টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে জাতিসংঘকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার স্থানীয় বিকেলে (বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে) নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। বরাবরের মতো এবারও তিনি বাংলায় ভাষণ দেন। এটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে শেখ হাসিনার ১৯তম ভাষণ।
রোহিঙ্গা ইস্যুর দিকে জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এখন আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করব মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দিকে। গত মাসে ২০১৭ সালে স্বদেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে তাদের গণহারে বাংলাদেশে প্রবেশের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরিতে দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় এবং জাতিসংঘসহ অন্য অংশীজনদের নিয়ে আলোচনা সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠানো যায়নি। মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে আরও দুরূহ করে তুলেছে। আশা করি, এ বিষয়ে জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’
দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। তাদের প্রত্যাবাসনের অনিশ্চয়তা সর্বস্তরে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করেছে। মানবপাচার ও মাদক চোরাচালানসহ আন্তঃসীমান্তে অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
‘এমনকি এ পরিস্থিতি উগ্রবাদকেও ইন্ধন দিতে পারে। এ সংকট প্রলম্বিত হতে থাকলে তা এই উপমহাদেশসহ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে অভিবাসীদের সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘‘অভিবাসীরা এখনও তাদের অভিবাসনযাত্রায় অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। তারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে আমাদের অবশ্যই বিশ্বব্যাপী অংশীদারি এবং সংহতি বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন মাইগ্রেশন’ এবং এর অগ্রগতি ঘোষণা আমাদের একটি চমৎকার রোডম্যাপ দিয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে, এসব জটিল বৈশ্বিক সংকট অনেক উন্নয়নশীল দেশের বিগত কয়েক দশকের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে স্থবির করে দিচ্ছে। এই মুহূর্তে ২০৩০-এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা তাদের অনেকের কাছেই একটি অধরা স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং কৃষিসহ মারাত্মভাবে প্রভাবিত ক্ষেত্রগুলোতে সুনির্দিষ্ট সহায়তা প্রয়োজন। এখন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।’
বিশ্বকে এখনই জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি থেকে বের করে আনার ওপর তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব। জলবায়ু নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়া আর ভাঙার একটি দুষ্টচক্র আমরা অতীতে দেখেছি। আমাদের এখনই এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের সঙ্গে এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অসংখ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি থাকাকালে আমরা ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রস্পারিটি প্ল্যান’ গ্রহণ করি, যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে ঝুঁকির পথ থেকে জলবায়ু সহনশীলতা ও জলবায়ু সমৃদ্ধির টেকসই পথের দিকে নিয়ে যাওয়া।’’