গ্রিক পুরানে রাজা মিডাস যা হাত দিতেন তা নাকি সোনা হয়ে যেত। বর্তমান তৃণমূল সরকারের এখন উল্টো অবস্থা, যা হাত দেবে তা কয়লা হয়ে যাবে! এমনটাই মনে করছে বঙ্গ বিজেপি।
আসন্ন ডিসেম্বর মাসকে টার্গেট করে বঙ্গ বিজেপির সুকান্ত-শুভেন্দু-দিলীপরা ক্রমাগত বলে চলেছেন সরকারটা আর থাকবে না। কোন সবুজ সংকেত পেয়ে এই ইঙ্গিত তারা করছেন তা নিয়ে এখনও প্রকাশ্যে খোলাসা করেননি কেউও। রাজনীতিক ময়দানেও এ নিয়ে চলছে জোর আলোচনা।
ওয়াকিবহল মহলের মতে, নিশ্চয় কোনও ইঙ্গিত রয়েছে বলেই বঙ্গ বিজেপির নেতারা ‘ডিসেম্বর তত্ত্বকে’ ভাসিয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে।
রাজ্যজুড়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে শুধু নয়, সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যেও এই জল্পনা চলছে, ইডি ও সিবিআইয়ের সৌজন্যে কালীপুজোর পর শিক্ষক নিয়োগ, গরু ও কয়লা পাচার কাণ্ডে তৃণমূলের অনেক রাঘববোয়ালদের জেল যাত্রা পাকা। অপরদিকে, শিক্ষক নিয়োগসহ একাধিক দুর্নীতি আর রাজ্যের আর্থিক দায় সামলাতে বির্পযস্ত রাজ্য সরকার।
ডিএ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ সরকারি কর্মীরা। এমনিতেই বিভিন্ন দান-খয়রাতি করে ঋণের বোঝায় ভারক্রান্ত তৃণমূল সরকার। এমতাবস্থায় আদালতের নির্দেশে যদি রাজ্য সরকার ডিএ দিতে বাধ্য হয়, তাহলে বিপুল পরিমাণে আর্থিক দায় ঘাড়ে চাপবে। কার্যত আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়বে রাজ্য। এর ফলে প্রশাসন চালানো দুষ্কর হয়ে পড়বে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির। আর এই আশঙ্কা আশা জোগাচ্ছে মুরলীধর সেন লেনের কর্তাদের।
বৃহস্পতিবার দলের সাতটি মোর্চার রাজ্য নেতৃত্বকে এই পাঠ পড়িয়ে কেন ‘ডিসেম্বর তত্ত্ব’ তা খোলাসা করছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এমনটাই সূত্রের খবর। এদিন বিধাননগরে পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (আইসিআরআর) শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আমরা জোর গলায় বলেছিলাম পশ্চিমবঙ্গে ডিসেম্বর মাসের পরে এই সরকারটা সরকার হিসেবে থাকবে না। লেম ডাক সরকার হবে। আপনারা দেখেছেন, ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট চাকরিপ্রার্থীরা করুণাময়ীর সামনে লাগাতার অনশন, অবস্থান ইত্যাদি করছেন। আপনারা দেখেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যেই একটা লেম ডাক সরকার হয়ে গিয়েছে।’ শুভেন্দুর এই কথায় উৎসাহিত হয়ে মোর্চারা নেতারা ঘন ঘন এদিন স্লোগান তোলে,‘জয় শ্রীরাম।’
এদিন নাম না উল্লেখ না করে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সমলোচনা করে শুভেন্দু বলেন, ‘যে সরকারের মালিক বলেন, কথায় কথায় আদালত হস্তক্ষেপ করে আমাদের কাজ করতে দিচ্ছে না। এখন তাদেরই উল্টোপুরাণ। যে সরকারের ক্ষমতা থাকে না, যে সরকার আন্দোলনকে ভয় পায়, সেই সরকারই আদালতে যায়। তাদের হাতে ক্ষমতা, পুলিশ, আইন থাকা সত্ত্বেও তারা গিয়েছে আদালতে বিক্ষোভকারীদের তোলার জন্য। তাই ডিসেম্বরের আগেই দুর্বল হয়ে পড়বে সরকার।’
শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্য সমর্থন করে বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায়ের দাবি, ‘পশ্চিমবঙ্গ অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থার দিকে যাচ্ছে। রাজ্যের যা অবস্থা সরকার আগামী তিন মাসের মধ্যে পঙ্গু হয়ে যাবে। স্কুল শিক্ষকদের ২৩ হাজার কোটি রুপি ডিএ বাকি। আর বাদবাকি সরকারি কর্মীদের বাকি এক লাখ কোটি রুপি। এই সরকারের হাতে ৫০০ কোটি রুপিই নেই। যেকোনও সময় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে সরকার।
নেতা, মন্ত্রীদের ব্ল্যাকমানির রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে ইডি। এরপর বিধায়ক, মন্ত্রীরা নিজেদের দায় এড়াতে পদত্যাগ শুরু করবেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতে থাকা দফতর আইন-শৃঙ্খলা ও স্বাস্থ্যতে পুরো ফেল। যখন চোরেরা সক্রিয় হয়ে তখন আইন-শৃঙ্খলা আর থাকে না। প্রশাসন ভেঙে পড়ে। সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। যেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। তাই এই দুই তিনটা মাস রাজ্যের জন্য খুব তাৎপর্যপূর্ণ।’ (সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন)