লন্ডনের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলের ভেতরে রাজা ষষ্ঠ জর্জ মেমোরিয়াল চ্যাপেল সমাধিতে সমাহিত করা হয়েছে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে। স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজপরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রানিকে সমাহিত করা হয়। রাজপরিবার তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে এ খবর জানিয়েছে। এ সময় কেবল ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। খবর বিবিসির।
ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেতে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর রানির পতাকাযুক্ত কফিন ইম্পেরিয়াল স্টেট ক্রাউন উইন্ডসর ক্যাসেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে তার বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ, তার মা রানি এলিজাবেথ এবং বোন রাজকুমারী মার্গারেটের সমাধির পাশে সমাহিত করা হয়। সমাহিত করার আগে সেখানে শেষবারের মতো প্রার্থনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানির প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিশ্বনেতারা। ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য, দেশটির রাজনৈতিক অভিজাত, সামরিক, বিচার বিভাগ ও দাতব্য সংস্থাগুলোর সদস্যরাও এতে অংশ নেন।
রানির কফিন রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে ধর্মীয় প্রার্থনার পর মরদেহ নেওয়া হয় সমাধির জন্য নির্ধারিত উইন্ডসর ক্যাসেলে। স্থানীয় সময় বেলা ১২টার পর ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে থেকে শোভাযাত্রা সহকারে কফিনটি ওয়েলিংটন আর্চের উদ্দেশে নেওয়া হয়। রাজা এবং রাজপরিবারের সদস্যরা কফিনের পেছনে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। গাড়িতে করে লাশ বহনকারী কফিনটি অনুসরণ করেন কুইন কনসোর্ট ক্যামেলিয়া, উইলিয়াম, হ্যারি, প্রিন্স এডওয়ার্ডের স্ত্রী কেট, মেগান, সোফি। ওয়েলিংটন আর্চ থেকে কফিন উইন্ডসর প্রাসাদে নেওয়া হয়। এ সময় শববাহী গাড়ি যাত্রা শুরু করলে রাজকীয় স্যালুটের পাশাপাশি বাজানো হয় জাতীয় সঙ্গীত। গাড়িযোগে উইন্ডসর প্রাসাদে পৌঁছান রাজপরিবারের সদস্যরা। সেখান থেকে কফিনটি উইন্ডসরে নিয়ে যাওয়া হয়। উইন্ডসরে শবযাত্রা শুরু হয় স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ১০ মিনিট থেকে। রাজা ও রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এতে অংশ নেন বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে। তিন মাইল (পাঁচ কিলোমিটার) এলাকাজুড়ে পুরো গমনপথজুড়ে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। বিগ বেন ঘণ্টাধ্বনি বাজতে থাকে শবযাত্রার পুরো সময় ধরে। রানির লাশ বহনকারী কফিন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পার হওয়ার সময় রাজকীয় স্যালুট দেওয়া হয়। বাকিংহাম প্যালেসের সামনে রাজার রক্ষীরা এই স্যালুট দেন।
সেন্ট জর্জ চ্যাপেলের নিচে শবযাত্রা থামে স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৫৩ মিনিটে। রানিকে চূড়ান্তভাবে শেষ বিদায় জানানো শুরু হয় বিকাল ৪টায়। প্রার্থনা পরিচালনা করেন রানির বিভিন্ন বাসস্থান সংলগ্ন গির্জাগুলোর যাজকরা। এছাড়া রানি যেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন সেসব দেশের প্রতিনিধিরাও এ ধর্মসভায় অংশগ্রহণ করেন।
পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ষষ্ঠ জর্জ মেমোরিয়াল চ্যাপেলে রানিকে চিরদিনের জন্য সমাহিত করা হয়। তার সমাধিতে লেখা ‘দ্বিতীয় এলিজাবেথ ১৯২৬-২০২২।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রানির দায়িত্ব পালন করা দ্বিতীয় এলিজাবেথ গত ৮ সেপ্টেম্বর ৯৬ বছর বয়সে মারা যান।