তিমিকে অনেকে মাছ বলে মনে করলেও আদতে এটি একটি স্তন্যপায়ী সামুদ্রিক প্রাণী। এর মধ্যে অন্যতম হলো স্পার্ম তিমি। অন্যান্য তিমিদের তুলনায় পানির নিচে সবচেয়ে গভীরে যেতে পারে প্রাকৃতিক সাবমেরিন নামে পরিচিত এই প্রাণীটি।
স্পার্ম তিমি সাধারণত ১৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বিশ্বের সব প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মস্তিষ্ক কিন্তু স্পার্ম তিমিরই। সেই বিরাট মস্তিষ্ক দিয়ে এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটি কী কাজে ব্যবহার করে, তা নিয়ে অন্তত ২০০ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন।
সেই গবেষণার অংশ হিসেবেই ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস জার্নালের কার্যধারার একটি নতুন গবেষণাপত্রের লেখকরা প্রমাণ করেছেন, প্রতীকী চিহ্নিতকরণ দ্বারা স্পার্ম তিমির সংস্কৃতি চিহ্নিত করা হয়।
গবেষণার সময়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, নিজেদের সংস্কৃতি প্রকাশ করতে স্পার্ম তিমিরা নিজেদের মাথা থেকে জোরালো স্ট্যাকাটো ক্লিক নির্গত করে থাকে। আর এর মাধ্যমেই বিভিন্ন গোষ্ঠী একত্রিত নিজেদের শনাক্ত করে থাকে স্পার্ম তিমিরা। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন আইডেন্টিটি কোরাস।
এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, স্পার্ম তিমিদের এই কোরাস মানুষের স্বাভাবিক কথোপকথনের মতোই। গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক হ্যাল হোয়াইটহেড বলেন, স্পার্ম তিমিদের একই গ্রুপের সদস্যদের বা বিভিন্ন দলের সদস্যদের মধ্যে ভাব বিনিময়ে কিংবা নির্দেশনা দিতে এই কোরাস ব্যবহৃত হয়।
হ্যাল হোয়াইটহেড আরও বলেন, এই কোরাসের মাধ্যমেই স্পার্ম তিমিরা নিজেদের জাতিগত বৈচিত্র্য আর পৃথকীকরণ করে থাকে। কারণ ভিন্ন একটি গোষ্ঠী বা প্রজাতির উপস্থিতি সেই কোরাসের সংকেতকে প্রভাবিত করে থাকে।
প্রশান্ত মহাসাগরে স্পার্ম তিমি সাতটি ভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর গবেষণা করে এই গবেষণাপত্র তৈরি করা হয়েছে। আর এই কোরাস স্পার্ম তিমির বিভিন্ন গোষ্ঠীর রুচির পরিচয়ও বটে। স্তন্যপায়ী সামুদ্রিক প্রাণীটি শুধু স্বগোত্রের কাছে না, অন্যদের কাছেও নিজেদের বংশের পরিচয় দিচ্ছে।
গবেষণাপত্রের প্রাথমিক লেখক ড. টেলর হার্শ বলেন, মানুষ যেমন অন্যের বাহ্যিক বিভিন্ন দিক থেকে তার জাত-বংশ এবং ধর্ম বিচার করে থাকে, তেমনি স্পার্ম তিমিও আইডেন্টিটি কোরাসের মাধ্যমে নিজের পরিচয় বহন করে থাকে। তাদের গবেষণাপত্রে এ বিষয়ক যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
গবেষণার সময়ে স্পার্ম তিমিগুলোর ব্যবহৃত আইডেন্টিটি কোরাসগুলোর বিরাট তথ্য নতুন আবিষ্কৃত সেটাসিন ট্রান্সলেশন ইনিশিয়েটিভে (সেটি) সংগ্রহ করা হয়েছে। সেখান থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সেই আইডেন্টিটি কোরাসগুলোর অর্থ বের করা হবে