বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি নিজে সংগ্রাম করেছেন। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু আওয়ামী লীগের শাসনামলে হয়েছে।
প্রয়াত বৃটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন।
আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে তার সরকারের প্রতিশ্রুতি-সংক্রান্ত বিবিসি সাংবাদিক লরা কুনেসবার্গের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অবশ্যই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিষ্ঠার জন্যই আমার সংগ্রাম।”
রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রচারিত সাক্ষাৎকারে “নিখোঁজ” হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গুমের বিষয়ে অনেকেই অভিযোগ করতে পারেন, কিন্তু তা কতটা সত্য তা বিচার করতে হবে। এটা জানার আগে কেউ কোনো মন্তব্য করবেন না।”
“আপনার দেশে এবং অন্যান্য দেশে কত লোক নিখোঁজ হয়েছে”, বিবিসি’র সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনি বিচার করতে পারেন। এই সব বিষয় আমি মনে করি, প্রথমে আপনাকে (বিবেচনায়) নিতে হবে। সমস্ত তথ্য আপনার সংগ্রহ করা উচিত, তারপর আপনি অভিযুক্ত করতে পারেন।”
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, প্রকাশ্যে বা গোপনে সামরিক শাসকরা ক্ষমতায় ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, “১৯৭৫ সালে আমার বাবাকে (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) হত্যা করা হয়। তিনি তখন দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং আপনি জানেন যে আমার পুরো পরিবার, আমার মা, আমার তিন ভাই, দুই ভ্রাতৃবধূ, পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ মোট ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তারপর থেকে ২১ বছর ধরে, যে দেশটি বারবার অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করেছে। প্রায় ২০ বার অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে এবং প্রতিবার রক্তপাত হয়েছে।”
শেখ হসিনা বলেন, “সেখানে গণতন্ত্র ছিল না, গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না, তাই আমি আমার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছি।”
সামরিক শাসকরা দীর্ঘদিন ধরে দেশ শাসন করেছে, এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, “তারা দল গঠন করেছে এবং ভোটের জন্য তারা কখনো জনগণের কাছে যায়নি। তারা (সামরিক স্বৈরশাসক) সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে, প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য সবকিছু ব্যবহার করেছে।”
শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের কাছে কমনওয়েলথের গুরুত্ব কতটা, লরা কুনেসবার্গ জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অবশ্যই (এর মূল্য অনেক বেশি), যখন আমরা একসঙ্গে থাকি, সেখানে অনেক সুযোগ থাকে, তাই এটা ভালো এবং গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের একটা জায়গা আছে, যেখানে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করতে পারি। কিছু ধারণা গ্রহণ করতে পারি বা দেশ বা জনগণের জন্য কিছু ভালো কাজ করতে পারি। তাই আমার মনে হয় এটা ভালো।”
“একটি দেশ একা চলতে পারে না” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কারণ এটি একটি আন্তঃনির্ভর বিশ্ব। সুতরাং, এই পরিস্থিতিতে সদস্য দেশগুলোর জন্য কমনওয়েলথের অর্থ অনেক বড়। প্রতিটি দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে কারণ, অনেক দেশ আছে; উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ এবং দরিদ্র দেশ, ছোট দ্বীপ দেশ।”
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্মৃতি কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “১৯৬১ সালে যখন তিনি (রানি) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সফর করেছিলেন এবং তিনি তাকে (ব্যক্তিগতভাবে প্রথমবার) দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।”
তিনি বলেন, “তখন আমরা খুব ছোট এবং আমার বাবার (বঙ্গবন্ধুর) অফিসে গিয়েছিলাম। কারণ আমরা জানতাম যে তিনি সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলেন। তাই আমরা সবাই, পুরো পরিবার, দূরবীন নিয়ে জানালায় অপেক্ষা করেছি। ফলে আমরা তাকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছি।”
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রতিটি কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে রানির সঙ্গে দেখা করেছেন বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমি প্রায় সাতটি কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছি। প্রতিবারই আমি তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি।” প্রয়াত রানির আমন্ত্রণে তিনি অলিম্পিক গেমসে যোগ দিতে গিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রয়াত রানির সঙ্গে সুন্দর স্মৃতির কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তার (রানি) চমৎকার স্মৃতিশক্তি ছিল এবং তিনি আমাকে না দেখলে, হাসিনা কোথায় ছিলেন বলতেন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি যে এই বিশ্বের জন্য তিনি কেবল একজন রানিই ছিলেন না, তিনি একজন অত্যন্ত স্নেহময় ও মাতৃত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বও ছিলেন। যখনই আমি তার সঙ্গে দেখা করেছি, আমি এটি অনুভব করেছি।”