ঠিকমতো হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানে নীতি পুলিশের হাতে আটকের পর মাহসা আমিনির (২২) মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখনো চলছে। সরকার বিক্ষোভ দমনে “কঠোর অবস্থান” নিলেও ক্রমাগত বিক্ষোভের প্রসার ঘটেছে শহর থেকে শহরে।
মানবাধিকার সংস্থা “হিউম্যান রাইটস ইরান” জানিয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই বিক্ষোভে অন্তত ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংস্থাটি এক টুইট বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনি ইরানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাকেজ থেকে তেহরানে গিয়েছিলেন। সেখানে হিজাব দিয়ে মাথা পুরোপুরি না ঢাকায় আইন ভাঙার অভিযোগে দেশটির নীতি পুলিশ তাকে আটক করে। পরে তিনদিন পর তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
পুলিশ বলছে, বন্দিশালায় হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমিনি পড়ে যান। কিন্তু তার পরিবার পুলিশের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, নীতি পুলিশের কর্মকর্তারা তাকে পিটিয়েছিল। হাসপাতালে তিন দিন কোমায় থাকার পর আমিনির মৃত্যু হয়।
তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেয়। মানুষ রাস্তায় নেমে হিজাব আইনের বিরোধিতা, নারী অধিকারের দাবিতে শ্লোগান দেয়।
২০১৯ সালে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভের পর এটিই দেশটির সরকারবিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।
কর্তৃপক্ষের কঠোর দমনপীড়নের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকা সত্ত্বেও প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, রাজধানী তেহরান, কওম, রাশত, সানানদাজ, মাসজিদ-ই-সুলেইমান ও অন্যান্য শহরে বিক্ষোভকারীরা “মোল্লাতন্ত্রের” পতনের ডাক দিচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের খবরে বিরাট সংখ্যা “দাঙ্গাকারীকে” গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়েছে, তবে আর বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
অধিকার আন্দোলনকারী গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, বহু আন্দোলনকারী, শিক্ষার্থী ও শিল্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
“কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট” টুইটারে জানিয়েছে, ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীগুলো অন্তত ২৮ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে বলে তারা জানতে পেরেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি চান মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুক।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লব হওয়ার পর থেকে শত্রুভাবাপন্ন পশ্চিমা শক্তিগুলো ইরানের বিরুদ্ধে কাজ করে চলছে। পশ্চিমারা ৪৩ বছর ধরে ইরান সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে আছে। তারা মনে করছে, ইরান একটি দুর্বল দেশ, এখানে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে। এই অস্থিরতার পেছনেও কলকাঠি নাড়ছে তারা।