আকিমন বিবির কোমরে কদিন ধরে বড় দরদ। ইদানীং উঠতে বসতে তার বড়ই কষ্ট। আগের মত ঝনঝনায়ে চলার দিন যেন শেষ। অথচ এখনো সে নাতি-নাতনির মুখ দেখেনি। এ নিয়ে তার আক্ষেপের অন্ত নেই। কিন্তু যারে নিয়ে আক্ষেপ তার দেখ সে দিকিন কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। শরাফতের বৌ যেন পৃথিবীর সেরা ত্যাঁদড়। কচি বয়সে তার জিভের ডগায় লোভ চকচক করলেও সে এক রকম ছিল ভালো; অন্ততঃ দুই কথা বললে মাটিতে চোখ গেঁথে থাকতো। কিন্তু এখন! আকিমনের শরীর যত ঢিলা হয়ে পড়ছে, বৌয়ের খলবলানি যেন ততই বাড়ছে। মাথায় ঘোমটা আছে কি নেই সে হুশ নেই, ফাঁক পেলেই চলে যাবে পাড়া বেড়াতে। মিঞাবাড়ির বৌয়েরা যখন-তখন পাড়া-পরতিবেশির বাড়ি যাতায়াত করে না – সে কথা এই বান্দর বৌ শুনলে তো? এ নিয়ে কোথাও নালিশ করে সুবিধে করার কপাল কি না আকিমনের! রমিজ মিঞাকে এ নিয়ে কিছু বললে সে হু-হাঁও করে না। আর শরাফতরে বললে … হাহ্! তেমন পুত কি না পেটে ধরেছে আকিমন বিবি! বৌয়ের পেছন পেছন ছোঁক ছোঁক করে বেড়ানো ছাড়া আর কী কাজ আছে শরাফতের? দিন নেই, রাত নেই…। আগে তবু বৌ কিছু বুঝতো না, শরাফত তাই বৌয়ের পরে বিরক্ত ছিল। কিন্তু এখন? বছর পনেরো কি সতেরো বয়স এখন হিরণবালার। এখন যেন সে শরাফতের চেয়েও বেশি নির্লজ্জ্ব!
তবু আকিমন রাশ ছাড়ে না। বৌয়েরে শাসনে রাখার জন্য পুত্ররে উস্কায়। বৌয়ের বেহায়াপনার দৃষ্টান্ত সবিস্তার বয়ান শেষে পত্নীর প্রতি পতির দায়িত্ব বিষয়ে পুত্ররে কোরআন-হাদিস উল্লেখ করে উপদেশ দেয়। পত্নীর কী কী আচরণের জন্য পতিকে হাশরের দিনে জবাবদিহি করতে হবে, ময়-মুরব্বীর মুখে বহুবার শোনা সেসব কথা বিস্তারিত জানায়ে, নিজের অকালমৃত্যুর সম্ভাবনা ব্যক্ত করে, মিঞা বংশে রমিজ মিঞার রক্তধারার বিলুপ্তি আশঙ্কা করতে করতে যেদিন সে কাঁদতে থাকে, তার পরদিনই দেখা যায় শরাফত মিঞা গঞ্জের হাট করে বাড়ি ফিরছে – হাতে তার কাগজে মোড়া ছাপা শাড়ি, বেলোয়ারি চুড়ি ও আলতার শিশি। আকিমন বিবি নির্বাক। এমন বৌয়ের ভেড়াও কেউ হয়!
