পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি জিতল শ্রীলঙ্কা। রেকর্ড সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের সঙ্গে ব্যবধান কমাল অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত দেশটি।
রবিবারের দুবাইয়ে ফাইনালে ৫ উইকেটে ৫৮ রানের নড়বড়ে অবস্থান থেকে রাজাপাকসার দৃঢ়তায় ৬ উইকেটে ১৭০ রানের পুঁজি গড়ে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান থমকে যায় ১৪৭ রানে।
১৭১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুর ওভারে ১২ রান স্কোরবোর্ডে তোলে পাকিস্তান, যদিও ১০ রানই আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। অফ ফর্মে থাকা বাবর আজম এদিনও দলের জন্য কিছু করতে পারেননি। ৩ ওভারে ২০ রান তোলা পাকিস্তানকে চতুর্থ ওভারে বিপদে ফেলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন এই দলপতি। প্রমোদ মাধুসনের লেগ সাইডে ছোড়া বলকে ফ্লিক করতে গিয়ে ফাইন লেগে দিলশান মাদুশাঙ্কার তালুবন্দি হন তিনি। যদিও বলটি ছেড়ে দিলেই ওয়াইড হতো।
৬ বলে ৫ রানে বাবর আউট হওয়ার পরের বলেই ফেরেন ফখর জামান। অফ স্টাম্পের দূরের একটি বলকে ড্রাইভ করতে গিয়ে ইনসাইড এজে বোল্ড হন তিনিও। অপরপ্রান্তে থাকা রিজওয়ান অবশ্য সে সময় দলের হাল ধরেন। তাকে সঙ্গ দেন ইফতিখার আহমেদ। এই দুজনের হিসেবই ব্যাটিংয়ে ১০ ওভারে ৬৮ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে পাকিস্তান।
পানি বিরতির পর অবশ্য রান রেট বাড়াতে শুরু করে এই জুটি। ১২তম ওভারে হাসারাঙ্গাকে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে ১০০’র পথে নিয়ে যেতে থাকেন ইফতিখার। কিন্তু ১৪তম ওভারে মাধুসানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ স্কোয়ার লেগে ক্যাচ আউট হন ইফতিখার। ৩১ বলে ৩২ রান করেন তিনি।
এই ব্যাটারের বিদায়ে ক্রিজে নেমে রানের চাকা বাড়ানোর চেষ্টা করেন মোহাম্মাদ নওয়াজ। ১৫ ওভারে দলীয় সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ১০১ রান। সে সময় ৩০ বলে তাদের জিততে আরও প্রয়োজন ৭০ রান। ওভার প্রতি ১৪ রান। ধীরগতিতে ব্যাট করতে থাকা রিজওয়ান অপরাজিত ৪৭ (৪৫ বলে)।
এই অবস্থায় দ্রুত রান তুলতে গিয়ে মোহাম্মাদ নওয়াজ ফেরেন চামিকা করুনারত্নের বলে। ৬ রানে তিনি ফিরলে ক্রিজে নেমে রিজওয়ানকে সঙ্গ দেন খুশদিল। সেই ওভারে ছক্কা হাঁকিয়ে ৪৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পুরণ করেন রিজওয়ান। তবে পরের ওভারেই হাসারাঙ্গার শিকার হন এই ব্যাটার। সে সময়েই পাকিস্তানের পরাজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়।
২৩ বলে জয়ের জন্য ৬১ রান প্রয়োজন হলে আসিফ আলী ও খুশদিল মিলে তা আর করতে পারেননি। সেই ওভারর প্রথম বলেই হাসারাঙ্গার গুগলিতে বোল্ড হন আসিফ। টানা দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একই বোলারদের বিপক্ষে প্রথম বলেই আউট হয়েছেন তিনি। এর দুই বল পরেই বিদায় নেন খুশদিল।
এক ওভারে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলঙ্কার জয় সেই ওভারেই নিশ্চিত করে ফেলেন হাসারাঙ্গা। এরপরের ওভারে শাদাব খানকে বিদায় করেন মাহেশ থিকসানা। তখনই শ্রীলঙ্কার জয় নিশ্চিত হয়ে যায়, কারণ শেষ ১২ বলে জিততে পাকিস্তানকে নিতে হত ৫১ রান। ১৯তম ওভারে মাদুসান ফেরান নাসিম শাহকে। শেষ ওভারের শেষ বলে করুনারত্নের বলে বোল্ড হন হারিস। ২৩ রানের জয় পায় শ্রীলঙ্কা। ২০১৪ সালের পর আবারও এশিয়া কাপ জিতে নেয় দলটি।
টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই কুশল মেন্ডিসকে হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। নাসিম শাহ’র ভেতরে আসা বলে স্টাম্প ভাঙ্গে এই ব্যাটারের। তবে পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে রান তুলতে থাকেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। যদিও আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা হারিস রউফের ওপর চড়াও হতে গিয়ে আউট হন। ৮ রানে তিনি ফিরলে দানুশকা গুনাথিকালাকেও বিদায় করেন এই পেসার।
পাওয়ার প্লেতে৩ ব্যাটারকে হারানো লঙ্কানদের আরও চাপে ফেলেন পার্ট টাইমার ইফতিখার। অষ্টম ওভারে তাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডি সিলভা। ২৮ রানে এই ব্যাটার ফিরলে ২ রানে অধিনায়ক শানাকাকে বোল্ড করেন শাদাব খান। সে সময় লঙ্কানদের স্কোর ৫৮। কিন্তু এরপরই যেন বদলে যায় সব।
ভানুকা রাজাপাকশাকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানের বোলারদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করেন হাসারাঙ্গা। তাদের ব্যাটে ১৪তম ওভারের শুরুতেই দলীয় শতরান পুরন করে লঙ্কানরা। তাদের ঝড়ো ৫৮ রানের জুটিতেই বদলে যায় শ্রীলঙ্কার স্কোরকার্ড। ৩৬ করে রউফের তৃতীয় শিকার হয়ে হাসারাঙ্গা ফিরলেও রাজাপাকশে উইকেটে থিতু হয়ে খেলতে থাকেন।
শেষের দিকে বাজে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের বড় খেসারত দেয় পাকিস্তান। রাজাপাকশার জোড়া ক্যাচ মিসে ১৫০’র ঘরে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ব্যাটার। শেষের দিকে পাকিস্তানের বোলারদের ওপর আরও চড়াও হন এই ব্যাটার। তার ৪৫ বলে ৭১ রানের ইনিংসে ১৭০ রানের পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ১৭০/৬ (২০ ওভার) (রাজাপাকশা ৭১*, হাসারাঙ্গা ৩৬) (রউফ ৩/২৯)
পাকিস্তান: ১৪৭ অলআউট (২০ ওভার) (রিজওয়ান ৫৫, ইফতেখার ৩২) (মাদুসান ৪/৩৪ হাসারাঙ্গা ৩/২৭)