‘কে মোহন?’
– ‘হ্যাঁ বাবা।’
-‘ কোতায় ছিলি রে?’
– ‘ঝন্টুদের বাড়ি একটু গিয়েছিলাম।’
– ‘সামনে তোর পরীক্ষা। পড়তে বসতে হবে তো। চিন্তা হয় রে।
কোতায় কি করবি বল তো। তোর মা বেঁচে থাকলে দেকে যেতুক।
কেউ কিচু কোরতে পারলুনি। বড় ছেলেটা যদি একটা কাজ জোটাতে পারতুক। আমার আত্মার শান্তি হতুক। তোর মা তো চাইতুক সবাই লেকাপড়া করুক। পারলুম নি, আরতির কতা রাকতে পারলুম নি।একন দেকচি তোর আশাও ছাড়তে হবে। আশা আমি ছাড়িনি। কতা শোন্ বাবা। মাস্টারদের কাচে একটু পড়তে যা।’
মোহন একটাও কথা বলেনি। চুপচাপ শুনে মাথা নিচু করে বাবার কথা শোনে। ঝন্টুদের বাড়ি গিয়ে সময়টা বেশ ভাল কাটলেও বাবার কথাগুলো তাকে দমিয়ে দেয়। সে বুঝতে পারে, সত্যিই তো পরীক্ষা চলে এসেছে। বাবা তো বলবেই। সে তো রোজ ভাবে, কাল থেকে সব ছেড়ে ছুড়ে বই নিয়ে থাকবে। কত কাল এইভাবে কেটে গেছে, পূজার পরেই তো টেস্ট পরীক্ষা। তারপর ফাইনাল পরীক্ষা। পরীক্ষার কথা মাথায় এলে মাধবের বুক ধড়ফড় করে। তাকে তো পারতেই হবে। বাংলার মাস্টারমশাই মণি বাবু বলেছেন, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার চান্স হয়ে গেলে পিছন ফিরে তাকাতে হবে না। বিদেশ যেতে পারবে। তাজপুরের পাইকপল্লীতে নতুন সূর্যোদয় হবে। সবাই ধন্য ধন্য করবে।
মোহনের নীরবতা ভাঙেনি, সনাতন বলল, ‘যা কষ্ট করে আর কটা বচরের বেপার, মানুষ হয়ে নে বাবা। তোর মা শান্তি পাবে।
তোর ছোটবোন বিনা চিক্কিসায় মরে গেল। আরতি কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়ে গেল। তাকে আর ফেরাতে পারলুম নি। তোরা মাতৃহারা হোলি। ‘
মোহন বলল, চিন্তা করো না ,বাবা। চেষ্টা তো করছি। তুমি আমার দেবতা,বাবা। তোমার আশায় জল ঢালব না।
প্রায় অন্ধকারে বসে আছে, সনাতন। ঘরের দাওয়ায় আলো নেই। ঘরের ভেতরের আলকাটে তার ধরে বাল্ব ঝুলে আছে,আলো জ্বলছে। দাওয়ায় খানিক স্পষ্ট,খানিক অস্পষ্ট হয়ে ছড়িয়ে আছে। ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলে দাওয়া অন্ধকার। পাওয়ার থাকলেও আলো একবারে টুমটুম করে জ্বলে, লো ভোল্টেজ। যখন তখন চলেও যায়। হ্যারিকেনে তেল থাকে না।চিমনির কাঁচ নেই। লম্প নিয়ে মোহনকে পড়তে হয়। লম্প-র কালি ঘরের ওপরের দিকে জমে জমে কালো হয়ে ঝুল পড়ে আছে। রান্নাবান্না হলে লম্পটা উনুনের কাছে থাকে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত এলে এই পাড়ার মেয়ে-বউরা রাত আটটা নটার মধ্যেই শুয়ে পড়ে। ভোর থাকতে উঠতে হয়, সারাদিন খাটাখাটনি।নেতিয়ে পড়ে। ঘুমে বিভোর হয়ে যায়। তবুও জেগে থাকে,পাইকপল্লী। তাজপুরের নিরন্ন নেশাতুর জনপদ। মাতালদের আনাগোনা গভীর রাত অবধি , রাত্রির হাওয়ার মতো চলতে থাকে। এই পাড়ায় মাতামাতি করার কিছু না থাকলেও এই নেশা নিয়ে তাদের বিস্তর মাতামাতি।
