ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ট্রাক বিস্ফোরণে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মস্কো। বিস্ফোরণে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার জন্য কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর একাংশ ধসে গেছেও বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এই সেতু বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ব্যাপারে ইউক্রেনকে দায়ী করেনি মস্কো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেতুতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের নাটকীয় ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পরপরই ক্রিমিয়া সেতুতে আগুন ধরে গেছে এবং সেতুর একাংশ পানিতে ধসে পড়েছে। এক বিবৃতিতে রাশিয়ার তদন্ত কমিটি বলেছে, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সেতুতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে তিনজন নিহত হয়েছেন।
সেতুটি আংশিকভাবে ভেঙে পড়ার পর পানি থেকে একজন পুরুষ ও একজন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
মস্কো বলেছে, নিহতরা একটি গাড়ির যাত্রী ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাড়িটি বিস্ফোরিত ট্রাকের কাছেই ছিল। নিহতদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিস্ফোরিত ট্রাকের মালিক রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রাসনোদার অঞ্চলের বাসিন্দা। তার বাসভবনে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দ্বীপের দখল নেয় রাশিয়া। পরে এই দ্বীপের সাথে রাশিয়ার সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য দীর্ঘ ১৯ কিলোমিটার সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ক্রিমিয়া দ্বীপ দখলে নেওয়ার চার বছর পর ২০১৮ সালে সেতুটিকে রাশিয়ার পরিবহন নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মহা ধুমধাম করে সেটির উদ্বোধন করেছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে রাশিয়ার জাতীয় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি বলেছে, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৭ মিনিটে ক্রিমিয়া সেতুতে একটি মালবাহী ট্রাকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর ফলে উপদ্বীপের দিকে চলন্ত ট্রেনের সাতটি জ্বালানি ট্যাঙ্কারে আগুন ধরে গেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধে এই সেতু রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক সরবরাহ রুটে পরিণত হয়েছে। কারণ ইউক্রেনের দক্ষিণের খেরসন অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা রুশ সৈন্যরা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তাদের কাছে অস্ত্র ও সামরিক রসদ পাঠানোর অন্যতম পথ ক্রিমিয়া উপদ্বীপের দীর্ঘ এই সেতুটি।
ছবিতে দেখা যায়, সেতুর একাংশ থেকে ঘন কালো ধোঁয়া উড়ছে। পরে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়েছে বলে বলে রাশিয়ার জরুরি মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক টুইটারে এক বার্তায় বলেছেন, এটি কেবল ‘শুরু’। তবে ইউক্রেনীয় বাহিনী বিস্ফোরণের জন্য দায়ী কিনা সেবিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
মিখাইলো পোডোলিয়াক বলেছেন, ‘অবৈধ সবকিছু ধ্বংস করা হবে। চুরি হওয়া সবকিছু ইউক্রেনে ফেরত আনা হবে। রাশিয়ার দখলে থাকা সবকিছু অবশ্যই মুক্ত করা হবে।’
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।