অন্ধ কানাই
তোমাকে নিয়ে গল্প কবিতা লেখা যায়।
শুধু একটাই পথ, অথচ অজস্র সরণি!
সারাদিন একই পথে সাইকেলে উলুক-ঝুলুক
তুমি আজ ভিনদেশী চেনা বিদেশিনী!
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই দাঁড়িয়েছি বকুল ছায়ায়
তুমি যে আমাকে দেখনি,তাও নয়
কৃপা করে হাসি ছুঁড়েছিলে বেশ ক’বার
এ সময় ঘুমন্ত তুমি ফিলাডেলফিয়ায়!
বাধ্য হয়ে অনেকেই বাসা বদলায় এবং স্বদেশ
তুমিও কি তেমনি কোন কিছু
চলে গেছ অন্য কারো পিছু
নাকি ছিল মান-অভিমান!অথবা কোন গভীর বিদ্বেষ!
তোমাকে নিয়ে গল্প লিখি আমি।মাঝে মাঝে কবিতা বানাই
তুমি জানলে পরে হয়তো খুশি হবে
তোমাকে নিয়েই আমার কবিতা বের হবে
যে তোমার জীবনের ‘অন্ধ কানাই’!
একটি রচনা
ইদানীং সব মানুষই খুব বেশি কথা বলে
অথচ অন্যের কথা শুনতে চায় না!
আসলে বেশি কথা বললে নিজের অজান্তেই
কিছু অসত্য কথা ঠোঁটদুটো চেপে রাখতে পারে না!
টুপ করে বসন্তের পাতার মতো খসে পড়ে!
এই প্রাণী জগতে মানুষের বোধবুদ্ধি সব থেকে বেশি।
মানুষের নাম হয় যুধিষ্ঠির। মানুষই মিথ্যার বেসাতি করে
মানুষ জন্মান্ধ হয় এবং খুনি!মানুষ অপটু হয়-
সর্ব গুণে গুণী!
মানুষ বিশ্বাস করে সৃষ্টি-স্থিতি-লয়-
মানুষই অমর হয়, পৃথিবী ক্রমশ হয় ক্ষয়!
মানুষ নোবেল পায়।জন্ম নেয় সাহিত্যিক,ডাক্তার,বিজ্ঞানী
মানুষই পৃথিবীর একমাত্র হেঁটে যাওয়া উৎকৃষ্ট
দ্বিপদ এক প্রাণী!
আমাকে একটা কাজ দেবেন স্যার
এখানে নিঃশ্বাস নাও।এ সন্ধ্যাটা বড় বেশি প্রিয়
ইদানীং বাদামের ঠোঙায় প্রেম নেই!প্রেমিকারা ভীষণ বায়বীয়!
প্রেমিকার ঠোঁটে আজ জলন্ত আগুন!ধোঁয়া ওড়ে বিবর্ণ ছাই!
তুমি যখন তুই-তুকারি কর,বোঝা যায় না প্রেমিক,নাকি ভাই!
সরোবরের জলে ডুবে আছে প্রেমিকার পায়ের আঙুল
নোংরা খুঁটে খেয়ে যায় এক ঝাঁক মাছ।
খুচরো চুল ওড়ে পাগলের মতো, শরীরে ছড়িয়ে থাকে
মাতাল বাতাস!
নিত্য এসব দেখে ফিক করে হেসে ফেলে প্রবীণ এক গাছ!
তুমি যাকে প্রেম দাও,সাথে দাও এক মুঠো আশা
দূরভাষে জল দাও রোজ,স্বপ্নে বোন বীজ,বিকেলের ভালোবাসা!
চেটেপুটে খাও।অন লাইনে ফর্ম ভরো।বাকিটুকু ইঁদুরের দৌড়-
এখন আসে না আর আষাঢ়-শ্রাবণ। নাচেনা পেখম তুলে
অনুরাগী মোর!
ক্ষমাহীন অভিনয়
কোথায় দাঁড়াতে হবে বলে দাও।
আমি অগ্নি সাক্ষী করে বলছি- ঠিক সেখানেই দাঁড়াব।
কতটুকু হাত বাড়াবে বলে দাও।
আমি শালিগ্রাম ছুঁয়ে বলছি- ঠিক ততটুকুই হাত বাড়াব।
তোমার বলে দেওয়া নির্দিষ্ট স্থানে আমি দাঁড়িয়ে আছি,
আর মাথার উপর হামলে আছে চৈত্রের আকাশ।
পায়ের নীচে গোড়ালি ফাঁটার মতো ক্ষতবিক্ষত মাটি,
ভীষণ যন্ত্রণায় তবু দাঁড়িয়ে রয়েছি।
দু’হাত প্রসারিত করেছি তুমি ঠিক যতটুকু বলেছিলে।
অথচ তুমি নেই। শুধু তোমার প্রলম্বিত ছায়া
আমাকে জরিপ করছে দূর থেকে!
এ তোমার কেমন মঞ্চাভিনয়-
সহ অভিনেতাকে আড়াই ঘন্টা আউট অফ ফোকাস রেখেদিলে!
ট্রেনের টিকিট
আমার মায়ের ট্রেন এবং বাবার, চলে গেছে।
মায়ের শীতল তালুতে একটা টিকিট দিয়েছিলাম
একেবারে সাধারণ শ্রেণীর টিকিট!
কিন্তু বাবার যাওয়ার কোন টিকিট ছিল কিনা আমার জানা নেই!
আসলে বাবার ট্রেনটা ছেড়েছিল শিলিগুড়ি থেকে- “এই দাদা,তুই কি বাবার হাতে কোন টিকিট দিয়েছিলি?”
বড় দুশ্চিন্তায় আছি!
তা না হলে মাঝ পথে বাবাকে নামিয়ে দিলে
মায়ের অপেক্ষমান শরীরটা কোন এক অখ্যাত স্টেশনে
ভাঙাচোরা কাঠের বেঞ্চে একরাশ দীর্ঘ তিতিক্ষা নিয়ে
একলা ঠায় বসে থাকবে!
কে জানে সে আজো আছে কিনা!
ভবঘুরে
আমি প্রেম প্রেম খেলা খেলি
কিছু শব্দকে পায়ে দলি-
মন্দ ভাবনা ছাই চাপা দিয়ে
জড়িয়েছি নামাবলি।
পচা শব্দ যায় যে উড়ে
হুগলির সিঙ্গুরে-
শামুকে কাটল পা
আসলে আমি এক ভবঘুরে!
আমি যখন যেখানে থাকি
সব কিছু দেখে রাখি-
অথচ কি জানি নিজেই নিজেকে
কখন দিয়েছি ফাঁকি!
তবু প্রেমের খেলাতে জয়ি
শুধু একা নই,আমি ত্রয়ি-
সব হেরে গেছে এক এক করে
আমিই বিশ্বজয়ী!
তবু আজো ভবঘুরে
দূর থেকে আরো দূরে-
মুন্ডিত কেশ-জীর্ণ বসন
যুদ্ধ করেছি নিজেকে পুড়িয়ে সুতীব্র রোদ্দুরে!