দখল হয়ে যাওয়া ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডগুলোর রুশ অবস্থানে পাল্টা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী। এতে করে রুশ বাহিনী আরও চাপে পড়েছে এবং তাদের দখল থেকে আরও ভূখণ্ড ছিনিয়ে নেওয়ার দাবি করেছে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের এই পাল্টা আক্রমণ এবং অগ্রযাত্রা মস্কোর সামরিক প্রতিপত্তিতে বিস্ময়করভাবে আঘাত করেছে। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাল্টা হামলায় মঙ্গলবারও ইউক্রেনের অগ্রগতি অব্যাহত ছিল। ইউক্রেনের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীগুলো বলেছে, তাদের সেনাবাহিনী ভভচানস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এই শহরটি রাশিয়া থেকে মাত্র ৩ কিমি (২ মাইল) দূরে অবস্থিত এবং যুদ্ধের প্রথম দিনেই এটি দখল করেছিল রাশিয়া।
এদিকে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় আরেক শহর মেলিতোপলও ছেড়ে গেছে রুশ সৈন্যরা। শহরের মেয়র বলেছেন, রাশিয়ার সৈন্যরা দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মেলিতোপল ছেড়ে মস্কোর দখলে থাকা ক্রিমিয়ার দিকে চলে গেছে।
বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এর তথ্য অনুসারে, মেয়র ইভান ফেডোরভ টেলিগ্রামে লিখেছেন, ক্রিমিয়ান উপদ্বীপ এবং ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সীমানা চিহ্নিতকারী গ্রাম চোনহারের একটি চেকপয়েন্টে সামরিক সরঞ্জামের বহরের খবর পাওয়া গেছে।
তবে এসব দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি আলজাজিরা।
এর আগে গত শনিবার ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ প্রদেশের ইজিয়ামে নিজেদের প্রধান ঘাঁটি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয় রাশিয়া। ইউক্রেনের এই অঞ্চলটি চলমান যুদ্ধের প্রধান ফ্রন্ট লাইনগুলোর একটি। চলমান সামরিক অভিযানে ইজিয়ামকে লজিস্টিক বেস হিসাবে ব্যবহার করছিল রাশিয়ান বাহিনী।
এখান থেকেই রুশ সেনারা দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক নিয়ে গঠিত ডনবাস অঞ্চলে কয়েক মাস ধরে আক্রমণ পরিচালনা করে আসছিল। এমনকি রাশিয়াও উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের প্রধান শহরগুলো হারানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছে। যা কিছু সামরিক বিশেষজ্ঞরা যুদ্ধে ইউক্রেনের সম্ভাব্য অগ্রগতি হিসাবে দেখছেন।
এই পরিস্থিতিতে ছয় মাসের যুদ্ধে ইউক্রেন কোনো টার্নিং পয়েন্টে পৌঁছেছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, এটা বলা কঠিন। তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, ইউক্রেনীয়রা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে আমি মনে করি, দেশটির সামনে আরও দীর্ঘ পথ রয়েছে।’
রুশ আগ্রাসনের শুরু থেকে ইউক্রেনকে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সহায়তা প্রদান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ‘আগামী দিনে’ ইউক্রেনের জন্য আরও সামরিক সহায়তা ঘোষণা করতে পারে পরাশক্তি এই দেশটি।
গত সপ্তাহের শেষের দিকে ইউক্রেনীয় বাহিনী দখলে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরবরাহ কেন্দ্র বালাক্লিয়ার কেন্দ্রীয় চত্বরে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার বলেছিলেন, এই অঞ্চলে রাশিয়ার শাসন থেকে দেড় লাখ মানুষকে মুক্ত করা হয়েছে।
সেখানে ইউক্রেনের পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং মানবিক সহায়তা গ্রহণের জন্য বিশাল জনতা সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। তবে উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের অন্য এলাকাগুলোতে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে মালিয়ার বলেছেন, ইউক্রেনের বাহিনী ভালো অগ্রগতি করছে কারণ তারা অত্যন্ত অনুপ্রাণিত ও তাদের অভিযান সুপরিকল্পিত।