মোহন রাত জেগে বই পড়ে। সারা গ্রাম ঘুমিয়ে থাকে। পাইকপল্লী নিস্তরঙ্গ হয়ে একটা নতুন দিনের অপেক্ষা করে। মাঝরাতে পথের কুকুরগুলোর গোঙানি কানে এলে অভাবী মানুষের কান্নার মতো মোহনের বুকে এসে বিঁধে যায়। মাতালদের টুকিটাকি অস্পষ্ট আস্ফালন ভেসে এলে বইয়ের পাতা থেকে তার মনোযোগ সরে যায়। আবার, সে বইয়ের পাতায় মন দেয়। লিখে লিখে পড়ে। গলা শুকিয়ে এলে তক্তোপোষ থেকে নেমে কলসি থেকে জল গড়িয়ে খায়। রাতের পর রাত চলে যায়। সে পড়ে যায়। বড় বউদি যত অসুবিধা হোক, তাকে একটু করে দু-বেলা ঝোল ভাত করে দেয়। পরীক্ষার আগে শরীর খারাপ হলে পরীক্ষার বারোটা বাজবে, তার দিকে অনবরত খেয়াল রাখে।
আর সে প্রতীক্ষা করতে থাকে।পরীক্ষা শেষ হলে লেখালেখি, পাখির মতো ঘুরে বেড়ানোর জন্যে। গভীর রাতে কোনও পাখি ডেকে উঠলে অনেক দূরের প্রতিধ্বনি তার বুকে বেজে ওঠে। বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে থাকার পরাধীনতা তাকে অস্থির করে তোলে। পাখির কিচিমিচির মতো সে মুক্ত হতে চায়। পাখির ঝরা পালকের মতো সে বন্ধন ছিঁড়ে জীবনের পাতাগুলো নিজে হাতে সাজাতে চায়, তবু সে বইয়ের পাতায় নিজেকে আটকে রাখে,সে শেষপর্যন্ত বুঝতে পারে,মুক্তির আলো ও আনন্দ বইয়ের ভেতর থেকেই সে খুঁজে পাবে। এই বই তাকে জগত পারাবারের তীরে হাত ধরে নিয়ে যাবে।
মোহন পাঁচশ টাকা মাইনে পেয়েছে, একেবারে পূজার দোরগোড়ায়। চালাঘরে দু-বেলা সময় ধরে সে অনেকদিন পড়াচ্ছে। প্রণবানন্দ সেবা প্রতিষ্ঠান ওর গড়ে তোলা স্কুলকে নতুন ভাবে জীবন দিয়েছে।ওদের পাড়ার চালাঘর একল বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। পঞ্চাশ- ষাটজন ছেলেপুলে এখানে পড়াশুনা করে,মোহনের তত্ত্বাবধানে। প্রণবানন্দের আদর্শ, অনুশাসনে মোহন বেশকিছু দিন আগে প্রশিক্ষিত হয়েছে। স্কুলে পড়তে পড়তেই সে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের এই উইংয়ে যোগ দিয়েছিল। এই বিদ্যিলয় চালানোর সাম্মানিক ওই পাঁচশ টাকা। পঁচাত্তর টাকা দিয়ে বড় বউদির জন্যে ছাপা শাড়ি,বাবার জন্যে ষাট টাকার পাঞ্জাবি, বড়দার জন্যে একটা ছাব্বিশ টাকার হাওয়াই চপ্পল আর নিজের জন্যে পঁচাশি টাকার স্যান্ডেল কেনার পর সে দেখল, এখনও তাঁর কাছে দুশো চুয়ান্ন টাকা আছে। এই আনন্দে তার মাথায় ছোটদের কবিতার একটা ফোল্ডার বের করার পরিকল্পনা ঘুরপাক খেতে লাগল। অল্প অল্প কম্পিউটার তো সে জানে। স্কুল থেকেই শিখেছে। একটা ফোল্ডারে অনেকজনের কবিতা ছাপা যায়। ফলতা জুড়ে সাহিত্য পত্রিকার রমরমা। সে নিয়মিত পত্রিকা দেখে। লেখা