রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের চারটি অঞ্চলে বিতর্কিত গণভোট সম্পন্ন হয়েছে। অঞ্চলগুলোতে মস্কোর নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গণভোটে রাশিয়ার অংশ হওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। অন্যদিকে কথিত এই ভোটাভুটিকে অবৈধ ও জবরদস্তিমূলক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ডনেস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিজ্জিয়া ও খেরসনে তড়িঘড়ি করে এই গণভোটের আয়োজন করা হয়। এই চারটি এলাকা সম্মিলিতভাবে ইউক্রেনের ১৫ শতাংশ ভূখণ্ড। এসব এলাকার প্রায় ৪০ লাখ মানুষ গণভোটে অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন।
চারদিন ধরে চলা গণভোটের অংশ হিসেবে নির্বাচনি কর্মকর্তারা সেনাসদস্যদের প্রহরায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ব্যালট বাক্স নিয়ে যান। শুধু মঙ্গলবার ভোটকেন্দ্র খোলা হয়। তবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকায় গণভোটের এই প্রক্রিয়া কোনও স্বতন্ত্র গোষ্ঠী পর্যবেক্ষণ করেনি।
গণভোট সম্পন্ন হওয়া চারটি অঞ্চলের সবগুলোতেই সবকটি ব্যালট গণনা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
লুহানস্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানকার ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। জাপোরিজ্জিয়ায় মস্কোর নিযুক্ত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেখানে এই হার ৯৩ দশমিক ১ শতাংশ। খেরসনের ভোটিং কমিটির প্রধান জানিয়েছেন, সেখানকার ৮৭ শতাংশেরও বেশি মানুষ রাশিয়ার অংশ হওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে।
স্বঘোষিত ডনেস্ক পিপলস রিপাবলিকের প্রধান ডেনিস পুশিলিন বলেছেন, অঞ্চলটির ৯৯ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, শুক্রবার রাশিয়ার পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে এই চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ায় একীভূত করার ঘোষণা দিতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপত্যকাকে একই ধরনের গণভোটের পর রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন পুতিন।
রাশিয়া যদি ডনেস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিজ্জিয়া ও খেরসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ দেশের অংশ ঘোষণা করে তাহলে চলমান যুদ্ধ আরও বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছাতে পারে। কারণ ইউক্রেন যদি তাদের ভূখণ্ড মুক্ত করতে পাল্টা আক্রমণ চালায় তাহলে রাশিয়া এটিকে নিজেদের সার্বভৌম ভূখণ্ডে আক্রমণ হিসেবে দাবি করতে পারবে।
এই গণভোটের প্রতিক্রিয়ায় প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত রুশ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে বলেছে, রাশিয়া যদি এসব ভূখণ্ডকে নিজের করে নেয় তাহলে মস্কোর বিরুদ্ধে আরও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করবে ওয়াশিংটন।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেভা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য। তিনি বলেছেন, কথিত এই ভোটাভুটির ফলে তার দেশের সামরিক পরিকল্পনায় কোনও পরিবর্তন আসবে না।
পুতিন এই গণভোটের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ইউক্রেনে অবস্থানরত জাতিগতভাবে ‘রাশান ও রুশ ভাষাভাষীদের ওপর নিপীড়ন’ বন্ধ করতেই এই গণভোটের আয়োজন করা হয়েছে। এ ধরনের নিপীড়নের অভিযোগ অবশ্য বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে কিয়েভ।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে কথিত সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এই যুদ্ধে ইতোমধ্যেই উভয় পক্ষের কয়েক হাজার সেনা ও বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহর। শরণার্থীর জীবন বেছে নিয়েছে দেশটির ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ।