পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১৩শ’ ছাড়িয়েছে। সোমবার দেশটির জাতীয় দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সাম্প্রতিক বন্যায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৩২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি।
সোমবার নতুন করে যেসব হতাহতের খবর পাওয়া গেছে তার সবগুলোই এসেছে সিন্ধু প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে। সেখানে নতুন করে আরও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত জুনের মাঝামাঝি থেকে সময় থেকে প্রদেশটিতে বন্যায় অন্তত ৫২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ জুন থেকে খাইবার পাখতুনখোয়ায় মোট ২৮৯ জন মারা গেছে। বেলুচিস্তানে মৃতের সংখ্যা অন্তত ২৬০। উত্তর-পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশে ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বেলুচিস্তান, সিন্ধু প্রদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। খাইবার পাখতুনখোয়া এবং পাঞ্জাবের কিছু কিছু অংশ তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলও। টানা বর্ষণে আকস্মিক বন্যায় বহু-ঘর বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎসংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত। প্লাবিত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছে দিতে বেশ ভুগতে হচ্ছে জরুরি বিভাগের সদস্যদের। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই কাজে অংশ নিয়েছে। সেনা, নৌবাহিনী এবং বিভিন্ন এনজিওর স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় কয়েক লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেছেন, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক। ক্ষতিগ্রস্ত তিন কোটি ৩০ লাখ মানুষের জন্য ব্যাপক পরিসরে মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। পাকিস্তানি প্রবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহায়তার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বের এমন ভয়ঙ্কর সংকট প্রত্যক্ষ করার পরও চোখ বন্ধ করে রাখা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মঙ্গলবার তার পাকিস্তান সফরের কথা রয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেছেন, পাকিস্তানে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশুকে মর্মান্তিক পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। তাদের প্রতি সংহতি জানাতে জাতিসংঘ মহাসচিব দেশটি সফরে যাবেন। সফরে জলবায়ু বিপর্যয়ের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করবেন তিনি।
এদিকে পাকিস্তানের বন্যাদুর্গতদের জন্য তিন কোটি ডলারের মানবিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও সহায়তা বিষয়ক সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)-এর এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে মানবিক সহায়তা হিসেবে তিন কোটি ডলারের তহবিল দেবে যুক্তরাষ্ট্র। ইউএসএআইডি-এর মাধ্যমে দেশটিকে এই সহায়তা দেওয়া হবে। এর আগে ইসলামাবাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত ২৮ আগস্ট বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠায় তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ভারী বর্ষণজনিত এই বন্যায় গত জুন থেকেই প্লাবিত হয়ে আছে পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ভূমিধস ঘটছে। নদীর তীব্র স্রোতে ভেসে গেছে বহু ঘরবাড়ি ও সেতু। পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শেরি রেহমান উদ্ভূত বাস্তবতাকে একটি ‘দানবীয় বর্ষা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিকে ২০১০ সালের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। সে বছর বন্যায় দুই হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারান। পানির নিচে ডুবে যায় দেশের এক পঞ্চমাংশ এলাকা।