প্রকাশ পায়, বিভিন্ন কাগজে। এবারে সে সম্পাদক হবে। দিঘিরপাড় বাজার, ফলতা, ফতেপুর,ডায়মন্ড হারবার ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে লেখা চলে এলো। কলকাতা থেকে নামিদামি লেখকদের লেখাও চলে এলো। মহালয়ার দিন উদ্বোধন হল, ছোটদের হাসিখুশি। তাজপুর পাইকপল্লীতে গড়ে উঠল,অঙ্গীকার সাহিত্য গোষ্ঠী। পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানে চা-বিস্কুটের ব্যবস্থা, পাড়ার গাছগাছালির পাতা আর বুনোফুল দিয়ে পুষ্প স্তবক, চন্দনের ফোঁটা, আরও অনেককিছু। সমস্ত ব্যবস্থা করেছে, পারমিতা। হাসিখুশি প্রথম সংখ্যা ঘিরে বক্তৃতা ও কবিসম্মেলন। তাজপুর আগে দেখেনি। বাংলার কত গ্রাম দেখেনি,মোহনের হাত ধরে পাইকপল্লী সাহিত্য সম্মেলন দেখল। কত কবির সমাগম হল। চোখের কাজলের মতো দিনটা তাদের চোখে আটকে গেল, হালখাতার ক্যালেন্ডারের মতো বহুদিন তাদের মনের দেওয়ালে আটকে থাকলে। অমন একটা দিনের জন্যে মোহনের মুখের দিকে তাকিয়ে গোটা গ্রাম অপেক্ষা করে থাকল। মোহনের প্রশংসায় গ্রামের লোক তো পঞ্চমুখ। ছেলের গৌরবে সনাতন খুব সুখ অনুভব করে। শেষ বয়সে কতকিছু খাওয়ার ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে মতো খেতে পেলে অত্যধিক আনন্দ বুকে এসে খেলা করে। কিন্তু তারচেয়েও বেশি আনন্দ সে পায়। আরতির কথা মনে পড়ে। সংসারে সে তো অনেক কিছুই দেখেছে। অভাব,অনাহার, মারামারি,অসুখ, মৃত্যু কোনকিছুই তো বাদ যায়নি। কিন্তু সম্মান,মান-মর্যাদা কি জিনিস সে বেঁচে থাকলে বুঝতে পারত। তাদের ছেলে মোহন স্কুল চালায়, মাস্টার হয়েছে। কবি হয়েছে। কবিতার কাগজ করেছে। যাদের ঘরে ভাত নেই, তাদের ঘরে কবিতার কাগজ, কবিতা চর্চা তার ছেলে মোহনকে ঘিরে। ভাবতে ভাবতে সনাতন বিমুগ্ধ হয়ে যায়। আফশোস একটাই আরতি দেখে গেল না,তার ছেলে মোহন আজ কোথা থেকে কোথায় এগিয়ে চলেছে।
মাধব দা,নবীন দা, গৌতম ,বরুণ সবাই মিলে নিয়মিত কবিতা ও ছড়া চর্চা শুরু করে। ঝন্টুর বউ পারমিতা প্রথম থেকেই এদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। শারদীয়া হাশিখুশি (২০০০ সাল)-র আত্মপ্রকাশ সংখ্যাতে পারমিতার একটা দারুন ছড়া ছাপা হয়েছে। ছন্দ নির্ভুল। সবাই প্রশংসা করছে। গৌতম ভাল লিখেছে। হাসিখুশি পত্রিকা ফলতা, বারুইপুর,ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ,পাথরপ্রতিমা হয়ে বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে গেছে,সম্পাদকদের দরজায়। পত্র-পত্রিকার ডাইরেক্টরিতে হাসিখুশি-র নাম উঠে গেছে। তাজপুর,পাইকপল্লী, অঙ্গীকার সাহিত্য গোষ্ঠীর নাম উঠেছে। তাজপুর পাইকপল্লী এখন সারা বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতে , অক্ষরে লেখা নাম হয়ে উঠছে,এটা ভেবে মোহনের কেমন গর্ব হয়। শূন্য দশকের শারদীয়া দুর্গোৎসব তাজপুরের পাইকপল্লীতে একটা মায়া কাজল এঁকে দিয়ে যায়। কাশের বনে ভরে ওঠে , তাজপুরের মাঠঘাট। মাঠঘাট জলে ভরে আছে, পরিপূর্ণতার আনন্দ সব জায়গায় আসন পেতে বসে আছে। কাঠঠোকরার ঠকঠক শব্দের মধ্যেও পূজার রেওয়াজ পাওয়া যায়। ক’দিন আগে থেকেই মাইকে বেজে ওঠে, স্বর্ণযুগের গান। তিরতির করে কেঁপে ওঠে, নস্টালজিক দিনগুলো। ধানক্ষেতে শালিকের আনাগোনা। ধানক্ষেতের আলো-বাতাস যেন প্রতিশ্রুতি বয়ে আনে। হাওয়ায় হাওয়ায় নদী হয়ে যায়, সবুজ ধানক্ষেত। মোহনের এবারের পূজা একদম অন্যরকম। সবাইকে না দিতে পারলেও এই ছোট বয়সে স্কুলে পড়তে পড়তে সে যে বাড়ির বড়দের জন্যে কিছু দিতে পেরেছে,এটা তার বেশ ভাল লেগেছে। ছোটদের জন্যেও কিছু দেওয়ার ইচ্ছে তার আছে,একবার নয়,বারবার। সে শুধু সময়ের অপেক্ষা। পাইকপল্লীর ভেতর থেকে ঢাকের আওয়াজ বাজতে বাজতে পূজামণ্ডপে গিয়ে বাজছে। পূজার একটা একটা দিন দিব্যি কেটে যায়। ঝলমল করে কেটে যায়। উজাড় হয়ে ওঠা প্রকৃতির আঁচলে কত কি যেন লেখা আছে। মোহন পড়তে চেষ্টা করে। বিজয়া দশমীর দিনে বাড়ির দরজায় পারমিতা এসেছে। সনাতনের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম। সনাতন মুগ্ধ তার ব্যবহারে।
– ‘ঝন্টু আসেনি?’
-‘ সে একটা কাজ নিয়ে আমতলা গেছে। তাই একা এলাম।’
– ‘আমাদের সমাজে এসব তেমন নেই। নেশা করলেই সব হয়ে যায়। ‘
তোমার মতো আরও বউ এই পাড়াতে দরকার। মোহনের জন্যে তোমার মতো একটা মেয়ে চাই। ও আগে গুছিয়ে নিক,তারপর ভাবা যাবে। পারমিতা লজ্জা পায়। মোহন বাইরে বেরিয়ে আসে। পারমিতাকে কোথায় বসতে দেবে, ঠিক করতে পারে না। পারমিতা দাওয়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা ঝ্যাঁতলা পেতে নিজেই বসে পড়ে। মোহন কিছু বলে না।
ঝ্যাঁতলার একধারে মুখোমুখি হয়ে বসে। বড় বউ লক্ষ্মী হাসি মুখে উঠোন থেকে দাওয়ায় ওঠে। পারমিতা লক্ষ্মীকেও পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। অমনি সাথে সাথে মোহনের পায়ে হাত দিয়ে সে প্রণাম করে।
মোহন খুব লজ্জা পায়। তার বাবার সামনে এইভাবে তাকে কেউ প্রণাম করছে, এটা তাকে খুব অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। বুঝে উঠবার আগেই তার পায়ে পারমিতা হাত দিয়েছে। একটা ভাল লাগাও কাজ করেছে, তারমধ্যে। তার মনে প্রশ্ন জেগেছে,সে কি সত্যিই প্রণামের যোগ্য। উত্তর সে ভেতরে ভেতরে নিজেই তৈরি করেছে, একদম না। প্রণাম পাওয়ার যোগ্য সে নয়। মিষ্টির একটা প্যাকেট নিয়ে বড় বউদির হাতে ধরিয়ে দেয়। বড় বউদি কেমন লজ্জাবোধ করে। এই বাড়িতে এতবছরে এই প্রথম তাকে কেউ বিজয়া দশমী জানাল। এসব তো তাদের ঘরে নেই।
