ওরা শুধু
ওরা শুধু ঘৃণা ছড়ায়
মনগড়া বাক্যবাণে
যুক্তি তর্কের পথে না হেঁটে
সুর চড়িয়ে চোখ রাঙানি।
ওরা শুধু প্রচার করে
অস্থিরতার বিজ্ঞাপন
ভারসাম্যের প্রসঙ্গ টেনে
ভাঙছে বহমান সংহতি।
ওরা শুধু প্রাচীর তুলে
মানুষে মানুষে নিরবধি
বিভাজনের মারণ লীলায়
বিনাশ করছে মনুষ্যত্ব।
ওরা শুধু মুখোশধারী
রক্তমাংসের মানব দানব
রাজনীতির ক্ষমতার লাভেই
শুরু করছে সম্প্রীতির দফারফা।
ওরা শুধু অমানবিক
অধর্মের কথার জালে
ঢালতে থাকে বিদ্বেষ বিষ
সমাজ গড়ের জনমানসে
স্বাধীনতা তুমি
স্বাধীনতা এখনো তুমি শৃঙ্খলিত
দেশ শাসকের কর্তৃত্বে
সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েও
পৌঁছয়নি কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।
স্বাধীনতা এখনো তুমি অবদমিত
প্রতিক্ষণে বাহুবলীদের মুষ্টিতে
অবরুদ্ধ পরিসরেই সীমায়িত
তোমার অস্থিত্বের সঞ্চালন।
স্বাধীনতা এখনো তুমি বিশেষ শ্রেণীর
অদৃশ্য বেষ্টনী পেরিয়ে
সাধারণকে ছুঁতে অপারগ
ক্রমশ ক্ষমতার বশংবদ।
স্বাধীনতা দিনকে দিন তুমি ম্রিয়মাণ
অদম্য তেজোদ্দীপ্ত উদ্দীপনা
তিলে তিলে বিনির্মিত আকাঙ্ক্ষা
অতল সাগরে নিমজ্জিত।
স্বাধীনতা জেগে উঠো
অচলায়তন জাল ছিন্ন করে
মেলে ধরো সাম্যের বাতাবরণে
যেখানে আমরা সবাই রাজা।
প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখে
নিরন্তর প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখে দাঁড়িয়ে
সভ্যতার দুর্বার বিজয়াভিযান
অতিমারির বিস্তৃত সংক্রমণ শৃংখলে
ক্রমশ ঢেকুর তুলছে মনুষ্যের স্পন্দন।
শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষিত মসনদ
আজ শঙ্কার ঢক্কা নিনাদ বিপর্যস্ত,
অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিকূলতার আগাছায় আকীর্ণ
বাসযোগ্য পৃথিবীর আনাচে-কানাচে,
পেশী শক্তির দুর্বিনীত আস্ফালন
নিমেষে নীরব দর্শক!
অদৃশ্য প্রতিপক্ষের মোক্ষম চালেই
ক্ষমতার মিনার পরিত্যাগ।
মুষিকের মতো ঠাঁই গেড়েছে
গৃহ নিভৃত বাসের সুরক্ষাগারে-
কালের অনাহুত অঘটনের ঘনঘটায়
মানবজাতি ছন্দহীনে ছত্রভঙ্গ,
চতুর্দিকে মুহূর্তেই ঘনীভূত গভীর সংকট
নেপথ্যে প্রকৃতির অসুস্থতা
ভারসাম্যের বাঁধন সীমা ডিঙিয়ে-
এক নিমেষে পরিণতির অন্তিমে উপনীত
দিশেহারা পৃথিবী বসিয়েছে মরণ কামড়
অচিরেই বিপন্নে অবরুদ্ধ মানবতা;
একেবারে ডুবন্ত তরীতে ভাসমান
শুধুই অবিরাম পরীক্ষা সম্মুখে।
বাঁচার সাধ
চাঁদনী রাতে মায়াবী আলোয়
মনটা যেন কাটছে ভালোই।
আকাশ ভরা তারার বাহার
প্রাণ জুড়ানো খুশির আহার।
মগ্ন বিভোর চেতন হাটে
চলেছি হেঁটে ভুবন মাঠে।
মুহূর্ত সাথে সতত খুঁজি
প্রতিনিয়ত ভাবনা গুজি।
স্নিগ্ধ বাতাস দিয়েছ দোলা
মধুর জীবন আত্ম ভোলা।
সুখের চাদর গায়ের জড়ে
স্বপ্ন ফানুস সহসা উড়ে।
দৃশ্য পটেই আঁকছি নানা
ছবির সারি জানা-অজানা।
আঁকড়ে ধরে সৃজন ডালা
গাঁথছি বসে ফুলের মালা।
স্মৃতির ভেলায় ভেসে গিয়ে
মন জেগেছে জোছনা নিয়ে।
আনন্দে আজ ভেঙেছে বাঁধ
পূরণ করি বাঁচার সাধ।
স্বার্থ লাভের ধর্ম
ধর্মটা আজ বড় হাতিয়ার
রাজনীতির ময়দানে
স্বার্থ লাভেই নিত্য সওয়ার
নেতা মন্ত্রী মন প্রাণে।
বিভেদ প্রাচীর উঠছে গড়ে
সমাজের আঙিনায়
সম্প্রীতি মানস নিমেষে নড়ে
চিরায়ত ভাবনায়।
চারিদিকে চলতে থাকে যথা
ধর্মের নৃশংস খেলা
ছড়িয়ে দিয়ে বিভাজনী কথা
বসেছে বৈষম্য মেলা।
বিদ্বেষ ভাব চারিয়ে দিয়ে
মানুষে মানুষে স্তব্ধতা’
ভুবন মাঝেই ধর্ম নিয়ে
জীবন জুড়ে রুদ্ধতা।
জীবন নিরবধি
নিঃসঙ্গের কারাগারে বন্দি জীবন
নিদারুণ দগ্ধতায় নিরন্তর
খুঁজতে আছি উপশমের কেরামতি।
অনুভূতির নিগূঢ় সূক্ষ্মাবকাশে
ভরে গেছে যন্ত্রণার বিষাদ গাঁথা,
প্রবাহমানতার বিপ্রতীপে ভাসমান
জীবনের সহজাত সুস্থতা।
অসহায় নিধিরাম সর্দারে অবতীর্ণ
স্বকীয় সত্তার পরিচয়,
দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে
শান্তি স্বরূপ নিঃসঙ্গতায় ফেলে দিয়ে-
একে একে স্বজন বিদায়
যন্ত্রণার লহরীতে ক্রমশ আন্দোলিত
মননের সুখের স্বরলিপি।
তবুও তীব্র ধাক্কায় খুঁজেছি
অন্য ভাবনার প্রতিবিধান
যেখানে তাৎক্ষণিক ক্ষত নিরাময়ে-
আবারো পুনরুজ্জীবিত জীবনের কামব্যাক
নিঃসঙ্গের কারাগারেই অবলীলায়
সহনশীলতার স্বাভাবিকতায় সৃষ্টি হবে,
আর একটা নতুন প্রাণোচ্ছ্বাস
ফিনিক্সের আগমনে ভাষা পাবে
বন্দিত্বের শৃংখল মোচনে চিরন্তন স্বাধীনতা
যার পরতে নবজীবনের স্বতঃস্ফূর্ততা।