মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকার মানুষের জীবনযাত্রা দ্রুত পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো।
তিনি বলেছেন, “জীবনধারা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। যানজট কমে আসলে জীবনযাত্রার গতি বৃদ্ধি পাবে।”
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় জাপানভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা শাপলা নীরের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে আছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “জাইকার অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের “ভিশন ২০৪১” সহ দেশের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
মেট্রোরেল প্রকল্পের পাশাপাশি জাইকা ঢাকা বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (তৃতীয় টার্মিনাল) প্রকল্প, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু এবং কক্সবাজারের মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের মতো কিছু মেগা প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে।
গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) মেট্রোরেলের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৫ টাকা এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করেছে। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত একজন যাত্রীর ভাড়া হবে ১০০ টাকা। যেসব যাত্রী সাপ্তাহিক, মাসিক, পারিবারিক কার্ড ব্যবহার করবেন, তাদের বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কী হারে ভাড়া আদায় করা হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা বিনামূল্যে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারবেন বলেও জানান মন্ত্রী।
আগামী ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই অংশে স্টেশন রয়েছে ৯টি। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আগামী বছরের শেষে চালুর পরিকল্পনা আছে। এই অংশে স্টেশন রয়েছে সাতটি।
মেট্রোরেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু হলে মেট্রোরেল ভোরে দুই দিক থেকে যাত্রা করবে। প্রাথমিকভাবে রাত ১২টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। শুরুতে ১০ মিনিট অন্তর মেট্রোরেল চলবে। পর্যায়ক্রমে এক ট্রেনের সঙ্গে অন্য ট্রেনের সময়ের পার্থক্য কমে আসবে।
প্রকল্প সূত্র বলছে, একটি ট্রেনের ছয়টি কোচের মধ্যে দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ট্রেইলর কার। এতে চালক থাকবেন। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবেন।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে সরকার মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেল চালুর কথা জানালেও শুরুতে শুধু উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল চলবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০২৪ সালের জুনে মেট্রোরেল প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।