সমগ্র পৃথিবীকে বিরূপ জলবায়ুর বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই লড়াই আরও বেশি গুরুতর হয়ে উঠেছে। তবে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশের জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো প্রস্তুতি নেই। এমনকি বন্য বা ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম বার্তা পাওয়ার মতো তাদের ব্যবস্থাও নেই।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় শক্তিশালী দেশগুলোর চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে এমন দেশগুলোর মৃত্যুর হার ৮% বেশি। বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ, ঝড় বা অন্যান্য বিপর্যয়ের জন্য সঠিক আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে তাগিদ দিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “পৃথিবীকে আরও বিরূপ প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। জলবায়ু ও আবহাওয়া চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে। এমনর পরিস্থিতিতে যেকোনো দুর্যোগে যেন প্রাণ রক্ষা করা যায় সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে।”
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশগুলোকে “ধস নামানো বিপত্তি” মোকাবিলায় প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। বিশ্বের মাত্র অর্ধেক দেশেই এই ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। দরিদ্র দেশগুলো জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এমন দেশগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে একাধিক প্রভাবসহ আরও খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।
বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অর্ধেকেরও কম এবং ছোট আয়তনের উন্নয়নশীল দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর মাত্র ৩৩%-এ সতর্কতা ব্যবস্থা রয়েছে।
জাতিসংঘের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ব্যবস্থাপনার প্রধান মামি মিজুতোরি এমন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “এটি এমন একটি পরিস্থিতি যা জীবন, জীবিকা এবং সম্পদ বাঁচাতে জরুরিভাবে পরিবর্তন করা দরকার।”
সম্প্রতি পাকিস্তানের বন্যা পরিস্থিতিতে নিহত প্রায় এক হাজার ৭০০ জনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আগাম সতর্কতা না নেওয়া হলে এই “হত্যাকাণ্ড” আরও ভয়ংকর হতো।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রতি লাখে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ১,১৪৭ জন। যা ২০১৪ থেকে ২০২১ এ দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ২,০৬৬ জনে।
জাতিসংঘ চায়, সবদেশই পাঁচ বছরের মধ্যে আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা চালু করুক। আগামী নভেম্বরে মিশরে হতে যাওয়া কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলনে এ বিষয়ে তারা তাদের অবস্থান ও কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করুক।