বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও কমেছে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার আগের তুলনায় বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) তেলের দাম ১ মার্কিন ডলারেরও বেশি কমেছে। এতে করে গত ৭ মাসের মধ্যে বিশ্ববাজারে এখন তেলের দাম সর্বনিম্নে রয়েছে।
শীর্ষ অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক চীনে করোনা নিষেধাজ্ঞা এবং সুদের হার আরও বৃদ্ধির আশঙ্কার মধ্যেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং জ্বালানির কম চাহিদার উদ্বেগকে বাড়িয়ে তুলেছে। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার সকালে বিশ্ব বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম প্রতি ব্যারেলে ১.০৮ মার্কিন ডলার কমে যায়। আগের সেশনের তুলনায় শতাংশের হিসেবে যা এক দশমিক ২ শতাংশ কম। এতে করে ব্যারেল প্রতি তেলের দাম নেমেছে ৯১.৭৫ ডলারে।
গত সাত মাসের মধ্যে এই হার সর্বনিম্ন। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৯১.২০ মার্কিন ডলার।
এছাড়া বুধবার প্রথম সেশনে যুক্তরাষ্ট্রের বেঞ্চমার্ক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের প্রতি ব্যারেলের দাম ১.২০ ডলার কমে ৮৫.৬৮ মার্কিন ডলারে নেমেছে।
এর আগে গত সোমবার অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) এবং ওপেক প্লাস নামে পরিচিত তাদের মিত্ররা আগামী অক্টোবর থেকে প্রতিদিন এক লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দেয়। আর এরপরই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যায়।
ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ওএএনডিএ’র সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মোয়া বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে ওপেক প্লাসের উৎপাদন কমানোর বিষয়টিকে ম্লান করা কঠিন ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশিত কিছু ডেটা পরিষেবা থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি মোটেই ভালো দেখাচ্ছে না এবং এটিই অপরিশোধিত তেলের দামের জন্য সমস্যা।’
ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস প্রতিষ্ঠান সিএমসি মার্কেটের বিশ্লেষক টিনা টেং বলছেন, শক্তিশালী মার্কিন ডলার, (সুদের) হারের আক্রমনাত্মক বৃদ্ধি, বন্ড বেড়ে যাওয়া এবং চীনের প্রবৃদ্ধিতে মন্দা তেলের দামকে চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
রয়টার্স বলছে, কঠোর করোনা নীতিমালার কারণে ২১.২ মিলিয়ন বাসিন্দাসহ চেংডুর মতো শহরগুলোতে লকডাউন জারি রেখেছে চীন। এতে মূলত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তাদের মধ্যে গতিশীলতা এবং তেলের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে।
গত আগস্টে এশিয়ার পরাশক্তি এই দেশটির রপ্তানি ও আমদানি গতি হারিয়েছে এবং প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস উল্লেখযোগ্যভাবে অনুপস্থিত। এক বছর আগের তুলনায় গত আগস্ট মাসে চীনে অপরিশোধিত তেল আমদানি কমেছে ৯.৪ শতাংশ।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার আরও বৃদ্ধির দিকেও নজর রাখছেন। ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসলে এটি দ্রুত হারে বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া ইসিবি’র বৈঠকের পর এ বিষয়ে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভেরও একটি বৈঠক হবে।
গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাঁধার পর থেকেই মন্দাভাব শুরু হয় জ্বালানি তেলের বাজারে। জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত শতাংশ হিসেবে গত ৬ মাসে বিশ্ব বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ ও ডব্লিউটিআইয়ের দাম কমেছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।
চীনের সরকারি তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রুড তেলের আমদানিকারক চীনে গত জুন মাসে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করায় জুলাইয়ে তা আবারও কমে যায়।
এছাড়া চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অপ্রত্যাশিত ধীরগতির কারণে গত জুলাই মাসে দেশটিতে দৈনিক তেল পরিশোধনের পরিমাণও অনেক কমে যায়।