কবি কাকলি ভট্টাচার্য্য মৈত্র’র ছয়টি কবিতা

কাকলি ভট্টাচার্য্য মৈত্র
কাকলি ভট্টাচার্য্য মৈত্র
4 মিনিটে পড়ুন

পেট ভরে যায় দুঃখ গিলে

বাজার গিয়ে দেখতে পেলাম; বিকোচ্ছে সুখ সস্তা দামে/
পাশেই বসে দুখ দোকানি হাজার টাকা মূল্য ধরে/
লম্বা লাইন সুখের বাজার জুটছে তবে, দু’শ গ্রামে/
দুখ বাজারে উড়ছে মাছি, তবুও দাম যাচ্ছে বেড়ে।

….আমার ঘরে হাজারটা মুখ খিদের জ্বালায় মুষড়ে মরে,
হোকনা দামী দুখের বাজার যতই বিকোক চড়া দামে,
তবুও আমায় কেজি দুয়েক নিতেই হবে দুঃখ কিনে।

এমনি করেই দুখ কিনেছি সারাজীবন অজুত কেজি,
খালি পেটে কেউ থাকি না দুঃখ গিলি ভরাপেটেই।

….এখন দেখি সুখ দোকানি, বাড়ি এসে নাড়ছে কড়া,
সাফ বলে দিই; লাগবে না ভাই
ওসব খায় ভদ্রলোকে…
অম্বল স্বাদে কষায় নোনা;

- বিজ্ঞাপন -

হেকে বলি উঁচু স্বরে, একগোলা দুখ মজুত আছে।
সুখ দিয়ে ভাই, পেট ভরে না…
….সুখী হই, দুঃখ গিলেই!

তলিয়ে যাচ্ছে

বড়ো হতাশ লাগে, বড়ো হতাশ,
মানুষ আর মানুষ হতে চাইছে না, মানুষ হতে চাইছে না।
বিভ্রান্ত বিচলিত পথিক,
সে নীচে নেমে যাচ্ছে, ক্রমশ নীচে নেমে যাচ্ছে
তলিয়ে যাচ্ছে,
নিষ্ঠুর বর্বর হিংসায় উন্মত্ত মমতাহীন সংযমহীন
ঘৃণিত জীবে…
….একি উদ্দ্যেশ্য তার! বড়ো বিস্ময়!

হতাশ লাগে, বড়ো হতাশ লাগে-
শুধু অপচয় আর অপচয়। মানবতার অপচয়-
মানুষ আর মানুষ হতে চাইছে না, মানুষ হতে চাইছে না।
সে নীচে নেমে যাচ্ছে, ক্রমশ নীচে নেমে যাচ্ছে,
নামতে নামতে তলাতে তলাতে কী পাবে জানে না।
তবু নেমে যাচ্ছে, নুড়ি বালি চিবিয়ে খেতে খেতে
কাদা মাখতে মাখতে
নেমে যাচ্ছে, তবুও নেমে যাচ্ছে।

ওদের টিকি বেঁধে দাও গাছের ডালে পাতায় লতায়
গাছেরা কখনো তলিয়ে যায় না, আকাশ ছোঁয়ার আনন্দে
আকাশে ডালপালা মেলে মেতে ওঠে হরিনাম সংকীর্তণে
ওদের টিকি বেঁধে দাও, গাছের ডালে লতায় পাতায়

গাছ পাখি ফুল নদী মেঘ,
মানুষ বড়োই অসহায় বড়ো অসহায়,
মানুষের পাশে দাঁড়াও, মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায়,
মানুষ বড়ো অসহায়, বড়ো অসহায়।

- বিজ্ঞাপন -

ওরা ফেরে, বারবার

….তারপর ওরা পৃথিবী ছেড়ে উপরে উঠতে লাগলো।
আরো আরও উপরে। মাধ্যাকর্ষণের সীমানা
পেরোনোর আগে, একবার ফিরে তাকালো মেয়েটা
পাড়ার গলি, উঠোন, তুলসী মাঁচা, টালির চাল
আহা, ভালোবাসার পরিবার…
আবেগী মেয়েটা ঝুঁকতেই,
ছেলেটার একটানে সীমানা পেরিয়ে গেল ওরা

….আর ফিরবার উপায় নেই।
পৃথিবী নেই, গাছ নেই।
মাটি নেই।
দুঃখ নেই, কষ্ট নেই, দ্বন্দ্ব নেই, ধন্ধ নেই, ফাঁকি নেই,
অভাব নেই,
নুন নুন চোখের জল নেই…

শান্তির অথই সাগরে সাঁতার কাটতে কাটতে
ঘুমিয়ে পড়েছিলো ওরা।
কিচ্ছু মনে নেই, কিচ্ছু মনে নেই আর
অঘটন কখন ঘটে গেছে…
আর খুঁজে পায়নি ওরা, হারিয়ে গেছে দু’জনের থেকে,
দু’জন
তারপরও ওরা ফিরেছিলো কয়েকবার
প্রেমের টানে, পৃথিবীর টানে, মাটির টানে,

