একদিকে বিদ্বেষ, অন্যদিকে সম্প্রীতি৷ তারই নাম বাংলা৷ এখানে নবী মুহাম্মদ সা.-এর উপর মানুষের ভালবাসা ও তাঁকে জানার আগ্রহ রয়েছে বহু মানুষের৷ তারই নজির দেখা গেল রবিবারের উর্দু অ্যাকাডেমিতে৷ উপচে পড়া ভিড়ে উদযাপিত হল পুবের কলম ও বুদ্ধিজীবী মঞ্চের নবী দিবস৷ উঠে এল বিশ্বনবীর মানবতা ও শান্তির শিক্ষার কথা৷ এদিনের অনুষ্ঠানে অমুসলিম রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো৷ সারা বিশ্বে যখন প্রফেট-বিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কিছু গ্রুপ, তখন পুবের কলম-এর এই উদ্যোগে অমুসলিমদের অংশগ্রহণ এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা৷ অনুষ্ঠানের শুরুতেই পত্রিকার সম্পাদক ও প্রাক্তন সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান এই বিষয়ে জানান, এই সময় বড় অশান্ত৷ মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, যুদ্ধ চলছে৷ এই প্রেক্ষিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে, আলোকিত করতে চাই মুহাম্মাদ সা.-এর শিক্ষা৷ আমরা চাইলে বিখ্যাত আলিম ও ইসলামের বিশেষজ্ঞদের এই অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতে পারতাম৷ কিন্তু বর্তমানে অমুসলিম রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীরা নবীকে নিয়ে কী ভাবছেন, তা জানার জন্যই আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি৷ বিদ্বেষের বাতাবরণ সরিয়ে এক আলোকিত সমাজ গড়ার জন্য এটা প্রয়োজন৷ তিনি আরও বলেন, আল্লাহ শেষ বিচারের দিন তার বান্দাহকে বলবেন, আমি অসুস্থ ছিলাম তুমি আমাকে দেখতে যাওনি৷ আমার অমুক বান্দাহ ক্ষুধার্ত ছিল, বস্ত্রহীন ছিল৷ তোমরা তাদের ক্ষুধা দূর করনি৷ বস্ত্র দাওনি৷ আল্লাহ আসলে সমস্ত সৃষ্টির সেবা করতে বলছেন৷ খিদমতে খালকের সেবা৷ মানুষ, পরিবেশ গাছপালা, পাখির সেবা করতে উদবুদ্ধ করেছে ইসলাম৷ সেই শিক্ষাই সারাজীবন ধরে শিখিয়েছেন৷ এদিন ইমরানের বক্তৃতার প্রসঙ্গ টেনেই ভাষণ দেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য৷ তিনিও নবীর শিক্ষার বিশ্বজনীনতার দিকটি তুলে ধরেন৷ চন্দ্রিমা বলেন, আমরা যদি মানুষকে না দেখি তবে ঈশ্বর বা আল্লাহ ভালোবাসবেন না৷ নিজ ধর্মের আচরণ পালন করেই মানবিকতার পথ ধরে হাঁটতে হবে আমাদের৷ এই অঙ্গীকার করতে হবে সবাইকে৷ এদিন তাঁকে পুবের কলম-এর তরফ থেকে পবিত্র কুরআনের ইংরেজি তরজমা উপহার দেওয়া হয়, যা পেয়ে তিনি আপ্লুত হয়ে বলেন, এর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ৷ আমার সুযোগ হয়নি কুরআন পড়ার৷ এবার পড়তে পারব৷
মন্ত্রী চন্দ্রিমা বাংলায় হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির বিষয়টিও চমৎকারভাবে তুলে ধরেন৷ ভাষণমঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, এই মঞ্চে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম পাল, কুমারেশ চক্রবর্তী, দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, আমি চন্দ্রিমা যেমন রয়েছি, তেমনই রয়েছেন ইমরান, মইনুল, ফারুক সাহেব, ওয়ায়েজুলরা৷ আমাদেরকে ভাগ করা সম্ভব নয়৷ স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় মুসলিম বা হিন্দু কেউই মেপে রক্ত দেয়নি৷ রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বাংলা ভাগ করতে পারবে না কেউ৷ আজ সোমঋতার কণ্ঠে নাতে রসূল শুনলাম৷ এই হচ্ছে আমাদের বাংলা৷ সম্প্রীতির বাংলা৷ আমরা এমন এক সমাজ গড়ব যেখানে সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করা হবে৷ ধর্মের নামে দেশ ভাগ করতে চাইলে কেউ মেনে নেবে না৷ মত যত থাকবে পথ তত বেশি হবে৷ মতের জন্য বিভাজন হয় না৷ আমাদের নারীদের প্রসবের যন্ত্রণার কি বিভাজন করা যায়? রক্তের কি বিভাজন করা যায়? সবার ব্যথা অনুভব করতে হবে৷ প্রফেট দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন মানুষকে ভালোবাসো৷ তার পাশে থাকো৷ এই মানব ধর্মের কথাই তিনি বলে গিয়েছেন৷ হযরত মুহাম্মদ সা. যে পথ তিনি দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন সেটা অনুধাবন করতে হবে৷ সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী গোলাম রব্বানীও সম্প্রীতির বাংলার ছবি তুলে ধরেন তাঁর বক্তব্যে৷ মুসলমান উন্নতির জন্য শিক্ষার গুরুত্বটি উঠে আসে তাঁর ভাষণে৷
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. গৌতম পাল মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে একতা তৈরি করতে পারে ধর্মই৷ অসহিষ্ণু উপায়ে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করার চেষ্টা হচ্ছে, সেটা ৫ হাজার বছরেও সম্ভব হবে না৷ হিন্দু-মুসলিম সবচেয়ে সুখে বাস করেন বাংলায়৷ মুসলমানরা গণতন্ত্রের অন্যতম শক্তি৷ তাদের বাদ দিয়ে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না৷ নেতাজি, গান্ধিজি বিভেদ করেননি৷ তবে তিনি অভিযোগ তোলেন, সংখ্যাগুরুরা ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে৷ পাশাপাশি সংখ্যালঘুরা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশের অন্যতম রক্ষক হয়ে উঠবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি৷
নবী মুহাম্মদ সা.-এর শিক্ষা ও জীবনের কথা উঠে আসে অধ্যাপক কুমারেশ চক্রবর্তীর ভাষণেও৷ তিনি বলেন, মার্কিন সংবিধানের অনেক আগে মদিনা সনদ তৈরি হিয়েছে৷ আমরা এটাকে উপেক্ষা করি৷ মুহাম্মদ সা. প্রথম সংবিধান তৈরি করেছেন৷ তিনিই প্রথম নারী মুক্তির দিশারি৷ তার আগে সমাজে মেয়েদের কোনও সম্মান বা মর্যাদা ছিল না৷ নবী সা. বলেছিলেন, যদি মুসলিম-অমুসলিম কাউকে হত্যা করতে যায় তবে আমি বাধা দেব৷ তাঁর কথাগুলো সমাজে প্রয়োগ করলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে মতপ্রকাশ করেন তিনি৷
দৈনিক পুবের কলম, বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চ ও সাংস্কৃতিক সংস্থা একটি কুসুম-এর আয়োজনে মুহাম্মদ সা.-এর জন্মমাস রবিউল আউয়ালে উর্দু অ্যাকাডেমিতে এদিনের মহত্ত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে নবীর শিক্ষা ও জীবনের নানা দিক উঠে আসে৷ বিশেষ করে প্রতিবেশী সমাজে মুহাম্মদ সা.-কে নিয়ে তাদের ভাবনা ফুটে ওঠে এদিন৷ চন্দ্রিমা, কুমারেশ চক্রবর্তীর পাশাপাশি শিক্ষাবিদ দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম পাল প্রফেটের বিশ্বজনীন শিক্ষা ও ন্যায়বিচারের কথা তুলে ধরেন৷ দীপঙ্কর ভট্টাচার্য মহাত্মা গান্ধির কথা উদ্ধৃত করে বলেন, গান্ধিজি বলেছিলেন, মুহাম্মদ সা. সত্যান্বেষী৷ যত বাধাবিপত্তি আসুক না কেন সত্যকে তিনি আঁকড়ে ধরেছেন৷
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেহেদি হাসান বলেন, মাইকেল এইচ হার্টের ‘দ্য হান্ড্রেড’ বইতে বিশ্বের সেরা ১০০ মনীষীর মধ্যে প্রথম স্থান পেয়েছে প্রিয়নবী সা.৷ তিনি ছিলেন সকলের জন্য করুণাস্বরূপ৷ পরিপূর্ণ মানুষ৷ তাঁর শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে আমাদের৷ বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের সভাপতি ওয়ায়েজুল হক এদিনের অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন৷ রাসুলের শিক্ষার অনুসারী হয়ে চললেই যে আমাদের সমাজের সার্বিক উন্নতি ঘটবে, সেকথা তুলে ধরেন তিনি৷
নবীদিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানটি শুধু ভাষণে ঠাসা ছিল না৷ উর্দু অ্যাকাডেমির হলভর্তি মানুষজনকে স্বস্তি দিয়েছে পলাশ চৌধুরীর সংগীত ‘মুহাম্মদের নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে’ ও ‘দে দে পাল তুলে দে মাঝি হেলা করিস না’৷ কলকাতার ছায়ানটের প্রধান সোমঋতা মল্লিক ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ’, ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’ নাত পরিবেশনের মাধ্যমে সম্প্রীতির বাংলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন৷ কবিতা পাঠ করেন পুবের