টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুতেই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে হচ্ছিল আলোচনা। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচটা যে ব্লকবাস্টার হতে পারে, সেই সম্ভাবনায় ম্যাচের সব টিকিটও বিক্রি হয়েছিল। ‘ব্লকবাস্টার’ তকমা পেয়ে যাওয়া ম্যাচটা ভক্তদের সব চাওয়া পূরণ করলো ঠিকই। শেষ ওভারে টান টান উত্তেজনার জন্ম দিয়ে ভারত পাকিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়ে প্রথম জয় তুলে নিয়েছে। ১৬০ রানের লক্ষ্যে শুরুতে বিপদে পড়ে গিয়েছিল ভারত। ঠিক সেই জায়গা থেকে ম্যাচ বের করে তারা বিজয়ের হাসি হেসেছে শেষ বলে।
সুপার টুয়েলভের রোমাঞ্চকর ম্যাচটা জমে উঠে একেবারে শেষ দুই ওভারে। শুরুতে ১২ বলে ৩১ রান প্রয়োজন পড়ে। সেখান থেকে হিসেবটা দাঁড়ায় শেষ ৬ বলে ১৬ রান। প্রথম বলে হার্দিক পান্ডিয়া ক্যাচ তুলে ফেরায় ভারতের পক্ষে বাজি ধরার লোক হয়তো তখন খুঁজে পাওয়া যেত না। কারণ, ম্যাচটা তখনও পাকিস্তানের হাত থেকে ফসকে যায়নি। পরের বলে সিঙ্গেল ও তৃতীয় বলে ২ রান দেওয়া নওয়াজ ভুল করে বসেন চতুর্থ বলে। তার দেওয়া ফুলটস বলটি হয়ে যায় নো বল; আর কোহলি সেই সুযোগে সেটি সীমানার ওপারে পাঠান অনায়াসেই! মোট সাত রান আসায় ম্যাচটা তখন আয়ত্তেও চলে আসে ভারতের। অবশ্য এই নো বলের সিদ্ধান্ত নিয়ে পাকিস্তান শিবিরে কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। পরের বলে ওয়াইড দিয়ে ম্যাচটা আরও ভারতের দিকে ঠেলে দেন নওয়াজ। তখনও ফ্রি হিট অক্ষত থাকায় ওই ডেলিভারিতে কোহলির স্টাম্প ভেঙে বল পেছনে ছুটে গেলে বাই থেকে ৩ রান তুলে নিতে পারে ভারত। তখন জয়ের সব আয়োজনই তারা সম্পন্ন করে ফেলে। পরের বলে নওয়াজ দিনেশ কার্তিককে বোল্ড করলেও শেষ ডেলিভারিটি আবার ওয়াইড দিয়ে ম্যাচটা টাই করতে ভূমিকা ছিল পাকিস্তানি স্পিনারের। শেষ বলে এক রান নিয়ে ৬ উইকেট হারানো ভারত ম্যাচটা ঠিকই জিতে নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।
অথচ ম্যাচের যে এভাবে বাঁক বদল হবে তা কে ভেবেছিল? ৩১ রানে বিদায় নেন লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদব ও অক্ষর প্যাটেল। শুরুর এই দুর্দশায় ভারতীয় দর্শকের অনেকেই হয়তো হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিরাট কোহলি দেখিয়েছেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মানসিকতা ধরে রাখলে কী হয়। হার্দিক পান্ডিয়া ও কোহলির ১১৩ রানের অসাধারণ জুটি ম্যাচটা বের করতে ভূমিকা রেখেছে। হার্দিক ৩৭ বলে ৪০ রানে ফিরেছেন যদিও। কিন্তু কোহলি হাল ধরেছিলেন শেষ ওভার পর্যন্ত। ৫৩ বলে তার ৮২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস ম্যাচের গতিপথ বদলে দিয়েছে। তার ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ৪টি ছয়। ম্যাচসেরাও তিনি।
পাকিস্তানের হয়ে ৩৬ রানে দুটি উইকেট নেন হারিস রউফ। ৪২ রানে দুটি নেন মোহাম্মদ নওয়াজ। পাকিস্তান ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে তারই ব্যর্থতায়। সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছিলেন তিনি। দিয়েছেন ৪২ রান।
মেলবোর্নে বৃষ্টি শঙ্কার মাঝে টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল ভারত। শুরুতে দ্রুত নিয়ন্ত্রণও নিতে পেরেছিল। পাওয়ার প্লের মাঝে তুলে নিতে পারে দুই ভয়ংকর ওপেনার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেট।
দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে আরশদ্বীপ সিংয়ের ফুলার লেংথের বলে এলবিডব্লিউ পাকিস্তান অধিনায়ক (০)। চতুর্থ ওভারে তারই শর্টার লেংথের বলে তালুবন্দি হন রিজওয়ান (৪)। দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটারের বিদায়ে যারা মনে করেছিলেন লড়াই হয়তো এখানেই শেষ। তাদের জন্য ভিন্ন বার্তা বয়ে আনেন শান মাসুদ ও ইফতিখার আহমেদ। দুজনের ৭৬ রানের জুটি চ্যালেঞ্জিং স্কোরের ভিত গড়ে দিয়েছে শেষ পর্যন্ত।
ঝড়োগতিতে খেলেছেন মূলত ইফতিখার। ৩৪ বলে ৫১ রান করেছেন দুটি চার ও ৪ ছক্কায়। এই জুটি থাকলে বিপদ বাড়ার সম্ভাবনাই ছিল। কিন্তু ইফতিখারকে সাজঘরে পাঠিয়েছেন মোহাম্মদ সামি। দারুণ এই জুটি ভেঙে ভারতীয় দল আবারও ম্যাচে ফেরার বার্তা দিয়েছিল। দ্রুত সময়ে শাদাব খান (৫), হায়দার আলী (২), মোহাম্মদ নওয়াজ (৯), আসিফ আলীকে (২) বিদায় দিয়ে ১৬.৪ ওভারে ১২০ রানে তুলে নেয় ৭ উইকেট। তারপরও পাকিস্তানের রান চাকা থামানো যায়নি।
শান মাসুদ প্রান্ত আগলে ইনিংসটাকে সঠিক দিশা দিতে অবদান রেখেছেন। কঠিন চাপের সময়ে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন শাহীন আফ্রিদি। ৮ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ১৬ রান করেছেন। হারিস রউফও ১ ছক্কায় স্কোরটাকে চ্যালেঞ্জিং বানাতে ভূমিকা রেখেছেন। তাতে ৮ উইকেটে ১৫৯ রান করে পাকিস্তান দল। ৫২ রানে অপরাজিত মাসুদের ৪২ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চার।
হার্দিক পান্ডিয়া ৩০ রানে নেন ৩ উইকেট। ৩২ রানে তিনটি নেন আরশদ্বীপ সিংও। একটি করে উইকেট নেন ভুবনেশ্বর কুমার ও মোহাম্মদ সামি।