রাত পোহালেই আশ্বিন, আজই অরন্ধন উৎসব, কেন হয় রান্নাপুজো?
ভাদ্রে রেঁধে আশ্বিনে খাওয়া। বাংলা সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীদের ঐতিহ্যপূর্ণ পার্বণ হল অরন্ধন বা রান্না পুজো।
ভাদ্রের শেষে সংক্রান্তিতে হয় মনসা পুজো। মূলত মনসা পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল এই অরন্ধন। গ্রাম বাংলায় এখনও অনেক বাড়িতেই এই অরন্ধন পালন করা হয়। ভাদ্রে রান্না করে আশ্বিনে খাওয়া এই পুজোর অন্যতম রীতি।
সাধারণত বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন হয় এই পুজো। রান্নাঘর পরিষ্কার করে হেঁশেলের এককোণে শালুক বা ফণিমনসা গাছের ডাল সাজিয়ে পুজো করা হয়। সেই সঙ্গে বসানো হয় মনসার বিশেষ ঘট। ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজো। এদিন সব বাড়িতেই উনুন জ্বলে না। হাঁড়ি চড়ে না।
আগের রাত থেকেই রান্না করে রাখা হয়। মরশুমি শাক, সবজি, মাছ এসব দিয়েই পুজো হয়। সেই তালিকায় থাকে বিভিন্ন ভাজা। যেমন কলাভাজা, বেগুন ভাজা, আলু ভাজা, শুকনো মুসুর ডাল, ইলিস মাছ ভাজা, চিংড়ি মাছ ভাজা, বেসনের বড়া, বেগুনি, পায়েস, মালপোয়া, চাটনি এসব থাকবেই। অনেকে এদিন নানা রকম পিঠেও বানান।
বছরে দুবার হয় এই অরন্ধন উৎসব। মাঘ মাসে সরস্বতী পুজোর পরের দিন হয় শীতলষষ্ঠী। যেদিন বাড়িতে গোটা সেদ্ধ খাওয়ার রীতি রয়েছে। বাসি খাবারই খাওয়া হয় এই অরন্ধন উৎসবে। অনেক বাড়িতে এদিন পঞ্চসাপের ফণা যুক্ত প্রতিমা পুজো করা হয়। এছাড়া ফণিমনসা গাছের ডাল তো থাকেই। প্রাচীন শস্যোৎসবের স্মৃতি বহন করে এই রান্নাপুজো।
বর্ষায় সাপের উপদ্রব বাড়ে। এবছর বর্ষায় তেমন বৃষ্টি না হলেও ভাদ্রে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। আর তাই ভাদ্র মাস শেষ হওয়ার আগের দিনই করা হয় মা মনসার আরাধনা। দেবীর প্রতীক হিসেবে সিঁদুর-তেল দিয়ে পুজো করা হয় রান্নাঘর আর উনুনে।
এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণই হল খাওয়াদাওয়া। কচু শাক, ওলের বড়া, ইলিশ, চালতার চাটনির স্বাদই আলাদা হয় এই পুজোয়। সেই সঙ্গে নিকনো রান্নাঘর জোড়া আলপনাও রান্নাপুজোয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
বছরে দু’বার অরন্ধন উৎসব পালিত হয়। একটি, মাঘ মাসে সরস্বতী পুজোর পরের দিন শীতলষষ্ঠীতে শিলনোড়া পুজোর দিন। আরেকটি, ভাদ্র সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর দিন। অনেকে আবার উনুন পুজো বা গৃহ দেবতার পুজো হিসাবে মনে করেন এই উৎসবকে। এই দুই দিন বাড়িতে উনুন জ্বালানোর নিয়ম নেই। তাই আগের দিন রান্না করে সেই বাসি খাবার খাওয়ার রীতি রয়েছে অরন্ধনে।
বর্তমানে উৎসবের এই মেজাজ ও রীতিনীতি অনেকটা শিথিল হয়েছে কর্ম ব্যস্ততার জন্য। তবে শহরে কম হলেও, গ্রামাঞ্চল বা শহরতলিতে এখনও এই পার্বণ ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়। তবে রান্না পুজো মূলত পশ্চিমবাংলার আদি বাসিন্দারা অর্থাৎ এদেশীয়রা পালন করেন। এটি পূর্ববঙ্গীয়দের রীতি নয়।#