হিরণবালার জন্য চুলের দড়ি বানায় রওজান বিবি। ইদানীং অল্প আলোয় চোখে সে তেমন দেখে না। তবু হাতড়ে হাতড়ে মাচার তলার কোন হাড়ি কি কোলার গহ্বর থেকে টেনে বের করে চল্লিশ বছর আগে তার স্বামীর শখ করে কেনা নীল জমিনের ঢাকাই শাড়ির এক টুকরো। তখন বড় সুদিন ছিল। এইসব দুনিয়া জোড়া ‘কাইজে-নাড়াইয়ের’ কথা কেউ শোনেনি। মাত্র দেড় টাকায় তখন এমন রঙ-বুনটের ঢাকাই শাড়ি মিলত যা দেখতে পাড়া ঝেঁটিয়ে বৌ-ঝির দল হাজির হতো। সেই দিনে পৌনে দুই টাকায় কেনা এই শাড়ি।
শাড়ির জরি পাড় কেটে তা থেকে সুতো খুলে দড়ি বানাবার কাজটা সহজ নয়, সময়সাপেক্ষ। কিন্তু রওজান বিবির হাতে এখন অঢেল সময়। সেই যে ঝাড়মনি লতা তুলতে বেমক্কা নাবালে গড়ায়ে পড়ে তার পা ভাঙ্গছিল, সেই পা আর ঠিকমত জোড়া লাগেনি। কবিরাজ ঠিকই হাড় জোড়ের ব্যবস্থা করেছিল কিন্তু ঝাড়া তিন মাস বাঁশের চটায় পা বেঁধে শুয়ে থেকে শেষে যেদিন পা খুলল, সেদিন থেকে তার খুঁড়ায়ে চলার দিন শুরু। তা এ বয়সে এমনিতেও বাতব্যথা সহ আরো নানা ব্যথা-বেদনায় শরীর টনটন করে। তার উপর পায়ের হাড় বাঁকা হয়ে জোড়া লাগার যন্ত্রণা; পাঁচ-দশ পা হাঁটলেই কেমন এক ব্যথা চিনচিনায়ে উঠতে শুরু করে। রওজান বিবি তাই কোথাও তেমন যায় না। বতরের মওসুম ছাড়া তার ঘর আর উঠোনের জগতে করবার মতন কোন কাজও তেমন নেই। তাই নাতবৌটার জন্য চুলের দড়ি বানায়ে সেই দড়িতে তার কোমর ছাপানো লম্বা চুলে বিনুনি বেঁধে দিয়ে তৃপ্তি।
ফরজ গোসলটা হিরণবালাকে সারতে হয় ফজরের ওক্তে। এমন না যে, সে এখনই পাঁচ ওক্ত নামাজ ধরছে। সে কেন, ওক্ত মেপে নামাজ তার শাশুড়িরই পড়া হয় না। ধেনো মোল্লা গাঁয়ের মেয়ে আকিমন বিবি। তার বাপের দেশে পুরুষদের মসজিদে যাওয়া-আসা নিয়মিত-অনিয়মিত হলেও নামাজের চল আছে। কিন্তু নারীদের নামাজের ব্যাপারে কী এক ঘোর উদাসীনতা। এ নিয়ে তাদেরকে ভিন গাঁয়ের কোন আত্মীয়া প্রশ্ন করলে তারা লাজুক হেসে বলে থাকে, নামাজ তো পড়িই। কাপুড় সাফ নেই, তাই এই কদ্দিন হয়……। আসলে সে হয়তো নামাজ পড়ে রমজানের প্রথম দুই-চার দিন দুই-চার ওক্ত। তারপর এ ব্যাপারে আলসেমি আর উদাসীনতা আর সাংসারিক নানা কাজের চাপ ও অজুহাতের স্রোতে ডুবে যায় তাদের নামাজি বনার ইচ্ছের তাগিদ। এসব বেনামাজিদের পারলৌকিক মুক্তি ও মঙ্গলের দায় স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলেছে কিছু মোল্লা। ধানের মরসুমে গ্রামের বাড়ি বাড়ি থেকে ধান তুলে বদলে ওসব বাড়ির জেনানাদের নামাজটা পড়ে দেবার দায়িত্ব নিয়েছে তারা। আউশ-আমন দুই মওসুমেই ধান তোলা হয়। যারা আউশে দিতে পারে না তারা আমনে দিতে চেষ্টা