বৃষ্টি হয়ে গেছে
পুনরায় কাল রাতে বৃষ্টি হয়ে গেছে
জলের রোদন শব্দে ভিজে গেছে আমার বালিশ
আকাশের মুখ কিন্তু এখনও কালো
এত বৃষ্টি
চাতকের কি তৃষ্ণা মেটালো,
মনটাকে দুমড়ে মুচড়ে
ভিতর বাহির জুড়ে ওলট পালট
সারাজীবন ধরে যে অক্ষর মালায়
সাজিয়ে রেখেছি ঘর
প্রশাসন গ্রামের ওপাশে গড়ে তুলেছে শহর
সব গেছে ভেসে
আজ ফুলের বাগানে হারিয়ে গিয়েছে গুঞ্জরণ
আবেগের মধু আহরণ
চারপাশে বিষময় ভার
হার মানতে নইকো রাজি
আশায় আছি নবীন সূর্য উঠবে আবার।
মুখোশের মুখ
লোকে বলে সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকে
সমাজের ঘরে ঝোলে হরেক মুখোশ
মুখোশের দোকানে সওদা চলে সকাল সন্ধ্যায়।
কেউ আসে গাড়ি চেপে,কেউ পায়ে হেঁটে
লাল,নীল,হলুদ,সবুজ
লালের ভিতরে দেখি ভয়ংকর রূপ
নীলরঙা প্রতিবেশীর মুখ ফ্যাকাসে
হলুদে আত্মীয় মুখে রসকলি টান
আর সবুজে বন্ধুর মুখ পেটাচ্ছে ঢোলক
আশেপাশে থিকথিক লোক
ছিটকে বেরিয়ে আসি
ভাবি পাবো পরিত্রাণ,
বেরুবার পর কেউ নেই কারো সাথে
আমি হতবাক,মনে মনে বলি
হাওয়ার বিপরীতে চলতে চলতে
তুমি কি পারবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে?
রঙ্গমঞ্চ
জীবনের রঙ্গমঞ্চে ভালবাসা কতটা জমেছে
হাতে হাত রাখলেই বুঝি,খানিক গভীর
নিমেষে চলিষ্ণু শক্তি বোবা হয়ে যায়
আমরা তো শরণার্থী
কোন দেশে যেতে মানা নেই
বঙ্গে আজ শারদীয়া উতসব
শরতের বিশাল আঙিনা জুড়ে আনন্দের মেলা
সুনীল আকাশে পেঁজা তুলোর ভেলা
কাশফুল দোল খায় ভোরের বাতাসে।
কি উচ্ছ্বাস মেয়েটার
নিরক্ষরতার জামা গায়ে প্রশ্ন করে
মা আসছেন কখন?
অনাহার ক্লিষ্ট কঙ্কালসার শরীর
পিঠ জুড়ে চাবুকের ক্ষত
চারিদিকে আজ কুয়াশার পুরু স্তর
ওই যে দোলতা বাড়ি
ওখানে অসহায় অশীতিপর।
ঠিকানা
সেদিন রোদের ঠিকানা জানার ইচ্ছা জাগলে
সিঁড়ি ভেঙ্গে ছাদে উঠে দেখি
কোন শর্তের কথা না শুনে
প্রেম দরিয়ায় ভেসে
উঁকি দিচ্ছে পাড়া ঘরে সকালে বিকেলে
হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়াচ্ছে সারা উঠোন
অথবা বাগানে
গাছে চড়ছে,পাতার ফাঁক গলে ফলের দু’গালে
আদর জমাচ্ছে
কখনও আস্তাকুড়ে বেড়ালের গায়ে
চিমটি লাগিয়ে
সরে পড়ছে ফুটপাতের গরিবের গৃহে,
সন্ধ্যা নামলে আর খুঁজে পাই না ওকে
এ বিশ্ব ভুবন জুড়ে মনে বাজে শব্দের বাজনা
সারারাত থাকে কোনখানে
ওর আচরণ অবাক করে আমাকে।
স্বপ্ন
গোটা শরীর জোড়া দাবানল নেভাতে
জঙ্গল ছেড়ে যেমন পালায় পশুরা
জলাশয়ের সন্ধানে
মানুষ ছুটছে রোজ কাক ডাকা ভোরে
চা-এর দোকানে
সুখের পরশ পাবে বলে।
এভাবেই একশো দুশো বছর ধরে
সময়কে সাথে নিয়ে পথ পালটাতে পালটাতে
আলো আঁধারের বৃত্তের মধ্যে পাক খেতে খেতে
কলাপাতার সামনে হা অন্নে গরিব ছেলে মেয়ে
বহু প্রতিক্ষার পর নবীন দুপুরে
এক বালতি রোদ্দুর চালে নিজেদের
উদর পূরণের আজও স্বপ্ন দেখে।
স্কুল জীবন
আমার স্কুল জীবন কবে হবে শেষ
নিজেও জানি না
মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখা ভোরে জেগে ওঠে
মনের ঠিকানা
বই খাতা হাতে চলেছি কয়েকজন
বেহিসাবি মেধার খরচে
প্রতিদিন সেই অনন্ত শূন্যের দিকে
কাদামাখা মাঠে অনিমেষ ফুটবল
খড়ের গাদায় হারিয়ে যাওয়া ছুঁচের মতো
শীতের ক্রিকেটে শুভাশীষ এঁকেছিল
কয়েকটা শট
জীবনের আশ্চর্য স্পন্দন
অলৌকিক জয়ধ্বনি শুনে
হঠাৎ ফেরার।
এক পায়ে খাড়া জয়ন্তের মুখ ভার
রবীন স্যারের হাতে বেত
স্বরূপ অরুণের মুখে আলুকাবলি
গেটের সামনে নিত্য ওদের দেখা
হলঘরের ভিতরে ঝুলে ঢাকা
রামমোহন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল।
বাংলার মাষ্টারমশাই
মধুসূদন আওরাচ্ছেন,শ্রেণিকক্ষ প্রায় ফাঁকা
সোমলতা গোলাপের গন্ধে
স্মৃতি ভরা স্কুল বাড়ি আঁকা।