কলহ
অনেক কলহ এসে রোজ ভিড় করে
আমারই নিজস্ব কলহ সব
গর্জন করে, ঘুমায় না রাগে
রাত জেগে জেগে শূন্যে চেয়ে থাকে
শূন্যে কে আছে?
ওই তো শূন্য! নক্ষত্র জ্বলজ্বল করে
হয়তো হাওয়ার ট্রেন যায়
অদৃশ্য আত্মাগুলি প্যাসেঞ্জার তার
নিজেকে প্রবলভাবে খুন করতে চায়
কিন্তু করে না; ক্ষুব্ধ হয়ে ফেরে
অথচ কোথাও ফেরার নেই তার
নিজের ভেতরেই দেখে সব পথ অন্ধকার
শেষপর্যন্ত একটি হাত আর একটি হাতের কাছে শুশ্রূষা চায়
একটি পা আর একটি পায়ে পা ঘষে নেয়
দুটি ঠোট জিভ দিয়ে চাটে বারবার
ভেজা চোখ মুছে নেয় আত্মীয়ের মতো
কলহ বিরামহীন, মিলনেও দারুণ সংশয় ।
বিদ্বেষ
বিদ্বেষের ব্যবসা খুব ভালো চলছে
অল্পদিনেই যা হতে চাও তাই হবে
এটা তো পুরনো ব্যবসা
কেউ খন্ডন করতে পারবে না
তোমার নামাবলী ঠিকঠাক আছে
অভিনয়ও ভালো হচ্ছে এখন
আহা! তোমার মুখে ইষ্টনামও মানায় ভালো!
যোগ্যতা আছে বলে সবাই মেনে নিচ্ছে
রক্ত গড়িয়ে পড়াকে বলছ: জল
হত্যাকে বলছ: একটু সোজা করা গেল!
সবাই বিদ্বেষ নিয়ে যাচ্ছে দলে দলে
বিদ্বেষের বৃক্ষ বড় হচ্ছে
হাটে-বাজারে সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে বিদ্বেষের ফুল ফল।
শুনতে পাও নীলাঞ্জন?
নীলাঞ্জন আমাকে ডেকেছিল
শুধু একটা রাস্তার পার্থক্য বলে
ওপারে দাঁড়িয়ে ছিলাম
অনেককাল থেকেই আমরা
এপার ওপার হয়ে আছি
রাতের ব্ল্যাকবোর্ড অনেককিছু লিখে দিয়ে গেছে
দিনের হইচই আমাদের ডাক শুনতে দেয়নি
পার্থিব আর পরমার্থিক আজও রহস্যময়
একটা সোনালি বল গড়াতে গড়াতে চলে গেছে পাশ দিয়ে
একটা বিনম্র সাপ কৌতূহলে ছুটে গেছে
আমরা বিষাদ মস্তিষ্ক নিয়ে আজও একাকী
নীলাঞ্জন
সোনালি বলটা কি প্রত্ন যুগের কোনো ফল?
সাপটা কি আমাদেরই উন্মুখ প্রবৃত্তির দৌড়?
শুনতে পাও নীলাঞ্জন?
পার্থক্য শুধুই রাস্তার এপার ওপার!
আর্তনাদ
সনাতন আর্তনাদ আজও কেন ওঠে?
তোমাকে বহন করি ক্রোধে ও স্বপনে
সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়, উত্থান হয়
আমাদের মৃত্যু হয়, পুনরায় বাঁচি
দিনান্ত গ্রহণ করো স্মৃতি ও বিস্মৃতি
রাত্রির কাছে সব পোশাক খুলে শোব
কালো হরিণ কবে উজ্জীবিত করেছিল
শিকারের ভাষা?
মাংসে তবু রুচি ছিল একদিন
শিস দিয়েছিল প্রথম আগুন
পরস্পর সেঁকে নেওয়া আমাদের মন
উত্তুঙ্গ জলের কাছে পিপাসা-চুম্বন চেয়ে নিয়ে
এই তীর্থক্ষেত্র রচনা
আর্তনাদ তবুও বিরামহীন কাঁপে
ভাঙাগড়া পুলকে-পার্বণে পুরুষ ইচ্ছার স্রোত তার
দূরত্ব
হাত দিয়ে ওর হাত ধরি
মনকে কিছুতেই ধরতে পারি না
আমার দিন ফুরিয়ে যায়
দুয়ার খুলেই রাখি
জ্যোৎস্না ঢোকে মনের জানালায়
আমার আকাশটুকু ওকেই শুধু দিই
জলচর পাখি উড়ে গেলে
নিজের নিঃসীম নৌকাখানি দোলে
লন্ঠনে মাস্তুলে গোলশূন্য পাক খায়
রোজ আমি বিনয়ের কাছে যাই
রোজ নতমস্তকে করুণার উচ্চারণ শিখি
দেশ ও বিদেশ থেকে বিপ্লবেরা ফিরে আসে ঘর
আমি শুধু দূরে দূরে চলে যেতে থাকি
স্মৃতির ঘরে
স্মৃতির ঘরে ওকে ডেকে বসাই
আজ বিনোদন নেই, কাতর অব্যয়
আর যাযাবর স্বপ্ন
নিয়ন্ত্রিত সামাজিক জীবনের কিছু ক্রিয়া
নিঃস্ব বিশেষণ
সবাই এসেছে সঙ্গে তার
তোমরা কেহই বৃদ্ধ হওনি?
আমি তো নিরালম্ব, ব্যর্থ ধীবর
শূন্যে ফেলেছি জাল, মৎস্যহীন
কিছু উড়ন্ত মাছের দৃশ্য, অন্তহীন জল
গভীর মহাকাশ আর ত্রিকালপ্রাজ্ঞ বক
সে এসে একে একে খুলে দেয় নদীর উৎস
অথবা উৎসব
রোদের হাসির মতো বিবাহের তাপ
আমি নৌকা বানাবার ভাষা খুঁজি
ওকে নিয়ে পার হব মহাকাল-নদী
দু-একটি যৌবন-গাছ আমার অন্তর্গত হাত নাড়ে
আমি পরামর্শ পাই আমারই স্মৃতির ঘরে
প্রাচীন স্পর্শের সেই বিশেষণ উচ্চারিত হলে
বুঝতে পারি
বয়স কখনো বৃদ্ধ করে না আমাদের
আমরা যুবকজলে দেখি যুবতীর স্নান