কলম-এর সাহিত্য সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। বিশ্বনবীকে নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি ও উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ৷ এদিন সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানীর হাতে উদার আকাশ পত্রিকার ঈদ শারদ উৎসব সংখ্যা ১৪২৯ তুলে দেন সম্পাদক ফারুক আহমেদ। বহু বিশিষ্ট মানুষ নবীকে নিয়ে আলোচনা শুনতে এদিন হাজির হয়েছিলেন৷ তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়তি প্রেরণা জুগিয়েছে আয়োজকদের৷ লেখক ও প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসান, শিক্ষাবিদ সেলিম শাহী, সমাজসেবী কুতুবউদ্দিন তরফদার, হারুন রসিদ, ডাক্তার প্রকাশ মল্লিক, তৃণমূল নেতা একে এম ফারহাদ, সফিকুল ইসলাম দুলাল, প্রাবন্ধিক একরামুল হক শেখ, আবু সালেহ মুহাম্মদ রেজওয়ানুল করিম, হাজি কুতুবউদ্দিন প্রমুখ৷ পুবের কলম-এর ডিরেক্টর নুসরত হাসানও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷ মাওলানা আবদুর রহমানের কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়৷ শেষ হয় হাজি কুতুবউদ্দিনের দোয়ার মাধ্যমে৷
প্রতিটি উৎসব হয়ে উঠুক সর্বজনীন
উৎসব মুখর বাঙালি জাতির কাছে আজ পুজো যেন এক চিরায়ত আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। সারাবছরের দুঃখ জ্বালা বেদনা অনুতাপ বিরহ ব্যথা জীর্ণতা মলিনতা সব যেন পুজোর আগমনে এক নিমেষে বিলীন হয়ে যায়। দুর্গাপূজোর পরে আবারো হাজির কালীপুজো ও আলোর উৎসব দীপাবলি।বাঙালির শারদ উৎসব দূর্গা ও লক্ষ্মী পূজা শেষে সনাতন হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসী সকলের দুয়ারে আজ হাজির শ্যামা পূজা বা কালী পূজা। আজ উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে শ্যামা পূজা পালণ করবেন সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীরা। দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসবটি তাদের কাছে কালী পূজা নামেও পরিচিত। একইসঙ্গে আজ ঘরে ঘরে উদযাপিত হবে দীপাবলী উৎসব।কার্তিক মাসের অমাবশ্যা তিথিতে সাধারণত শ্যামা পূজা বা কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূরাণ মতে, কালী দেবী দুর্গারই আরেকটি শক্তি। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালীপূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। বাংলায় মা কালীর পূজার ধারণাটি সুপ্রাচীন। মা কালীর এই পূজার পেছনে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনীও।কালী- শব্দটি হল ‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ। যার অর্থ কৃষ্ণ বা গৌড় বর্ণ। প্রাচীন শাস্ত্রমতে মা কালীর ইতিহাস খনন করলে দেখা যায়- মা কালী হলো দেবী দুর্গার আরেকটি রূপ। আবার হরিবংশম গ্রন্থ অনুযায়ী মা কালী হলেন ‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ। সেই কারণে মা কালীর আরেকটি রূপের বর্ণনা এখানে পাওয়া যায়- ‘কাল’ অর্থাৎ ‘নির্ধারিত সময়’। তা প্রসঙ্গক্রমে মৃত্যু অর্থেও ব্যবহৃত হয়।মহাভারতে এমন এক দেবীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে যিনি হলেন দেবী কালরাত্রি বা কালী।কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে ‘দীপান্বিতা’ কালীপূজা বিশেষ জাঁকজমকপূর্ণ। এছাড়াও মাঘ মাসের চতুর্দশী তিথিতে ‘রটন্তী কালীপূজা’ ও জৈষ্ঠ মাসের চতুর্দশী তে ‘ফলহারিনী কালী’ পূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এছাড়াও ভাদ্র পৌষ মাসের অমাবস্যা তিথিতে কালীপূজা বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