একটু লুচিটুচি খাওয়া হলেই বিজয়া দশমী হয়ে যায়। একটু সুজি হলে তো বিরাট ব্যাপার।
লক্ষ্মী বলে,’ এসবের কী দোরকার ছিল,বোন। দেকা কোরতে অ্যাইচো,এটাই অনেক। মাজে মাজে আসবে। কোতা বলে যাবে।যা হয়,খে যাবে।না হয় না খে যাবে। কিন্তু আসবে।’
– ‘ঠিক আছে,দিদি। আসব। আজ যাই। ‘বলতে বলতে দাওয়া থেকে সে নেমে যায়।’
ঘরে বিশেষ কিছু আনা নেই। দেবার মতো কিছু নেই। ওইভাবে পারমিতা যে আসবে, তাকে প্রণাম করে যাবে,সে ভাবেনি। গৌতমের কাছ থেকে সাইকেলটা চেয়ে নিয়ে সে হাটে চলে যায়, এক বাক্স মিষ্টি নিয়ে বড় বউদিকে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। কি সুন্দর একটা জলছবি ভেসে ওঠে,পাইকপল্লীতে। বিজয়ার রাতে এপাড়ার মেয়েরা সিঁদুর খেলে না। সিঁদুর খেলা দেখতে ফতেপুরে যায়। মাঝরাত অবধি অনেকেই বিসর্জন দেখে,বাড়ি ফেরে। মোহনকে দিঘিরপাড় বাজারে যেতেই হবে, ওখানে কবি সুমিত মোদকের বাড়ি। লেখালেখির শুরু থেকে দিঘিরপাড় বাজারে জড়িয়ে থাকা। সাহিত্য আড্ডায় অংশ নেওয়া। মোহনের বিজয়া দশমী লেখার জগতে কেটে যায়। পত্র-পত্রিকা ঘেঁটে, আলোচনা করে কেটে যায়। সে নতুন লিখছে, কাগজপত্রে। তাহলেও অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। দুর্গাপূজা ঘিরে সবার সঙ্গে দেখা হয়, লেখালেখির ভাল লাগা অন্য মাত্রা পায়। তাই লেখালেখি ঘিরে মোহনের পাড়ার চেয়ে বাইরের বন্ধুবান্ধব এখন অনেক। তাদের বয়সের মানামানি নেই। লেখালেখির বন্ধু। কে অবসর নিয়েছেন,কে ব্ল্যাঙ্ককর্মী, কে আবার স্কুল মাস্টার। সবাই তাকে পড়াশুনা করার কথা বলে। পরীক্ষার আগে সময় নষ্ট করতে নিষেধ করে। ভালোই সব চলছিল, রাত জেগে পড়াশুনা করে সিলেবাসের চাপ অনেকটা সে নামিয়ে ফেলেছিল। পত্রিকা প্রকাশ করার পর সব আবার কেমন ঘেঁটে গেল। ডাকঘর থেকে প্রচুর চিঠিপত্র আসছে। আগামী সংখ্যার লেখা আসছে। মোহনের বাড়িতে চিঠিপত্র আসার বহর দেখে পিওনের তো চক্ষু চড়কগাছ। সে বলছে,ভদ্রপাড়ায় কেউ এত চিঠি পায় না। তার কুড়ি বছরের চাকরি জীবনে কাওরা পাড়ায় কোর্টের চিঠি পর্দায় আসে। কিন্তু ইলেত-বিলেতের চিঠি একমাত্র মোহনের কাছে আসে। স্বীকার করতে তার দ্বিধা নেই। সংকোচ নেই। মোহন ছেলের মতো ছেলে। লোক চিঠি লিখছে,চিঠির পর চিঠি। চাট্টিখানি কথা।
একল বিদ্যালয়ও নিয়ম মেনে প্রতিদিন বসছে। সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে মাঝে মাঝে খাবারও আসছে,সেসব নিয়ে ছোটদের সঙ্গে বড়দেরও উৎসাহের শেষ নেই। একঘেয়ে তাজপুর পাইকপল্লীতে সত্যিই নতুন কিছু হচ্ছে বলে অনেকের মনে হয়।
চলবে…