যিনি বেশ কয়েক বছর আগেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ছবি দেখার অভ্যাস গড়ে তোলার ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলন তাঁর স্বপ্নের জগৎ ‘আর্টভার্স’। যিনি মারিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরি ছেড়ে তাঁর ছবি আঁকার স্বপ্ন পূরণ করার ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলেছেন, যাঁর লেখা ‘গড: এনসিয়েন্ট এলিয়েন অর আ মিথ’ বইটি ভাল প্রশংসা পেয়েছে পাঠকমহলে। যিনি খুব ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকছেন এবং ভারতের নানান স্বনামধন্য প্রদর্শনীশালায় চিত্রপ্রদর্শনী করেছেন। সেই শুভঙ্কর সিংহের একক চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ফ্রিউইংস। এই একক চিত্রপ্রদর্শনী হচ্ছে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের ওয়েস্ট গ্যালারিতে। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর ২০২২ পর্যন্ত। বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা অবধি। শুধু এই প্রদর্শনীর জন্যই তিনি এঁকেছেন এক্সক্লুসিভ কিছু ছবি।
কলকাতার আকাডেমি অফ ফাইন আর্টস, আই সি সি আর, বিড়লা আকাডেমি অফ আর্ট অ্যান্ড কালচার, চিত্রকুট, গ্যালারি গোল্ড-র মতো বর্ধিষ্ণু প্রদর্শনীশালা ছাড়াও তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয়েছে নিউ দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ফাইন আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস সোসাইটি’তেও। গত আগস্ট মাসেই, ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রদর্শনীশালা মুম্বইয়ের জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছিল তাঁর আঁকা ছবি। সেখানে তুরস্ক থেকে আসা একজন বিজ্ঞান গবেষক কিনে নিয়ে যান তাঁর ছবি, ‘ব্রিথ অফ কসমস’। সেই ছবির থিম ছিল ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের ১২৯তম স্তোত্র নাসদীয় শুক্ত (সৃষ্টি-উৎপত্তি সূক্ত নামেও পরিচিত)। এটি বিশ্বতত্ত্ব ও ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তির ধারণার সঙ্গে জড়িত। বিশ্বসৃষ্টির বিষয়ে বিশেষ কিছু টিকা-সহ তথ্যপ্রদানের জন্য সূত্রটি ভারতীয় দার্শনিক ও পাশ্চাত্য দার্শনিক মহলে প্রসিদ্ধ। সেই তথ্যই পুরোপুরি ভাবে গ্রাফিক্যালি ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি তাঁর ক্যানভাসে।
এরকম ভাবে, তাঁর আঁকা প্রতিটি ছবির মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায় নানান ধরনের চোখ ধাঁধানো পৌরাণিক, বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক তথ্য, যেটা দর্শকদের সামনে থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে এবং ভাবতে বাধ্য করে। তাঁর বেশ কিছু ছবির বিষয় বৈদিক এবং আধ্যাতিক। প্রতিটি ছবিতেই থাকে এক অদ্ভুত অর্থ এবং রহস্য। তাঁর আঁকা বিশেষ কিছু ছবির নাম— ‘ইম্প্রেশন’, ‘চক্রব্যুহ’, ‘নির্বাণ’, ‘চক্র’, ‘ফ্যামাস ফ্লাইট অফ রিবার্থ’, ‘রেজুভিনাটেড জেনারেশন’, ‘আননোন এক্সপ্রেসন’, ‘হার্ট আন্ডার রেপাইর’, ‘ক্রুসিফিকেশন অফ ট্রুথ’, ‘ট্রাপড উইথিন ইনফাইনাইট’, ‘ভ্যাগ্রন্ট গডেস’ ইত্যাদি। তাঁর আঁকা ‘মেটেম্পসাইকোসিস’ ছবিটি জায়গা করে নিয়েছিলেন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার ধারাবাহিকের প্রবাদপ্রতিম সম্রাজ্ঞী লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের মনে এবং বাড়ির দেয়ালেও।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আল্টামিরা আর্ট গ্যালারির হাত ধরে শুরু হয়েছিল তাঁর জীবনের প্রথম প্রদর্শনী। সেই প্রদর্শনী থেকেই তাঁর আঁকা ‘ব্রোকেন রিফ্লেকশন’ কিনে নিয়ে যান রাশিয়ার একজন শিল্পপ্রেমী। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর চিত্রজগতে পথ চলা।
পেন্সিল স্কেচ, ওয়াটার কালার বা ওয়েল পেইন্টিং ছাড়া মুলত তাঁর বেশিরভাগ ছবিই মিক্সড মিডিয়া এবং অ্যাক্রিলিক রঙে বানানো। তিনি ‘সাময়িকী’র প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, আমি চাই শুধু আমার নয়, নতুন প্রজন্মের যে সব শিল্পীরা ছবি আঁকছেন, তাঁদের ছবিও সমান তালে বিক্রি হোক। তাই আমার প্রতিষ্ঠান ‘আর্টভার্স’-এর মূল লক্ষ্যই হল, ছবি আঁকো, ছবি দেখো এবং ছবি নিয়েই ভাবো। আমি নিজেও সারাক্ষণ ছবির মধ্যেই থাকি।