চীনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ান প্রদেশে শক্তিশালী ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৩০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সোমবার আঘাত হানা এই ভূমিকম্প প্রাদেশিক রাজধানী চেংডু ও অন্যান্য দূরবর্তী প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে। ২০১৭ সালের এক ভূমিকম্পের পর প্রদেশটিতে সোমবারের ভূমিকম্পকে শক্তিশালী হিসেবে বলছে চীন।
রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে ভূমিধসের কারণে অনেক বাড়িঘর ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রদেশটির অন্তত একটি এলাকায় সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের এলাকায় অবস্থিত বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে কোনও ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিদ্যুতের প্রাদেশিক গ্রিডে ক্ষয়ক্ষতির কারণে প্রায় ৪০ হাজার ব্যবহারকারী অন্ধকারে রয়েছেন।
চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক কেন্দ্র বলেছে, চেংডু থেকে প্রায় ২২৬ কিলোমিটার দূরের দক্ষিণ-পশ্চিমের পার্বত্য শহর লুডিং এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল।
দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ান প্রদেশে, বিশেষ করে পশ্চিমের পর্বতমালায় কিংহাই-তিব্বত মালভূমির পূর্ব সীমানা বরাবর টেকটোনিক সক্রিয় এলাকায় ভূমিকম্প একেবারে সাধারণ ঘটনা।
প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের শহর চেংডুতে বসবাসকারী লরা লুও তার বাসায় ফেরার সময় সুউচ্চ ভবনের আতঙ্কিত বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখেন। সেখানকার বাসিন্দারা মোবাইল ফোনে ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা পাওয়ার পর বাড়িঘর ছাড়েন বলে জানিয়েছেন লরা লুও।
পেশায় জনসংযোগ পরামর্শক লুও রয়টার্সকে বলেছেন, সেই সময় তিনি অনেক লোকজনকে দেখেছেন, যারা এতটাই আতঙ্কিত ছিলেন যে, কাঁদতে শুরু করেছিলেন।
ভূমিকম্প আঘাত হানার সময়ের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সব কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে লাগল। এটা সত্যিই বেশ ভীতিকর ছিল।’
চায়না নিউজ সার্ভিস বলছে, লুডিংয়ে ভূমিকম্প অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। সেসময় লোকজনের দাঁড়িয়ে থাকাই কঠিন হয়ে গিয়েছিল। ভূমিকম্পে অনেক বাড়িঘরে ফাঁটল দেখা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ভিডিওতে দেখা যায়, লোকজন যখন ভবন থেকে রাস্তায় দৌড়ে বেরিয়ে আসছেন, তখন ভবনের লাইট দুলছে। সিচুয়ান প্রদেশের সরকার বলেছে, ভূমিকম্পে ৩০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে চারজন লুডিংয়ের।
চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের ২০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কমপেক্ষ ৩৯ হাজার এবং ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ১৫ লাখ মানুষের বসবাস।
২০১৭ সালের আগস্টের পর সিচুয়ানে সোমবারের এই ভূমিকম্পকে শক্তিশালী হিসেবে বলা হচ্ছে। ওই বছর এই প্রদেশটির আবা এলাকায় ৭ মাত্রার এক ভূমিকম্প আঘাত হানে।
তবে সিচুয়ানে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের রেকর্ড করা হয় ২০০৮ সালের মে মাসে। ওই সময় ওয়েনচুয়ানে উৎপত্তি ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
সূত্র: রয়টার্স।