তৈমুর খানের কবিতা

তৈমুর খান
তৈমুর খান
2 মিনিটে পড়ুন

বন্ধু এবং বন্দুক

একটা বন্ধু বন্দুক হয়ে ঝুলে থাকে ঘাড়ে
নিজেকেই হত্যা করো অথবা ভালোবাসো

আকাশ দুর্লভ হয়ে উঠছে
ছেঁড়াখোঁড়া স্বরলিপিতে ঢেউ
এখন নৌকা ভাসাবে তো ভাসাও

পশ্চাৎ আলো করে দাঁড়িয়ে আছে সময়
সব নগ্ন দৃশ্য লগ্ন হয়ে আছে
জলজ বিকিরণ থেকে অন্ধ চোখের ইশারা
বোঝা যায় না ঠিক

বন্ধুরা অস্বচ্ছ তবু হত্যা অভিমুখীন
কার্তুজময় অগ্নিভ রহস্যবিলাসী
সংশয়ের মুহূর্তে সতত মদ্যপ
ভারসাম্যহীন

- বিজ্ঞাপন -

ত্রিকোণ

খুব সচেতনে ত্রিকোণ প্রেমের ছবি গাঢ় হয়
রেললাইন পেরিয়ে, স্টেশন পেরিয়ে
সেই নদীর ঘাটে— ধলাই মুণ্ডেশ্বরী…
তারপর এই জীবন ঘাস

উপহার একে একে রক্তগন্ধে বদল হয়
বইপত্রের ভেতর ভাঁজ করা চিঠি
মেসেজে মেসেজে ক্লান্ত মোবাইল
পড়ে থাকে শিশির ভেজা সংলাপ

আমাদের পোষা সাপ ত্রিকোণ প্রেমের ত্রিভুজে
লটকে থাকে— এবিসি
সমবিন্দুর দূরত্বে একটাই সূর্যমুখী
রোজ রোজ ফুটে ওঠে

ওর হলুদ লালচে রঙে মৌমাছির গান
দানা দানা উঁকি দেয়—
বিহ্বল তাকিয়ে দেখে দূর থেকে
নতুন উদাসী বাঁকা-জলের নদীকে ডাকে

ত্রিকোণ ভেসে যায় একাকী স্রোতে

- বিজ্ঞাপন -

সর্বনাম

কিছু কিছু আড়াল দরজা খুলে দেয়
ভেতরে ঢুকি, নীরবে নীরবে কথা হয়
থইথই ঘাসের বন, মাঠময় জল
অন্তরা থেমে যায় মগ্ন বৈষ্ণবীর
রাঙা পায়ে ফুটে ওঠে রামকৃষ্ণের জবা
জানালায় হাহাকার পাখি
রোজ ডাকে
সময় নেই, সময় নেই
ব্যাখ্যার অতীত গান বাজে

দুই দিকে দুই টান
মাঝে শুধু নুনের সমুদ্দুর
সংসারের ছোট্ট ডিঙা ভাসে
বিভা ও আঁধার একসাথে
বারবার আমাকেই ডাকে

আমি কার সর্বনাম?
অনেক অনেক আমি ঝরে যাই
সারাদিন সারারাত ঘোরে ও বেঘোরে…

- বিজ্ঞাপন -

শরীর কাব্য

সব পোশাক খুলে রাখছি
দেখো শরীরের ভাষা
রক্ত মাংস মেদ-মজ্জায়
কত গহ্বর গান ও রহস্য
ছড়ানো আছে পরতে পরতে

হৃদয় কোথায় আছে শরীর জানে না
এ শরীর তবুও কাব্যময়

পরানহীন

দুপুরবেলা পরান কোথায় গেল?

নিপীড়িত রোদ্দুরে ধরণী ফেটে যাচ্ছে
অশোকবনেও কাঁপছে নিরালোক রাধা
এত জ্বর কারা মেপে দেখবে আর?

পরান গহন ভেদ করে চলে গেছে
নিবিড় বিস্ময় কিছু ছড়ানো মধুপুরে
হাওয়া নেই বিনিদ্র দুপুরে
কার থুথু ভ্রুভঙ্গি পড়ে আছে?

দুর্ভাগ্যের তীব্র ঘরে আমরা উদ্বেগ পেয়ে পেয়ে
সতত বিমর্ষ আর নির্বাক জলে ছায়া দেখি
ছায়ায় অসুন্দর দিন , মৃত বাক্যধ্বনি
শুয়ে আছে, শয়ন ভঙ্গিমায় অদ্ভুত কাতর

আমরা অযোগ্য প্রজন্ম,চেয়ে থাকি দূরে….

সভ্যতার কাছে

সভ্যতার উজ্জ্বল আলোর কাছে
নিজেকে পতঙ্গ ছাড়া আর কী ভাবার আছে?
ডানা পোড়াতে থাকি আলোয়
নিজের অজান্তেই পুড়ে যায় ডানা
ক্ষত ও জ্বালায় হাহাকার ঢাকি
হাহাকার বেরিয়ে আসে তবু
হাহাকার শিউলি ফুল হয়ে যায়

নিজেকে সাজিয়ে রাখি গার্হস্থ্য টবে
সূর্যের করুণায় আর বৃষ্টির জলে

সভ্যতা আলো ও আক্রোশ বানায়
সভ্যতার কাছে আত্মবিশ্বাসের জ্বর…

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
তৈমুর খান জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি প্রাপ্তি। পেশায় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: কোথায় পা রাখি (১৯৯৪), বৃষ্টিতরু (১৯৯৯), খা শূন্য আমাকে খা (২০০৩), আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা (২০০৪), বিষাদের লেখা কবিতা (২০০৪), একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ (২০০৭), জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর (২০০৮), প্রত্নচরিত (২০১১), নির্বাচিত কবিতা (২০১৬), জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা (২০১৭) ইত্যাদি। কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার ও দৌড় সাহিত্য সম্মান, নতুন গতি সাহিত্য পুরস্কার, আলোক সরকার স্মারক পুরস্কার সহ অনেক পুরুস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!