আফগানিস্তানের জনগণকে মানবিক সহায়তা হিসেবে ৩২৭ মিলিয়ন (৩২ কোটি ৭০ লাখ) ডলার প্রদান করবে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন শুক্রবার এক টুইটবার্তায় এই তথ্য জানিয়েছেন।
টুইটবার্তায় ব্লিনকেন বলেন, ‘আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া আফগান শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে ৩২৭ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হবে। আমরা এখনও আফগানিস্তানের সাধারণ জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
শুক্রবার আলাদাভাবে এ সম্পর্কিত একটি লিখিত বিবৃতিও প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব পপুলেশন, রেফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেশন এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসের ব্যুরো অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাসিসটেন্স এই ৩২৭ মিলিয়ন ডলারের তহবিলের যোগান দেবে।
আফগানিস্তান ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়া দরিদ্র আফগানদের জরুরি নগদ অর্থ সহায়তা, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসন, মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্যসেবা, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ প্রভৃতি খাতে এই তহবিলের অর্থ ব্যয় করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।
তবে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারকে এই অর্থ বণ্টনের দায়িত্বে রাখা হবে না। আফগানিস্তানে জাতিসংঘের শাখার মাধ্যমে সাধারণ আফগানদের মধ্যে এই অর্থ বণ্টন করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
২০১৯ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন তালেবান নেতারা। ট্রাম্পের সঙ্গে সেই সমঝোতায় তালেবান নেতারা আফগানিস্তানে সব রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর সমন্বয়ে একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক সরকার গঠনে সম্মত হয়েছিলেন। বিনিময়ে ট্রাম্প ২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়। নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হন ডেমোক্রেটির পার্টির নেতা জো বাইডেন। তিনি তার পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতিকে আরও এগিয়ে আনেন এবং ২০২১ সালের এপ্রিলে তিনি ঘোষণা দেন— আগস্ট শেষ হওয়ার আগেই আফগানিস্তানের সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
বাইডেন এই ঘোষণা দেওয়ার পরপরই আফগানিস্তান পুনর্দখলের অভিযানে নামে তালেবান বাহিনী এবং অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে মাত্র তিন মাসের মধ্যে ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখল করে।
দোহা চুক্তির প্রতিশ্রুতি রাখেননি তালেবান নেতারা। সেই চুক্তিতে অন্তর্ভূক্তিমূলক সরকার ও পার্লামেন্টে নারী জনপ্রতিনিধি রাখার কথা থাকলেও বাস্তবে তার উল্টোটাই করেছেন তারা। এমনকি তালেবান বাহিনী ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটির মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পড়া মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রম এখনও বন্ধ রয়েছে।
তালেবান বাহিনী প্রতিশ্রুতি না রাখায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমে জমা থাকা থাকা আফগানিস্তানের ৭০০ কোটি ডলারের রিজার্ভ জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, যতদিন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞা থাকবে— ততদিন এই অর্থ তুলতে পারবে না তালেবান গোষ্ঠী।
তবে গত ১৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আফগান জনগণের জীবনমান উন্নয়নে জব্দকৃত ৭০০ কোটি ডলারের মধ্যে ৩৫০ কোটি ডলার ছাড় দেওয়া হবে। তবে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এই অর্থ পাঠানো হলেও তালেবান সরকার সরাসরি তা তুলতে পারবে না।
যদি সেই অর্থ তুলতে হয়, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মনোনীত সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি ট্রাস্ট ফাণ্ডে আবেদন করতে হবে তালেবানকে।