নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ চলছেই। সেই বিক্ষোভ দমনে এবার মেয়েদের স্কুলে অভিযান চালানোর অভিযোগ উঠেছে ইরানি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শুধু আটকই নয়। এসব অভিযানে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।
ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাদা পোশাকে ইরানের শাসকগোষ্ঠীর এজেন্টরা দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আরদাবিলের একটি মেয়েদের হাই স্কুলে এবং আজারি ভাষী শহরে অভিযান চালিয়ে ১০ জন শিক্ষার্থীকে আহত করেছে এবং ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ইরানি টিচার্স ট্রেনিং অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে আহত এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। টুইটারের এক ভিডিওতে স্কুলপ্রাঙ্গণে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার স্কুলের মেয়েদের শাসকপন্থি সমাবেশে অংশ নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে।
আরদেবিলের এই ঘটনার পর ইরানের বৃহত্তম আজারী ভাষী শহর তাব্রিজে বেনামে একটি ঘোষণায় বলা হয়েছে, শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার জন্য নাগরিকদের আহ্বান জানিয়ে সরকারি বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে তাদের হাত না তোলার জন্য সতর্ক করেছে।
এদিকে স্বাধীন ইরানি মানবাধিকার গোষ্ঠী এইচআরএএনএ জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩২ জন শিশুসহ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ২৩৩ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর আগে ২৩ শিশুর মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল।
এইচআরএএনএ বলছে, কর্তৃপক্ষ ১৭০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ ৭ হাজার ৭০৪ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। গত চার সপ্তাহে দেশটির ১১২টি শহরে ও শহরের ৪২৮টি রাস্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ‘নৈতিকতা’ পুলিশ হেফাজতে মাহসা আমিনি নিহত হওয়ার পর স্কুলের শিশুরাও জোরপূর্বক হিজাবের প্রতিবাদ করছে। এরই মধ্যে অজানাসংখ্যক স্কুলছাত্রীকে আটক করে ‘মনস্তাত্ত্বিক’ পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
চলমান বিক্ষোভে ইরানজুড়ে অচলাবস্থা সৃষ্টির পরে আন্দোলনকে সহিংসতার মাধ্যমে কঠোরভাবে দমনের বিষয়ে অবিচল ইরানের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এর মধ্যেও শাসক শ্রেণির অনেকেই শান্তিপূর্ণ বিকল্পগুলো খোঁজা শুরু করেছেন।
জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পদের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় নেমে আসছে বিক্ষুব্ধরা। তাদের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে।
বৃহস্পতিবার ইসলামিক রিপাবলিক পত্রিকার সম্পাদক মাসিহ মোহাজেরি এক সম্পাদকীয়তে লিখেছেন ‘বিক্ষোভকারীরা বিদ্রোহ থেকে সরে আসতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের কাছাকাছিও যেতে পারে। যদি তারা দেখে যে তাদের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করা হয়েছে এবং নাগরিকের অধিকারকে সম্মান জানানো হয়েছে।’
তবে এটি কীভাবে সম্ভব হবে তা ব্যাখ্যা না করে সম্পাদকীয়তে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের দাবি অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
এ ছাড়া সরকারের অদক্ষতার সরাসরি উল্লেখ না করেই তিনি বলেন, ‘দেশে এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা জনগণের সেবা করতে প্রস্তুত, কিন্তু মৌলবাদীরা বিভিন্ন কারণে তাদের সরকার থেকে দূরে রেখেছে। তাই তারা বিচ্ছিন্ন এবং তাদের সামর্থ্য দেশের ব্যবস্থাপনায় কাজে লাগে না।’