মিয়ানমারের জান্তাকে সহায়তা করার অভিযোগে দেশটির অস্ত্র ব্যবসায়ী তিন নাগরিক ও এক কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় এ নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল ও নোবেলজয়ী অং সান সু চিসহ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিতদের আটক করে; এরপর জান্তাবিরোধী বিক্ষোভেও নির্মম দমনপীড়ন চালায়। দেশটির জান্তাবিরোধীদের অনেকেই এখন সশস্ত্র সংগ্রামে নেমেছেন। আগে থেকে লড়াই চালিয়ে আসা জাতিগত বিদ্রোহীরাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় সংঘাতের তীব্রতা বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, জান্তার হয়ে অস্ত্র কেনাকাটায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা মিয়ানমারের ব্যবসায়ী অং মোয়ে মিন্ট, তার প্রতিষ্ঠিত ডাইনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড ও এর দুই পরিচালকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে তারা।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তার ছেলে মিন্টের ওপর আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। মিন্ট মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জন্য “নানান অস্ত্র, সরঞ্জাম, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমানের” পাশাপাশি বিমানের যন্ত্রাংশ সংগ্রহের কাজে তার কোম্পানিকে ব্যবহার করছেন।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে মিয়ানমারের এই তিন নাগরিক ও কোম্পানিটির যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সম্পদ থাকলে তা জব্দ হবে এবং মোটাদাগে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা বা কোনো প্রতিষ্ঠান এদের সঙ্গে কোনো লেনদেন করতে পারবে না।
মিয়ানমারের আগের নাম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ব্রায়ান নেলসন বলেছেন, “আজ (বৃহস্পতিবার) আমরা বার্মার সামরিক শাসকদের জন্য অস্ত্র সংগ্রহে নিযুক্ত সহায়তাকারী নেটওয়ার্ক ও যুদ্ধের মাধ্যমে লাভবান হওয়াদের টার্গেট করেছি। বার্মার জনগণের ওপর নির্মম সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া বার্মিজ সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা কমাতে আমাদের পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মানবাধিকার লংঘন বিশেষ করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জান্তাবিরোধী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মিয়ানমারের সাবেক পুলিশপ্রধান ও স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী থান হ্লাইংয়ের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
রয়টার্স এসব নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ওয়াশিংটনের মিয়ানমার দূতাবাসের মন্তব্য চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে তারা সাড়া দেয়নি।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জান্তা ও এর সহযোগীদের ওপর যত নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, তাতে মিয়ানমারের গ্যাস রপ্তানিকে টার্গেট করা হয়নি; এই গ্যাস রপ্তানিই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে বড় আয়ের খাত।
জান্তাবিরোধী শক্তি এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো মিয়ানমারের এই গ্যাস রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পশ্চিমাদের ওপর চাপ দিয়ে আসছে। এমন পদক্ষেপই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর আচরণের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।