জগতের সকল অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়। কালী দেবী তার ভক্তদের কাছে ‘শ্যামা’, ‘আদ্য মা’, ‘তারা মা’, চামুন্ডি’, ‘ভদ্রকালী’, ‘দেবী মহামায়া’সহ বিভিন্ন নামে পরিচিত।কালীপূজার দিন সনাতন ধর্মের অনুসারীরা সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে ও শ্মশানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে স্বর্গীয় পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের স্মরণ করেন। একে বলা হয় দীপাবলী।দুর্গাপূজার মতো কালীপূজাতেও গৃহে বা মণ্ডপে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়। মধ্যরাত্রে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে গৃহস্থ বাড়িতে সাধারণত অতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যমতে আদ্যাশক্তি কালীর রূপে কালীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়।কালীর আরেক নাম শ্যামা। শ্যামা বা কালীপূজার সঙ্গে দীপাবলির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কালীপূজার দিনই দীপাবলি উৎসব পালন করা হয়। দীপাবলি বা দেওয়ালি সনাতনধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় মহোৎসব। এটি দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা এবং যক্ষরাত্রি নামেও অভিহিত হয়। এই দিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয়। কেউ কেউ রাত্রিতে নিজগৃহে দরজা-জানালায় মোমবাতি জ্বালায়।দীপাবলি মানে আলোর উৎসব। আনন্দের উৎসব মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর জয়কে উদযাপন করা। আলোকসজ্জার এই দিবস অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো জ্বালার দিন। নিজের ভেতরের বাহিরের সকল অজ্ঞতা ও তমকে দীপশিখায় বিদূরিত করার দিন। প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার চিরন্তন শিখা প্রজ্বলিত করার দিন। দেশ থেকে দেশে, অঞ্চল থেকে অঞ্চলে- এই দিনের মাহাত্ম্য ভিন্ন ভিন্ন; তবু মূল কথা এক। আর আধ্যাত্মিকতার গভীর দর্শনে এই দিন- আত্মাকে প্রজ্বলিত করে পরিশুদ্ধ করে সেই পরমব্রহ্মে লীন হওয়ার দিন।কালীপূজাই বলি, দ্বীপাবলিই বলি কিংবা অন্য যে পূজাই বলি না কেন, এসব পূজা ও দেবদেবীর আখ্যানের মূলে রয়েছে, অশুভের বিরুদ্ধে শুভশক্তির লড়াই বা বিকাশ। সেই দিক থেকে ধর্ম পালন বা সবাইকে নিয়ে অশুভের বিরুদ্ধে লড়াই- তা কিন্তু নিরন্তর চলছেই। এই লড়াই যেন শেষ হবার নয়। প্রতিটা পুজোয় আমাদের মনুষ্যত্ব বিবেক কে জাগ্রত করে। সেখানে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দুর্বার সংগ্রামের কাহিনী। আমরা পূজার্চনা টাকে শুধুমাত্র বাহ্যিক ভাবে না দেখে তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য গুরুত্ব তাকে উপলব্ধি করি। সমস্ত ধর্মের মূল কথাই মানুষকে ভালোবাসা। কোন ধর্মই অন্য ধর্মকে ঘৃণা, বিদ্বেষ করতে শেখায় না। সব ধর্মের মূল কথাই মানবতা। আজকে যখন চারিদিকে ধর্মীয় উন্মাদনা, অস্থিরতা, হিংসা, হানাহানি তখন আমরা ভেবে অবাক হই আমরা কি প্রকৃত ধর্মের অন্তর্নিহিত অর্থ তাকে মনে লালন করতে পেরেছি আমরা শুধুমাত্র ধর্মটাকে বাহ্যিকভাবে পালন করে এসেছি। আমরা যেদিন ধর্মকে মনেপ্রাণে আঁকড়ে ধরে মানুষকে ভালবাসতে শিখবো, অপর ধর্মকে শ্রদ্ধা ভক্তি করব,সর্বোপরি মানবসেবাই নিজেদের নিয়ে যেতে করবো সেদিনই আমাদের পূজার্চনা ধর্মীয় বিশ্বাস সার্থক হয়ে উঠবে। আমরা আসন্ন কালীপূজা দীপাবলি ভাইফোঁটা ও ছট পুজোতে নিজেদের সংযত, সতর্ক, সাবধানী ও সচেতন করে তুলি। পরিশেষে প্রশাসনকে আবারো তার দায়িত্ব পালন করতে হবে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা বিধি প্রতিপদে মানার জন্য। পরিশেষে ধর্ম যে যার উৎসব সবার। আমরা জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত সংকীর্ণতা ভেদাভেদ বিদ্বেষ সাম্প্রদায়িকতাকে দূর করে উৎসবের আবহে নিজেদের সম্পৃক্ত করি। আমরা যত বেশি একে অপরের সাথে মিলিত হব উৎসব অনুষ্ঠান পূজো পার্বণে ঈদে সবাই মিলেমিশে আনন্দ উপভোগ করব তবেই কেটে যাবে আমাদের মানসিক বিভাজন অবিশ্বাসের বাতাবরণ সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প সর্বোপরি গড়ে উঠবে মজবুত বাঙালি জাতিসত্তা।