করে। নামি বন্যায় আমন নষ্ট হলে তারা আউশের ভরসায় থাকে। পুরুষমহল এসব মোল্লাদের তত পছন্দ না করলেও এরা এলে বাড়ির মেয়েরা বেশ একটু উৎসুক হয়ে ওঠে। তারা শুধু ধান নিয়ে নামাজের কাফ্ফারা আদায়ের আশ্বাসই দেয় না, কত কত পুঁথি মুখস্ত শোনায়। ইউসুফ-জুলেখা, আইয়ুব-রহিমার প্রেমকাহিনী থেকে শুরু করে ইব্রাহিম-নমরূদ, মুসা-ফেরাউন দ্ব›দ্ব, ইব্রাহিম-ইসমাইলের কোরবানী, কারবালার করুণ কাহিনী – কী তারা না শোনাতে পারে হৃদয়গ্রাহী করে? এমন গ্রামের মেয়ে যে আকিমন বিবি, সেও কিন্তু ফরজ গোসলের ব্যাপারে ভারি কড়ক্কড়। তার কঠিন নির্দেশ মানতে যেয়ে হিরণবালার চুল সারাদিনই থাকে ভেজা। ফরজ গোসল শেষে চুল খোলা রেখে শুকোনোর সুযোগ বৌ মানুষদের নেই। শ্বশুর-ভাসুর ঘরানার কেউ এই গোসলের সাক্ষী হলে সে বড় লজ্জা। একে তো মাথায় কাপড় দিয়ে থাকাটা বৌদের নিয়ম, তার উপর এই গোসলের প্রমাণ লুকায়ে চলার চেষ্টা। এর দরুন হিরণবালাদের ভেজা চুল দিনের পর দিন হাত খোঁপা করা থেকে রোদ-বাতাসের অভাবে জলগিঁট পড়ে ভেঙ্গে যেতে থাকে। তাই বেলা গড়ালেই রওজান বিবি তার নাতবৌয়ের চুল নিয়ে পড়ে।
অগোছালো হাতখোঁপাটা খুলে মেঘরঙা চুল পিঠময় মেলে তাতে বিলি কেটে কেটে চুল শুকোনো রওজান বিবির প্রায় নিত্যকার কাজ। এ কাজে তার কোন একঘেঁয়েমি নেই, ক্লান্তি নেই। বড় ভালবেসে সে তার নাতবৌয়ের চুল নাড়েচাড়ে, কাঠের কাঁকই দিয়ে আঁচড়ায়, শুকায়ে গেলে তাতে ঘানিভাঙ্গা নারকেল তেল মাখে। তারপর নকশাদার দড়ি দিয়ে খুব করে এঁটে কোন দিন খোঁপা বেঁধে দেয় তো কোন দিন গাঁথে বেনী।
দাদি-শাশুড়ির হাতে বাঁধা সেকেলে ঢঙের খোঁপা কিংবা বেনী হিরণবালার খুব যে পছন্দ তা হয়তো নয়। তার বাপের বাড়ির মেয়েরা কত কায়দায় চুল বাঁধে! মধুমতি নদী বয়ে আসা বেদে বহরের বেদেনীদের কাছ থেকে খোঁপার কাঁটা কেনে। কোন কোন ভাগ্যবতী তো কলকাতা ফেরত স্বামীর কাছ থেকে আদরের উপহার পায় বাহারি ঝুমকো দোলানো রূপোর কাঁটা। হিরণবালার মনে হয়, শুধু তার দাদি-শাশুড়ি নয়, এ গ্রামের কোন মেয়ে-বৌই আসলে ভালো করে চুল বাঁধতে জানে না। শখ-শৌখিনতা জিনিসটাও যেন এরা ঠিক বোঝে না। এই যে তার দাদি-শাশুড়ি রঙিন দড়ি বুনে সেই দড়িতে তার চুল বেঁধে দেয়, এদের চোখে এটাই বড় শৌখিনতা। তবে এসব নিয়ে সে কখনো তার পছন্দ-অপছন্দের কথা প্রকাশ করে না। আপনজনের শাসনের মত আদরের দানও মাথা পেতে নেয়াই নিয়ম বলে শুধু নয়, আরো কিছু বাস্তব কারণে হিরণবালা তার ভেতরকার যাবতীয় অপছন্দবোধকে নিঃশব্দে ঢোক গেলার মতই গিলে ফেলে। তার চুলের খোঁপা-বেনীর সৌন্দর্য-লালিত্য নিয়ে নিজ মুখে মত প্রকাশ করলে কার তরফ থেকে কী প্রতিক্রিয়া যে আসতে পারে সেই ভয়েই কি না, হিরণবালা মাথায় কাঠ হয়ে এঁটে থাকা সেকেলে খোঁপার পরে ঘোমটা তুলে তার নারীত্বকে ঐ খোঁপার মতই জড়সড়ভাবে উপভোগ করে কাল কাটায়।
