গত এক বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ২৮ অক্টোবর থেকে পণ্য বিক্রি শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশের আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। এর আগে ইভ্যালির সহ-উদ্যোক্তা শামীমা নাসরিন ১৫ অক্টোবর থেকে পণ্য বিক্রির কথা জানিয়েছিলেন।
তবে গ্রাহকদের আরও ভালো সেবা দেওয়ার জন্য তারিখ পরিবর্তন করে ২৮ অক্টোবর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা “সংকটকালীন” গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন।
শামীমা নাসরিন ব্যবসা পুনরায় শুরু করার বিষয়ে এর আগে সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, “বাংলাদেশের ই-কমার্স মার্কেট সাইজ অনুযায়ী ইভ্যালি মাল্টি বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ তোলার সক্ষমতা রাখে। বর্তমানে ইভ্যালিতে বিনিয়োগ পেতে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিজনেস করে বিনিয়োগকারীদের এটাকে লাভজনক ও সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উপস্থাপন করা। আমরা এই যাত্রায় প্রথম দিন থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইভ্যালিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
তিনি জানান, অভিযোগমুক্ত ই-কমার্স তৈরির আদর্শ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে তারা আবার শুরু করতে চান। গ্রাহকদের সব ধরনের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে এই নতুন ক্যাম্পেইন শুরু হতে যাচ্ছে।
ইভ্যালি ব্যবসায়ীক নীতির পরিবর্তন এনেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, তারা এখন লাভ ছাড়া একটি পণ্যও বিক্রি করবে না। তারা ক্যাশ অন ডেলিভারি, পিক অ্যান্ড পে এবং ডেলিভারির আগে নগদ পণ্য বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই বিষয়ে শামীমা বলেছিলেন, “যদি আমরা ব্যবসা শুরু করতে পারি, আমরা এগিয়ে যেতে পারব। আমরা প্রথম দিন থেকেই লাভে পণ্য বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা মনে করি আগামী এক বছর নিরবচ্ছিন্ন ব্যবসা করতে পারলে প্রথম বিনিয়োগ থেকেই সব দেনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।”
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, অসংখ্য বিনিয়োগকারী আগ্রহ দেখিয়েছেন। ইভ্যালির প্রায় ৪৫ লাখ ক্রেতা এবং ৩০ হাজার ব্যবসায়িক সহযোগী রয়েছে। ফলে নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনা করলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনা সহজ হবে।
ইভ্যালিতে বর্তমানে হাইকোর্ট কর্তৃক নিযুক্ত দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক আছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কাজী কামরুন নাহার ও ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) সহসভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন এই দায়িত্বে রয়েছেন।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ইভ্যালি পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছেন হাইকোর্ট। এর আগে গত অক্টোবরে শামীমা নাসরিনকে ইভ্যালির পরিচালক হিসেবে পুনরায় যোগদানের অনুমতিও দেন আদালত।
ইভ্যালির অ্যাকাউন্টগুলোতে বড় ধরনের নগদ অর্থের সন্ধান পায়নি হাইকোর্টের ঠিক করে দেওয়া ইভ্যালির পাঁচ সদস্যের পরিচালনা বোর্ড। পরে আদালতে একটি অডিট রিপোর্ট পেশ করেন তারা। প্রতিষ্ঠানটির অর্থ পাচারের বিষয়ে তদন্তের পরামর্শ দিয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন তারা।
হাইকোর্ট-নিযুক্ত পরিচালনা বোর্ডের মতে, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটি প্রায় প্রতিদিনই ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট থেকে যে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ তুলে নিয়েছিল, তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। হয়তো সেই অর্থ পাচার করা হয়েছে।
তবে অর্থপাচারের অভিযোগ অস্বীকার করে শামীমা নাসরিনের দাবি, ইভ্যালির সার্ভারগুলোতে অ্যাক্সেসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের দেনার পরিমাণ নিশ্চিত করা যেতে পারে। তবে মোহাম্মদ রাসেলকে ছাড়া সার্ভারে অ্যাক্সেস দেবে না অ্যামাজন।