- বিজ্ঞাপন -

…..পৃথিবী জানে
সে কথা, পৃথিবী বাতাসকে বলেছিলো
বাতাস গাছকে বলেছিলো গাছ পাতা খসিয়ে
সেই খবর মাটিকে
সহনশীলা মাটি চেপে গিয়েছিলো, মাটি তো জানতো

মেয়েটা বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধ ভালোবাসে
ছেলেটা ভিজতে
ওরা বারবার ফিরবে। ঠিক খুঁজে নেবে একদিন…

পাখির চোখে

গান্ডীবধন্বা অর্জুন, পাখির চোখে চোখ রাখে
একাগ্র চিত্তে…
লক্ষ্য, কেবল লক্ষ্যভেদের আশায়
ব্রহ্মচর্যও চঞ্চলতা আনে মনে, ফাল্গুনী শর
বাড়ে একাগ্রতা।
ধীরে ধীরে সরে যায় পৃথিবী
দূরে, আরও আরও দূরে
যেখানে পৌঁছোতে, মহাযোগ সাধন
দূরত্ব যদিও, এক আলোকবর্ষ, অন্য সবার কাছে
তখনও পাখির চোখে চোখ রেখে।

মিষ্টি সুরেলা পাখির গান, চঞ্চলতার অবসান
স্থির পাখির চোখের একাগ্রতায়,
আশিষ আসে বৃষ্টি ধারায় নেমে-
ধনুকের ছিলা বেয়ে। বাড়ে দিগ্বিজয়ের নেশা,
পাখির চোখে চোখ রেখে
চক্রভেদ, স্বয়ম্বর, মহাযুদ্ধের বিস্বাদ…
ওই একাগ্রতায়-
কুরুক্ষেত্রের মহাসমরও আনে, মহাপ্রস্থাণের আস্বাদ।
পাখির চোখে তখনও চোখ রেখে…

তবুও বিশ্বাস করি

অস্থির সময়, অবিশ্বাস আর ছলনার কোলাকুলি-
ভেঙেচুরে যাচ্ছে, বিশ্বাস সম্পর্ক জীবন,
ঠিক নদীর পাড় ভাঙে যেভাবে, ভেসে যায় চরাচর…
নিস্পাপ নিরীহের আর্তনাদ আছড়ে আছড়ে পড়ে।

অস্থির হয়েছে সময়,
… জল নেমে যাবে একদিন, নীল হবে শরতের আকাশ,
দেবী বরণের পদ্মে ঢেকে যাবে পাঁক ঢাকের শব্দে আর্তনাদ,
নেমে যাবে জল, একদিন।

বিশ্বাস করি,
তবু বিশ্বাস করি। তবুও…
আবার সূর্য উঠবে, ভোরের শিশির করবে ঝিকমিক।
নেমে যাবে জল, একদিন…

অদ্ভুত নেশা

বহুযুগ ধরে বয়ে চলেছে, সপ্তকল্প প্রবাহিনী
প্রত্যেকবার প্রদক্ষিণ করে মনে হয়েছে, এই বুঝি মুক্ত হলাম।
মিটলো দায়—
….কিন্তু টান থেকে যায় প্রত্যেকবারই।
এ এক অদ্ভুত নেশা, বারবার ফিরবার।

সপ্তকল্প প্রবাহিনী যতদিন বয়ে যাবে, ঠিক ততবার।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
৬ই আগষ্ট ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ শহরে জন্ম, গল্পকার ও কবি কাকলি ভট্টাচার্য্য মৈত্রের। তিনি শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। ছোটোবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা এবং শাস্ত্রীয় ও রবীন্দ্র নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিত, উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জ ও শিলিগুড়ি শহরে। বর্তমানে কলকাতার বাসিন্দা, "আড়বাঁশির সুরে" সাহিত্য গ্রুপের কর্ণধার। লেখার জগতে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেরিতে প্রবেশ হলেও, লেখালেখি, কবিতা পড়া এবং পাঠ করার প্রতি আকর্ষণ ছোটোবেলা থেকেই। "এবং শ্রবণা" একক কবিতার বই। ভ্রমণপিপাসু প্রকাশনীর সঙ্গে যুক্ত, বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের পত্রিকা শান্তিনিকেতন থেকে প্রকাশিত "মূর্তবাণী", নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের শান্তিনিকেতন শাখার মুখপত্র "বনবাণী", নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের হাওড়া শাখার মুখপত্র "কিরণ", শান্তিনিকেতন থেকে প্রকাশিত "আজকের কবিতা", বহির্বঙ্গ বাংলা ভাষা সংস্কৃতি পরিষদের ভাষা চেতনা পরিবারের পত্রিকা "একুশে একুশ", বহ্নিপতঙ্গ পরিবারের পত্রিকা "অন্তর মহলের গল্প", শিশু সাহিত্য পত্রিকা "অরুণ আলোয়", "অকালকথা" ই-ম্যাগাজিন, "দৈনিক কাব্যপত্র", এছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কবিতা এবং বাংলাদেশের "দৈনিক আলাপ", "দেশপত্রিকা.কম" এবং বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!