ইরানে হিজাববিরোধী বিক্ষোভস্থলের মাঝে মাথার খোলা চুল বাঁধার যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল হাদিস নাজাফি নামের এক তরুণীর, তাকে গুলি করে হত্যা করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এই তরুণীর জানাজার একটি ভিডিও অনলাইনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে, যেখানে আন্দোলনকারী লোকজনকে তার কবরের সামনে বিলাপ করতে দেখা যায়।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইরানের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী হাদিস নাজাফি নামের ওই তরুণীকে তলপেট, গলা, বুক এবং হাতে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হিজাববিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে। হিজাব না পরার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মাশা আমিনি নামের ২২ বছর বয়সী এক তরুণী পুলিশি হেফাজতে মারা যাওয়ার পর দেশটিতে হিজাববিরোধী বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় কয়েকডজন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে কট্টর রক্ষণশীল এই দেশটিতে।
মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে চলতি সপ্তাহে লন্ডনে বিক্ষোভ করেছেন শত শত মানুষ। আমিনি গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মারা যান।
মেডিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশের ওই তরুণীর মাথায় বড় ধরনের জখম রয়েছে। গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কোমায় যেতে হয় তাকে। যদিও ইরানি কর্তৃপক্ষ বলছে, আকস্মিক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন মাশা আমিনি, বলছে ইউরো নিউজ।
১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানে আইন অনুযায়ী নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে দেশটিতে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের কাছে এই আইনটি নিয়ে ক্ষোভ আছে। ইরানি নারীরা সাধারণত তাদের কানের আশপাশে ঢিলেঢালাভাবে স্কার্ফ পরেন বা ঘাড়ে ফেলে রাখেন।
ইউরো নিউজ বলছে, ১৯৮১ সালে ওই আইন বাস্তবায়ন করার পর ইরানজুড়ে ব্যাপক জনঅসন্তোষ ও বিক্ষোভ দেখা দেয়। যা পরবর্তীতে বিক্ষিপ্তভাবে চলতে থাকে।
দেশটির আইনজীবী মোহাম্মদ হোসর বলেন, ক্ষমতাসীনরা বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এটাই প্রমাণ করতে চায় যে, তারা মাশা আমিনির ওপর কোনও ধরনের সহিংসতা চালায়নি। এটার কোনও মানে হয় না।
তিনি বলেন, তারা (ইরানি কর্তৃপক্ষ) টিভিতে আসছে এবং বলছে যে, জিম্মায় থাকাকালীন মাশা আমিনিকে কেউ স্পর্শ পর্যন্ত করেনি। কিন্তু একই সময়ে তারা রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।
মাশা আমিনি হত্যাকাণ্ডের পর ইরানে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ-প্রতিবাদে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই ঘটেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস দমন ও কিছু ক্ষেত্রে তাজা গোলাবারুদ ব্যবহারের কারণে। এছাড়া দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী এখন পর্যন্ত শত শত বিক্ষোভকারীকে আটকও করেছে।