলনায় বিভিন্ন সময়ই বাড়ানো হয়েছে।