মাত্র ৪৫ দিন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থাকার পর পদত্যাগ করেছেন লিজ ট্রাস। পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার ট্রাস জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন নেতা নির্বাচনের কাজ শেষ হবে। আগামী ২৮ অক্টোবর নতুন নেতার নাম ঘোষণা করা হবে। ততদিন তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। এখন প্রশ্ন হলো, লিজ ট্রাসের পর কে যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আছেন অনেক নেতাই।
আছেন ঋষি সুনাক
গতবার নেতা নির্বাচনের লড়াইয়ে শেষ ধাপ পর্যন্ত গিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নেতা ঋষি সুনাক। শেষ রাউন্ডে তিনি লিজ ট্রাসের কাছে হেরে যান। এবারও তিনি লড়াইয়ে আছেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি এর আগে সাবধান করে বলেছিলেন, লিজ ট্রাস কর ছাঁটাই করছেন, কিন্তু কীভাবে বাড়তি বোঝা তিনি সামলাবেন, তা বলছেন না, এটা মারাত্মক। এর ফলে বাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। মানুষ আতঙ্কিত হবেন। দেখা গেল, ঠিক কথাই বলেছিলেন ঋষি। তবে তার কথা যে এত তাড়াতাড়ি ফলে যাবে, তা তিনি নিজেও সম্ভবত ভাবেননি।
আর্থিক সংকট মোকাবিলার অভিজ্ঞতা সুনাকের আছে। তিনি কোভিডের সময় ইংল্যান্ডকে পথ দেখিয়েছিলেন। লিজ ট্রাসের কাছে সুনাক খুবই কম ভোটে হেরেছিলেন। তাই যুক্তরাজ্যের এমপিদের একটা বড় অংশের সমর্থন তার আছে। সে কারণে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে শক্তিশালী প্রার্থী।
হাউস অব কমন্সে রক্ষণশীলদের নেতা পেনি মরডান্টও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আছেন। এই সপ্তাহে অনুপস্থিত লিজের জায়গায় তিনিই বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। লিজের ঘোষণার পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য লড়াইয়ে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বরিস জনসন ইস্তফা দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মরডান্টও লড়েছিলেন। তিনি তৃতীয় স্থানে ছিলেন। তবে শেষ রাউন্ডে যেতে পারেননি। সুনাকের মতো তিনিও দলের মধ্যপন্থী নেতা বলে পরিচিত। এমনকি দলের মধ্যে এই আলোচনাও হয়েছে, ঋষি ও পেনি হাত মেলালে তা “ড্রিম টিম” হবে। তবে একজন প্রধানমন্ত্রী হলে, অন্যজন অর্থমন্ত্রী হবেন কি-না, তা স্পষ্ট নয়।
কেমি বাডেনক
জনসনের পরে কেমিও নেতৃত্বের দৌড়ে ছিলেন এবং চতুর্থ হয়েছিলেন। তবে দলের তৃণমূল স্তরের সদস্যদের খুবই পছন্দের প্রার্থী কেমি। দলের মধ্যে অনেকে তাকে খুবই প্রতিভাবান নেত্রী বলে মনে করেন।
দলের মধ্যে কেমি দক্ষিণপন্থী নেত্রী হিসেবে চিহ্নিত। ট্রাসের পর তার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে কি-না, তা এক সপ্তাহের মধ্যেই জানা যাবে।
কয়েক মাস আগেই জনসন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। তারপরেও তার আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকছে। কারণ, দলের একটা অংশ মনে করছেন, স্থায়িত্বের প্রশ্নে জনসন অন্যদের থেকে এগিয়ে আছেন। জনসনকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাইছেন এমন এক এমপি সিএনএন-কে বলেছেন, “সমাজবাদীরা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেবে। এটা যদি আপনারা বুঝতে না পারেন, তাহলে আমি দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত।”
জনসনের ঘনিষ্ঠ কিছু এমপি সিএনএন-কে বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী এখন আবার পুরোদমে মাঠে নেমে পড়েছেন।”
বিবিসি বলছে, জনসনের ঘনিষ্ঠ সূত্র এখনো তার লড়াইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নামার কথা স্বীকার বা অস্বীকার করছেন না। আবার জনসনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা তাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
গ্র্যান্ট স্যাপস
লিজ ট্রাস পরের দিকে গ্র্যান্ট স্যাপসকে হোম সেক্রেটারি করেছিলেন। বরিস জনসনের সময় তিনি ছিলেন পরিবহনমন্ত্রী। গতবারও প্রথমে তিনি নেতা নির্বাচনের লড়াইয়ে ছিলেন। তবে তিনদিন পর তিনি নাম প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। কারণ পরের রাউন্ডে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২০টি ভোট তিনি পাননি। এবার কি তিনি আবার লড়াইয়ে থাকতে পারেন?
এছাড়া আরও কিছু নেতা-নেত্রীর নাম নিয়ে আলোচনা চলছে। আগামী সোমবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে থাকার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। তখন জানা যাবে, শেষ পর্যন্ত কারা লড়ছেন।
(সূত্র ডয়চে ভেলে)