আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি শিক্ষাকেন্দ্রে আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রায় ৩৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের প্রায় সবাই হাজারা জনগোষ্ঠীর তরুণী। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এই হামলার ঘটনা ঘটে।
শিয়া ধর্মাবলম্বী এই জনগোষ্ঠীটি দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০-২০%।
এ অবস্থায় গোষ্ঠীটির নারীরা শনিবার হাজারাদের বিরুদ্ধে চলমান “গণহত্যা” বন্ধ ও নারীরা পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন এমন দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাজারা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫০ জন নারী শুক্রবারই কাবুলের পশ্চিম দিকের শহরতলি দাশত-ই-বারছি এলাকায় ব্যানার-পোস্টার হাতে বিক্ষোভ শুরু করেন। তালেবান সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালের দিকে যাত্রা করেন। ওই হাসপাতালেই হামলায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা চলছে।
বিক্ষোভকারীদের মিছিলে “হাজারা গণহত্যা বন্ধ কর”, “শিয়া হওয়া অপরাধ নয়” ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা গেছে। এছাড়া ব্যানার-পোস্টারেও একই ধরনের স্লোগান লেখা ছিল।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ফারজানা আহমাদি বলেন, “হাজারা নারীদের লক্ষ্য করেই শুক্রবারের হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এ গণহত্যার অবসান চাই। অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই আমরা রাস্তায় নেমেছি।”
জাতিসংঘ জানিয়েছে, শুক্রবারের হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত আরও ৩০ জন। কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ২৫-এর বেশি নয়।
শুক্রবার “কাজ উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র” নামের যে প্রতিষ্ঠানটিতে হামলা হয়, সেখানে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কেন্দ্রটিতে ছেলে ও মেয়েদের সেকশন ছিল আলাদা। হামলা হয় নারীদের সেকশনে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হাজরা জনগোষ্ঠীর নারীরা তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রতি ব্যক্ত করেন। হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ওয়াজিহা নামে এক তরুণী বলেন, “আমরা পড়ালেখা করতে চাই। চালিয়ে যেতে চাই। এই হামলার দায় এখনো কেউ স্বীকার করেনি। তবে যারা হামলা চালিয়েছে তারা আমাদের গোষ্ঠীর অগ্রগতি বন্ধ করতে চায়। তারা কেন আর অন্যকোনো সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালায়নি?”
গত বছরের আগস্টে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে আফগানিস্তানে বোমা হামলা বেড়েছে। প্রায় প্রতি শুক্রবারই দেশটির কোনো না কোনো মসজিদে হামলা হয়। হামলা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
দাশত-ই-বারছিতে চলতি বছরের মে মাসেও এক ভয়াবহ বোমা হামলা হয়েছিল। তাতে অন্তত ৮৫ জন নিহত ও আরও ৩০০ জন আহত হয়। নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই নারী।