ইরাকের কুর্দি অঞ্চলে কুর্দি যোদ্ধাদের অবস্থান লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরানের বিপ্লবী গার্ডস বাহিনী। এতে ১৩ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৫৮ জন।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, বুধবার এসব হামলার ঘটনা ঘটে। ইরানের চলমান অস্থিরতার পেছনে ইরানের ভিন্নমতাবলম্বী সশস্ত্র কুর্দিদের যোগসাজশ রয়েছে বলে দাবি করছে ইরান কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে, দেশটির এক কোটির বেশি কুর্দি জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করেন। এমন অভিযোগের পরই ওই হামলা চালানো হয়।
কুর্দিস্তানের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে ইরাকের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানায়, ইরাকের কুর্দিস্তানের এরবিল ও সুলাইমানিয়ার কাছে চালানো হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৫৮ জন।
ইরাকের কুর্দি সূত্রগুলো জানায়, বুধবার সকালে ইরাকের কুর্দিস্তানের সুলাইমানিয়ার কাছে ইরানি কুর্দিদের অন্তত ১০টি ঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালানো হয়। তবে হতাহতের বিষয়ে সূত্রগুলো বিস্তারিত কিছু বলেনি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড জানিয়েছে, এরবিলের দিকে যাওয়ার পথে বুধবার ইরানের একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে তাদের বাহিনী। ড্রোনটি ওই অঞ্চলে থাকা মার্কিন বাহিনীর জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছিল বলে দাবি করেছে সেন্ট্রাল কমান্ড।
এক বিবৃতিতে বাহিনীর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, হামলার কারণে মার্কিন বাহিনীর কেউ হতাহত হননি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরঞ্জামেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ইরানের কুর্দি বিরোধী দল কোমালার একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য রয়টার্সকে বলেছেন, তাদের কয়েকটি কার্যালয়েও হামলা চালানো হয়েছে।
কুর্দি শহর কোয়ের মেয়র তারিক হায়দারি বলেছেন, হামলায় অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ জন। আহতদের কয়েকজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত এরবিলের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
হামলার পর ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ওই অঞ্চলের কথিত সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে তারা হামলা অব্যাহত রাখবে।
অন্যদিকে, হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইরাক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইরাকি ভূখণ্ডে হামলার বিষয়ে আপত্তি জানাতে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে মনে করে ইরাক।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে ইরানে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২২ বছর বয়সী এই তরুণী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কুর্দি শহর সাকেজের বাসিন্দা।
ঠিকমতো হিজাব না পরার অভিযোগে রাজধানী তেহরানে মাহসাকে গ্রেপ্তার করে ইরানের নীতি পুলিশ। তিন দিন সংজ্ঞাহীন থাকার পর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
তার মৃত্যুকে ঘিরে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭৬ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল ইরান হিউম্যান রাইটস। এছাড়া ইরানজুড়ে ৮০টিরও বেশি শহরে চলা বিক্ষোভ থেকে হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।