প্রেম
আঠারো পূর্ণ হতে তখনো পাঁচমাস বাকি,
প্রিন্ট তোলা ফুলহাতা-
রঙিন তৈরি ছাপা জামা
বাড়ির শাসনে ছাড়া হয়নি।
বুকে যৌবনের রঙিন পালক,
খাঁচার পাঁজরে এসে ঝাপটায়-
প্রতিদিন একার ঘরে।
প্রথম দেখা লাল ঠোঁটের আভা,
কল্পনাতে সারা শরীর-
ভালোলাগার ঢেউ তোলে।
বোতাম আঁটা বুকে সুপ্ত প্রেম,
অসমান প্রাচীরের গা বেয়ে উঠে-
বাস্তবে উস্কে দেবার খেলায়,
রোজ মাতিয়ে তোলার চেষ্টা করে।
দুরন্ত পথ
বাসের জানলা দিয়ে দেখা,
চেনা শহরটা।
ঝাঁকুনির চোটে চোখের সামনে,
দুলে উঠছে জনপথ।
মুহূর্তে সব দৃশ্য গেঁথে যাচ্ছে,
মনের গভীর কোটরে।
দরজার সামনে কন্ডাক্টরের চিৎকার,
ভাবনার মূল স্রোতে ঘুরপাকের আনন্দ
এক টুকরো ঢিল ছুঁড়ে-
সজাগ থাকার হুমকি দেয়।
কুড়ি বছর বাদ
গোঁফ ওঠা সেদিনের ছেলেটা,
আজকের যুবক।
কাঁধে রংচটা ব্যাগ ঝুলিয়ে,
মাথা নামিয়ে হাঁটতে থাকা,
কলেজ ক্যাম্পাসের নবীন ছাত্র।
চোখে পড়া এক যুগেরও বেশি,
সারল্যে মাখা অনামী প্রেমিক-
আজ প্রাপ্ত বয়স্ক।
পাল্টেছে চলার মতিগতি,
সাধারণ চটির বদলে
চকচকে পালিশ বুট।
তবু, কলারের খাঁজ থেকে
আজো বেরিয়ে আসছে-
পুরানো প্রেমিক সত্ত্বার গন্ধ।
রাত জাগা চাঁদ
পূর্ণ চাঁদ মাথার ওপর,
একদৃষ্টিতে পাহারা দিচ্ছে।
কাচের জানালাতে পড়া,
সমস্ত মায়ার আলো-
ঘর বয়ে আসা জোৎস্নার আল্পনা
কারোর গায়ে ও সারা শরীরে আঁকে।
নিশাচর ডেকে যায়,
গভীর রাতকে জাগিয়ে রাখতে।
ঘুমন্ত শহর সবে চোখ বুজেছে,
বিশ্রামের হাত ধরে।
ভোর হতে তখনো বাকি,
এক প্রহর।
তবু বেঁচে থাকা
ঘুমে আচ্ছন্ন,
সারা পাড়ার পরিবার।
অন্ধকার নিজের দরজা খুলেছে,
প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যার পর রাতে।
মিটিমিটি উজ্জ্বল তারাদের দেশে,
সহজ পৃথিবীটা ঢাকা পড়েছে।
অকাল বসন্তের ঝড়ে,
বেনো হাওয়া পাল তুলে-
শনশন শব্দ করে বয়ে চলেছে।
এরপরেও বেঁচে থাকার আশা নিয়ে,
প্রতিপদে বাঁচার লড়াই।
রাস্তার একপাশে পড়ে থাকা,
অভাগী মেয়েটা ছলছল চোখে-
রাতের গভীরতা মাপছে।
বৃষ্টির গন্ধ
মুষলধারে বৃষ্টির জল গড়িয়ে এসে,
শুকনো মাটি ভিজিয়ে দিয়ে-
কাদাতে একাকার হয়েছে।
দুরন্ত মন ভোলা দুই পাখি,
দুজোড়া ডানা ভিজিয়ে
পরস্পরের গা ঘেঁষে বসে-
উষ্ণতা অনুভবের সঙ্গী।
বৃষ্টির সাথে ঘোলাটে রং,
আজ এক দলে নাম লিখিয়েছে।
গাছেদের মাথা দোলানোর ছলে,
একে অপরকে জড়িয়ে-
সবুজ চিরকুটে এঁকেছে,
বৃষ্টি পড়ার গুঁড়ি গুঁড়ি ফোঁটা।