রাশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বাংলাদেশে পরিশোধন করা কঠিন ও অলাভজনক। রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে নমুনা হিসেবে নিয়ে আসা ৫০ লিটার অপরিশোধিত তেল পরীক্ষার পর এই তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার নমুনা তেল পরীক্ষার প্রতিবেদন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনে (বিপিসি) জমা দিয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড।
ইস্টার্ন রিফাইনারির মহাব্যবস্থাপক লোকমান এ তথ্য গনমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার নমুনা তেল পরীক্ষায় আমরা এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলেছিলাম। বিভিন্ন কারণে সময়টা ২ সপ্তাহের বেশি লেগেছে। মঙ্গলবার বিপিসিতে পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।’
তবে প্রতিবেদনে কী উল্লেখ করা হয়েছে, সেই বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি তিনি।
১ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল চট্টগ্রামে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে নিয়ে আাসার পর পরীক্ষা- নিরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করতে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ইস্টার্ন রিফাইনারির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) রায়হান আহম্মদকে ওই কমিটির প্রধান করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কমিটির এক সদস্য গনমাধ্যমে বলেন, ‘ক্রুড থেকে আমাদের মূল উৎপাদ ডিজেল। কিন্তু রাশিয়ান এই ক্রুডে ডিজেল ও কেরোসিন মিলিয়ে আছে ৩৪ শতাংশ। আমরা বর্তমানে অন্যান্য যে ক্রুড ব্যবহার করি, সেসবে ডিজেলের পরিমাণ ৩৯ ও ৪২ শতাংশ। আর ক্রুডের তিনটা স্থর থাকে, আমরা সাধারণত উপরের দুটো স্থর বেশি ব্যবহার করি, অর্থাৎ ওই দুটো স্তর দিয়ে কাজ হয়ে যায়। কিন্তু রাশিয়ান ক্রুড বেশি ভারী, অর্ধেক বা তার বেশি নিচের স্তরে পড়ে থাকে। অর্থাৎ ওটাই ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু নিচের স্তর ব্যবহার করা কঠিন, লম্বা প্রসেস।’
ইস্টার্ন রিফাইনারির ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে অর্থাৎ বাংলাদেশে এটা পরিশোধন করা সম্ভব না। আমরা রিপোর্টে জানিয়ে দিয়েছি। এখন ওনারা সিদ্ধান্ত নেবেন। এটা কোনোভাবেই পসিবল না। রাশিয়ান ক্রুডের স্ট্রাকচার অনুযায়ী, পরিশোধনের ওইরকম যন্ত্রপাতি আমাদের নেই। মডিফাই করেও সম্ভব না।’
অতিরিক্ত সালফারের যে বিষয়টা এসেছিল, তা নিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রাশিয়ান ক্রুডের সঙ্গে সালফারের কোনো বিষয় বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট না। তাই এই ক্রুডের সঙ্গে সালফারের কোনো বিষয় আসছে না। মূলত বাহির থেকে ডিজেল আনার সময় সালফারের পরিমাণ কম বেশি নিয়ে কথা হচ্ছে।’
রাশিয়ান তেল পরিশোধনে তুলনামূলক খরচও বেশি হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু দেশে পরিশোধন সম্ভব না, তাই খরচের বিষয়টাও সেভাবে আসছে না। তবে একাইন্ত খরচের কথা বললে রাশিয়ান ক্রুড পরিশোধনে খরচ বেশি লাগবে। কারণ এটি পরিশোধন কঠিন। তাই বর্তমান যে ক্রুড আমরা ব্যবহার করি তার চেয়ে রাশিয়ান ক্রুড অলাভজনক।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দাম বৃদ্ধির ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দেয়। সংকটময় পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার চীন, ভারতসহ কয়েকটি দেশ তেল নিচ্ছে রাশিয়া থেকে। গত মে মাসে বাংলাদেশকেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব দেয় দেশটি। তবে রুশ তেল দেশে ব্যবহার উপযোগী নয় বলে প্রথম দফায় তা নাকচ করে দেয় বাংলাদেশ।
পরবর্তীতে ফের রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রস্তাব পেলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে চায় সরকার। ২৪ আগস্ট রাশিয়ান ৫০ লিটার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নিয়ে আসা হয়। এর এক সপ্তাহ পর ১ সেপ্টেম্বর ৫ টি জারে করে তেলগুলো চট্টগ্রামে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পৌঁছে দেয় রাশিয়ান রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জারুবেনেফ জেএসসিরের দেশীয় এজেন্টের কর্মকর্তারা।
অপরিশোধিত তেল পরীক্ষা করে শুরুতে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বললেও ২ সপ্তাহের বেশি সময় নেয় ইস্টার্ন রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ সোমবার ঢাকায় বিপিসির উদ্দেশ্যে অপরিশোধিত তেল পরীক্ষার প্রতিবেদন পাঠায় ইস্টার্ন রিফাইনারি। বুধবার সেই প্রতিবেদন বিপিসিতে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ।