টানা প্রায় সাত মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসনে ইউক্রেন শুরুতে কোণঠাসা অবস্থায় থাকলেও দেশটি এখন পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। এতে করে সফলতার দেখা পাওয়ারও দাবি করেছে দেশটি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রুশ বাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ইউক্রেনীয় সেনারা ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা পুনর্দখল করেছে। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সেনারা রুশ বাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ান সেনাদের কাছ থেকে আরও বেশি অঞ্চল দখল করে নিয়েছে। ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, চলতি সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে ৬ হাজার বর্গ কিমি (২,৩১৭ বর্গ মাইল) এরও বেশি এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে।
তবে জেলেনস্কির এই দাবি ও পরিসংখ্যান স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।
এর আগে ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ প্রদেশের ইজিয়ামে নিজেদের প্রধান ঘাঁটি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয় রাশিয়া। ইউক্রেনের এই অঞ্চলটি চলমান যুদ্ধের প্রধান ফ্রন্ট লাইনগুলোর একটি। চলমান সামরিক অভিযানে ইজিয়ামকে লজিস্টিক বেস হিসাবে ব্যবহার করছিল রাশিয়ান বাহিনী। এখান থেকেই রুশ সেনারা দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক নিয়ে গঠিত ডনবাস অঞ্চলে কয়েক মাস ধরে আক্রমণ পরিচালনা করে আসছিল।
এমনকি রাশিয়াও উত্তর-পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের প্রধান শহরগুলো হারানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছে। যা কিছু সামরিক বিশেষজ্ঞরা যুদ্ধে ইউক্রেনের সম্ভাব্য অগ্রগতি হিসাবে দেখছেন।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার গভীর রাতে দেওয়া ভিডিও ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন: ‘সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত, আমাদের যোদ্ধারা পূর্ব এবং দক্ষিণে ইতোমধ্যে ইউক্রেনের ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি ভূখণ্ড মুক্ত করেছে।’
গত বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি বলেছিলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী এক হাজার বর্গ কিলোমিটার পুনরুদ্ধার করেছে। তবে রোববারের মধ্যে সেই সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটারে পৌঁছে যায়। আর সোমবার রাতের ভাষণে ইউক্রেনীয় বাহিনীর পুনরুদ্ধার করা ভূখণ্ডের পরিমাণ ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার বলে দাবি করলেন জেলেনস্কি।
এদিকে রাতের এই ভাষণে জেলেনস্কি পাল্টা আক্রমণে জড়িত ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি ব্রিগেডকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এমনকি ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের ‘সত্যিকারের বীর’ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন তিনি।
অবশ্য রাশিয়ার কবল থেকে ইউক্রেনের কোন শহর ও গ্রাম মুক্ত করা হয়েছে তা প্রকাশ করেননি জেলেনস্কি।
এর আগে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী স্বীকার করে যে, তাদের সৈন্যদের খারকিভ অঞ্চলের বালাক্লিয়া, ইজিয়াম এবং কুপিয়ানস্কের প্রধান শহরগুলো ছেড়ে যেতে হয়েছিল। রাশিয়া এখন এই অঞ্চলের পূর্বাঞ্চলীয় ছোট একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক সাফল্য রাশিয়ার সামগ্রিক অভিযান পরিকল্পনার ওপর ‘উল্লেখযোগ্য প্রভাব’ ফেলবে। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জোর দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযান ‘সকল কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত’ অব্যাহত থাকবে।
রাশিয়া জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের পুনরুদ্ধার করা এলাকাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে রুশ সামরিক বাহিনী।