হিজাব ঠিকমতো না পরার অভিযোগে ইরানে পুলিশি হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় দেশটির “নৈতিকতা পুলিশ” এর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কানাডা।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) কানাডার অটোয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
তিনি বলেন, “আমরা ইরানের তথাকথিত নৈতিকতা পুলিশসহ কয়েক ডজন ব্যক্তি ও সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করবো।”
জাস্টিন ট্রুডো বলেন, “কানাডা সারাবিশ্বের মানুষের কাছে এই দাবি করে যে, ইরান সরকার তাদের জনগণের কথা শুনবে, তাদের স্বাধীনতা ও অধিকারের প্রশ্নে দমন-পীড়ন করবে না। সমস্ত ইরানিদের স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে দিতে হবে। চলাফেরা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে।”
প্রসঙ্গত গত ১৩ সেপ্টেম্বর পোশাকবিধি না মানার অভিযোগে মাহসা আমিনিকে তেহরান থেকে গ্রেপ্তার করেছিল ইরানের নৈতিকতা পুলিশ। তিন দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
তার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
এরপর শুরু হয় বিক্ষোভ। ১৯৭৯ সালে দেশটিতে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে নারীর পোশাক ইস্যুতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ এটি।
ইরানে ১৯৭৯ সালের ওই বিপ্লবের পরই নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। দেশটির ধর্মীয় শাসকদের কাছে নারীদের জন্য এটি “অতিক্রম-অযোগ্য সীমারেখা”। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।
নারীর জন্য কঠোর পোশাকবিধি দেখভালের দায়িত্বে আছে ইরানের “নৈতিকতা পুলিশ” ইউনিট।
নিবর্তনমূলক ভূমিকার কারণে এই ইউনিটের প্রতি দেশটির সচেতন জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই নাখোশ। মাহসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে “নৈতিকতা পুলিশ”র বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। পাশাপাশি দেশটির শাসকগোষ্ঠীর প্রতিও বিপুলসংখ্যক মানুষের অনাস্থার প্রকাশ ঘটেছে এবার।
অবশ্য এই বিক্ষোভ দমাতে ইরান সরকার “কঠোর” অবস্থানে রয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে একাধিকবার বলেছেন, ইরানের চলমান বিক্ষোভ অগ্রহণযোগ্য।
দেশটি সোমবার তেহরানে নিযুক্ত নরওয়ে ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমমে চলমান বিক্ষোভ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় এবং নরওয়ের সংসদের প্রেসিডেন্ট চলমান বিক্ষোভ নিয়ে মন্তব্য করায় তাদের তলব করা হয়।