তবে চুল বাঁধার সময়টা হিরণবালার বড় ভালো লাগে। যতক্ষণ রওজান বিবির হাত তার মাথায় ততক্ষণই যেন তার বুকের ভেতর এক পক্ষীছানার বোধ। আর মনের যত কথা বিনিময়ের সময় যেন এটাই। নিজের জীবনের বহু কথিত-অকথিত গল্প বুড়ি এ সময় নাতবৌরে শোনায়। সেসব গল্পে হিরণবালা বড় মজা পায়। বিশেষ করে বুড়ির দাম্পত্য পিরীতের গল্প। আহা! এক সময় তারাও নাকি ছিল হিরণবালা আর শরাফতের মতন! যৌবনের তাতানো রসে তারাও নাকি করতো টগবগ। হিরণবালা অবাক মানে। বুড়ির মাথায় কাঁচায়-পাকায় মেশানো চুল, বলিরেখা আঁকা গাল, আর পান-দোক্তার রসজারিত পাকা খেজুর রঙা দাঁতের দিকে চেয়ে তার কিছুতেই এটা বিশ্বাস হতে চায় না যে তার মতো দুটো আলতা রঙা পা, নিভাঁজ কোমর, নিটোল গাল এক কালে এই বুড়িরও ছিল।
‘ও দাদী, দাদা তুমারে এত্তো ভালোবাইসতো, তারে ছাড়া তুমি এত্তো বছর বাঁইচে আছো!’
রওজান বিবির বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়, ‘বাঁচে রে বু। দইন্যেয় কারুর অভাবে কিছু ঠেহে থাহে না। যদ্দিন পরাণের মানুষ কাছে তদ্দিন তারে ছাড়া মনে অয় দইনে আন্ধার। যহন পরাণের মানুষ দূরি চলে যায়, তহন পেত্যম পেত্যম খুব কষ্ট হলিউ এক সুময় সব সয়ে যায়।’
কথাটা হিরণবালারে ভাবায়ে তোলে। সত্যিই কি তাই? আসলেই কি সব সওয়া যায়? এই যে শরাফত মিঞার জন্য তার এট্টা টান ইদানীং শুধুই ঘন হয়ে উঠছে তা কি সে চোখের আড়াল হলি কমে যাবি? বালাই ষাট! শরাফত তার সুয়ামি। মাথার ছাতি। জীবন-যৌবন। সে কেন তার চোখির আড়াল হবি?
রাতে খাওয়ার পাট চোকে সন্ধ্যার পরেই। মাগরিবের নামাজ শেষ হলেই রেড়ির তেলের পিদিম জ্বালায়ে সবাই একসাথে খেতে বসে। দিনের বেলার খাওয়া-দাওয়া নারীরা পুরুষদের পরে করলেও রাতের বেলা এ নিয়ম মানা যায় না। তেল পুড়ায়ে দুই কিস্তিতে খাওয়ার বিলাসিতা করতে হলে গিরস্থ ফতুর। হিরণবালা তাই স্বামী-শ্বশুরের থেকে একটু দূরে শাশুড়ির গা ঘেঁষে পাশ ফিরে বসে আধো আলোয় ভাত খায়। পাশেই রওজান বিবি পিদিমের দিকে মুখ করে ক্ষীণ দৃষ্টিতে খুঁটে খুঁটে ইলিশের কাঁটা বাছে। শরাফত চায় ইলিশের ডিমের আধখানা বৌয়ের পাতে দিতে। কিন্তু মা আকিমন ঠিক মুখোমুখি বসে। অগত্যা কী আর করে শরাফত! ঠারেঠোরে বৌয়ের আধঘোমটা ঢাকা মুখে দুয়েকবার তাকিয়ে সানকি পরিষ্কার করে খেয়ে নীরবে উঠে যায়।
খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে এঁটো থাল-বাসন হাঁড়ি-কুড়ি সব মাচার নিচে সরায়ে রাখে আকিমন বিবি। ভাতের হাড়িতে পানি ঢেলে বেঁচে যাওয়া ভাতগুলো পান্তা করে রাখে। আগামীকাল রাঁধবার জন্য নুন-হলুদে জ্বাল করে রাখা মাছগুলো ভালো করে ঢেকে কড়াইটা সবচে উঁচু শিকেয় টাঙায়ে রাখে। এ শিকেটা শরাফত আর আকিমন ছাড়া এ বাড়ির কেউ নাগাল পায় না। ছোঁচা বিড়াল আর শরাফতের ছোঁচা বৌ – দুইয়েরেই তার সমান অবিশ্বাস; যদিও শরাফতের বৌয়ের ছোঁচামি বর্তমানে অনেকটা কমেছে।
হেঁসেলের পাট চুকলে যে যার স্থানে ঘুমাতে যায়। আকিমন বিবি এখন রমিজ মিঞার বিছানাতেই ঘুমায়। বৌ বড় হয়েছে। শরাফতের কাছ থেকে তারে আলাদা করে রাখার দরকার আর নেই। আবার বুঝায়ে-সুজায়ে ঠেলে-গুঁতায়ে শরাফতের ঘরে ঢুকাবার দিনও শেষ। ঠেলতে হতো বটে পোত্থম দিকে। বছর বারো বয়সে রজঃস্রাব হলে পর বাড়িতে বেশ একটা উৎসব উৎসব ভাব। রওজান বিবি খুশিতে হাসে – এ্যাদ্দিনে তার নাতির জুড়োবার জমিন তৈয়ার। পরতিবেশি মেয়েলোকেরা খবর জেনে হাসে – বহুকাল পর ফের গীত গাওয়া আর ক্ষীর খাওয়ার সুযোগ। শরাফত মনে মনে হাসে – তা তার তো হাসবারই সময়। কিন্তু বৌ হিরণবালার চোখে বাজপাখির ছায়া দেখা মুরগী ছানার বিহ্বলতা। আর আকিমন বিবির ভুরুতে ভাঁজ – এখন থেকে যে তার পেটের ছাওয়াল পর হওয়ার কাল শুরু! তা পেটের ছাওয়াল পর তো হইছেই। শরাফতের বৌ যত বড় হইচ্ছে শরাফত ততই বৌয়ের ন্যাওটা হইচ্ছে। রমিজ মিঞা কোনকালেই বৌ-ন্যাওটা ছিল না। বৌ ঘুমাতে আইলো কি আইলো না ঘুমপ্রিয় রমিজ মিঞার তাতে কী যাইতো-আইসতো! যুবতী বৌয়ের ডবকা শরীরের চেয়ে ঘুমের আলিঙ্গন তার অনেক কাঙ্ক্ষিত ছিল। এখনকার মতন হাঁপানির টানে সারারাত জেগে থাকার দশা তো তখন ছিল না রমিজ মিঞার। জেগে থাকতো তখন আকিমন বিবি। একটা ছোটোখাটো ঘুমন্ত পুরুষ শরীরের পাশে নিখুঁত গঠন দীর্ঘাঙ্গী এক নারী শরীর অপেক্ষা ও অভিমানে নীরবে ফুঁসতে থাকতো।
সেই ঝিমন্ত পৌরুষের নিভন্ত আগুনের জাতক যে শরাফত মিঞা সে কিনা এতটাই বাড়ন্ত তাগদ্ ধারণ করে যার ডরে তার ষোড়শী স্ত্রী কাঁপে। ভয়ের কাঁপন আর সুখের কাঁপনে মাখামাখি হিরণবালা ভয় পায় শরাফতের চন্ডাল মেজাজকে, তার আগ্রাসী প্রেমকে। রাতে কোন কারণে বিছানায় আসতে দেরি হলে স্বামী তার যা অবুঝের মত আচরণ করে! আর দিন-দুপুরে ঘরে ডাকলে লজ্জ্বা-দ্বিধা-ভয়ে হিরণবালা যদি তাতে সাড়া না দেয় তবে তার কপালের দুঃখ কেউ না ঠেকাতে পারে। আবার দুরুদুরু বুকে, শরম জড়ানো ভীরুভীরু পায়ে ঘরে ঢুকে খিল দিতেও ভয় – শাশুড়ি আকিমন জ্বলন্ত শ্যেন দৃষ্টি নিয়ে বন্ধ দুয়ার পানে চেয়ে বসে। এতসবের পরেও হিরণবালা ওরফে রাঙ্গা বড় সুখেই আছে। বড্ড নুন-ঝাল-টক মেশানো সে সুখ।
চলবে …