গত বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে উল্লেখ করে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘আগামী ২০২৪ সালে ৮০ বিলিয়ন এবং ২০২৬ সালে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার।’
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরাম খাঁ মিলনায়তনে ওভারসিস করেসপনডেন্ট অব বাংলাদেশ (ওকাব) আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশন করে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। ২০২৬ সালে তা কার্যকর হবে, এরপর আরও তিন বছর পর অর্থাৎ ২০২৯ সাল থেকে এলডিসিভুক্ত দেশের বাণিজ্য সুবিধা আর থাকবে না বাংলাদেশের। তখন থেকে উন্নত দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই বিশ্ববাণিজ্য করতে হবে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে রফতানি বাণিজ্যের এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমরা ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করেছি। আরও বেশ কয়েকটি দেশের সাথে পিটিএ বা এফটিএ এর মতো বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের জন্য গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা চলছে।’
শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির কারণে চীন এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ব্যবধান সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চীন বাণিজ্য ব্যবধান কমাতে ৯৯ ভাগ পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে সেপা (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট) চুক্তির জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ।’ দেশের অর্থনীতির ভিত্তি শক্ত রাখার জন্য রফতানি বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে মোট রফতানির প্রায় ৮২ ভাগ অবদান রাখছে উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, ‘পাশাপাশি আইসিটি, লেদার, প্লাস্টিক, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাটসহ প্রায় ১০টি পণ্য রফতানি বৃদ্ধির বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলোর রফতানি দিন দিন বাড়ছে। তৈরি পোশাক রফতানিতে আমাদের আরও সম্ভাবনা রয়েছে। মিয়ানমার বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী ছিল, তাদের তৈরি পোশাক খাত প্রায় বন্ধ। চীন তৈরি পোশাক শিল্প রিলোকেট করছে। ফলে আমাদের সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দক্ষ জনশক্তি রয়েছে, উৎপাদন খরচ কম। তৈরি পোশাক শিল্পে গ্রিন ফ্যাক্টরি এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। ফলে রফতানি বাণিজ্যে আমাদের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর সফল হয়েছে। ভূটান ও নেপালের সাথে সড়ক পথের ফ্রি ট্রানজিট সুবিধা দিতে সম্মত হয়েছে ভারত। ভারতের সাথে সড়ক, নৌ এবং আকাশ পথে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ বাড়ছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হচ্ছে, নদীর পানি বণ্টন সবমিলিয়ে সাতটি চুক্তি হয়েছে। এতে করে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হবে। ভারত বাংলাদেশের তিনটি স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ করছে, আরও চাইলে বাংলাদেশ বিবেচনা করবে। বাংলাদেশের সাথে ভারতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, ডিমের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার পর্যবেক্ষণ করছে। ডিম আমদানির বিষয়টি দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিয়ে প্রয়োজনে বিবেচনা করা হবে। বাংলাদেশ একসময় সুই, সুতা, বোতাম ও কার্টনসহ সকল এক্সেসরিজ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে তৈরি পোশাক বিদেশে রফতানি করতো। এখন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে বিদেশে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ রফতানি করছে। আমাদের সক্ষমতা আছে, এগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।’
ওভারসিস করেসপনডেন্ট অব বাংলাদেশের (ওকাব) আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক কাদির কল্লোল, সদস্য-সচিব নজরুল ইসলাম মিঠু এবং ওকাবের সিনিয়র সদস্য ফরিদ হোসেনসহ সিনিয়র সাংবাদিকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।