বাংলাদেশ বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে বর্তমানে পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা ১৭৩। বিশ্বের আর কোনো দেশেই এতো সংখ্যক সবুজ কারখানা নেই।
পরিবেশবান্ধব এ ধরনের কারখানার সনদ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)৷ তারা লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (এলইইডি)। তাদের তথ্যেই এমন কথা জানানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সবুজ কারখানার দিক দিয়ে তৈরি পোশাক খাতের অগ্রগতিতে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। এমন কারখানা শুরু করতে প্রথমে অতিরিক্ত ব্যয় লাগলেও পরে এতে অন্যান্য অনেক খরচ কমে আসে।
বিজিএমইএর তথ্য বলছে, সবুজ কারখানাগুলো ৪০% প্রাকৃতিক শক্তি, পানি ৩০% ও কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনকে আরও সহজ করে। এতে করে পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
এজন্য কারখানার মালিকদের যেমন ভবন নির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড মেনে চলতে হয়। তেমনই কারখানাগুলো কর্মীদের জন্য নিরাপদ কাজের পরিবেশ দেয়।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) তথ্য অনুসারে, ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তৈরি পোশাক খাতে প্ল্যাটিনাম ক্যাটাগরিতে ৫৪টি, সোনায় ১০৫টি, সিলভারে ১০টি ও আরও চারটি এলইইডি অনুমোদিত কারখানা ভবন নিয়ে বাংলাদেশ সবুজ উৎপাদনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বিজিএমইএ জানায়, গাজীপুর-ভিত্তিক আমান টেক্স লিমিটেড ইউএসজিবিসি থেকে ৮৯ নম্বর পেয়ে প্লাটিনাম সার্টিফিকেট পেয়েছে। এছাড়া ঢাকা-ভিত্তিক আয়েশা ফ্যাশন লিমিটেড ৬৪ স্কোর নিয়ে গোল্ড সার্টিফিকেট পেয়েছে।
তাছাড়া বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি এলইইডি অনুমোদিত শিল্প ইউনিটের মধ্যে ৪২টি শিল্প ইউনিট বাংলাদেশে রয়েছে।
বিজিএমইএ বলছে, ইউএসজিবিসির এলইইডি সার্টিফিকেশন পাওয়ার জন্য নিবন্ধিত আরও ৫৫০টি কারখানা পাইপলাইনে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থায়িত্ব, জলবায়ু পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানি হ্রাস এবং দক্ষতার ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবেলা করে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এখন বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
বিজিএমইএ কর্মকর্তারা উন্নয়নশীল পোশাক খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে একটি সবুজ ক্ষেত্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তারা বলছেন, তাদের লক্ষ্য একটি টেকসই, দক্ষ, এবং পরিবেশবান্ধব পোশাক শিল্প তৈরি করা। একইসঙ্গে উদ্ভাবন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং বৃত্তাকার অর্থনীতি বৃদ্ধি করা।
জার্মানি সরকারের টেকসইতার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের বিশ্ব সিল পাওয়ার জন্যেও বিজিএমইএ অঙ্গীকারাবদ্ধ।
বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বাংলাদেশ এক্ষেত্রে এগিয়ে। তিনি বলেন, একবার আমাদের এলইইডি অনুমোদিত কারখানায় বিনিয়োগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু আজ আমরা স্বপ্নদর্শী উদ্যোক্তাদের শ্রমের ফল দেখতে পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে, সবুজ কারখানা স্থাপনে বেশি খরচ হয় তবে আপনি যদি টেকসইয়ের কথা চিন্তা করেন। তাহলে আপনাকে প্রতিযোগিতায় থাকতে এখানে বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ পরিবেশকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ক্রেতারা পরিবেশ রক্ষায় অনেক সতর্ক।
বিজিএমইএর এই পরিচালক বলেন, ভবিষ্যতে, এলইইডি অনুমোদিত কারখানা কেবল বিকল্প হবে, বরং বাধ্যতামূলক হবে। কারণ ক্রেতারা অবশ্যই সবুজ কারখানাগুলোতে অর্ডার দেবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবুজ ও টেকসই কারখানার ক্ষেত্রে খুব ভালো করছে। এই সেক্টরে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। ফলে এটি ভবিষ্যতে পরিবেশ বান্ধব উৎপাদন বিষয়ক প্রশ্নের জবাব দেবে।
তিনি আরও বলেন, বিজিএমইএ সব সময়ই উদ্যোক্তাদের এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছে। ফলে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে দক্ষতা বৃদ্ধি ও উচ্চ-মানের পণ্য উৎপাদনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, এলইইডি অনুমোদিত কারখানাগুলোকে অবশ্যই এই শর্ত বাস্তবায়নের জন্য বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকতে হবে। এই কারখানায় প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে উল্লেখযোগ্যভাবে খরচ সাশ্রয় করবে।
ক্রেতাদের কাছে পোশাক খাতের ভাবমূর্তি আরও উন্নত করতে বিজিএমইএ-এর বহু উদ্যোগের মধ্যে একটি গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন।
পোশাক প্রস্তুতকারকদের মতে, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর গ্রিন ফ্যাক্টরি বিল্ডিংয়ের দিকে অগ্রসর হওয়া বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করেছিল। ওই ঘটনায় ১,১৩৪ জন প্রাণ হারান ও ২,০০০ হাজার জনের বেশি আহত হন।
(সূত্র ঢাকা ট্রিবিউন)