রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) কার্যালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হামলার শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক।
আহতরা হলেন—বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাম্যান রুবেল ইসলাম।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় বিএমডিএ কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহত অবস্থায় রুবেল ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার প্রতিবাদে বিএমডিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন সাংবাদিকরা।
সাংবাদিক বুলবুল হাবিব জানান, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সকাল ৮টায় অফিস শুরু হওয়ার কথা। সেই নির্দেশনা কতটুকু কার্যকর হয়েছে খোঁজ-খবর নিতে সকালে ক্যামেরাম্যান নিয়ে তিনি বিএমডিএ কার্যালয়ে যান। সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক (ইডি) আব্দুর রশিদ কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এর পরপরই তিনি সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন।
তিনি আরও জানান, বিনা অনুমতিতে কেন প্রবেশ করেছেন এবং কেন ছবি তুলছেন—জানতে চেয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠেন বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক। একপর্যায়ে দ্বিতীয় তলায় তার দপ্তরে উঠে যান আব্দুর রশিদ। কিছুক্ষণ পরে ১৫-২০ জন লোক বুলবুল হাবিব ও রুবেলকে ঘিরে ধরেন। তাদের ওপর এলোপাতাড়ি হামলা চালায় এবং ক্যামেরা ও বুম ভেঙে ফেলেন।
বুলবুল হাবিব বলেন, “তাদের হামলায় ক্যামেরাম্যান রুবেল গুরুতর আহত হয়েছে। রুবেলের শরীরে শক্ত কোনো কিছু দিয়ে জোরে আঘাত করেছেন তারা। বর্তমানে তার অবস্থা গুরুতর। তিনি রামেক হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ করা হবে।”
এদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকরা বিএমডিএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।
রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল বলেন, “পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের সহকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এটি বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। বিএমডিএর নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে আমার সহকর্মীদের ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সঙ্গে হামলায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমার সহকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে বিএমডিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে পুরোপুরি হরণ করেছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনে তারা শুধু বাধাই দেননি, হামলা চালিয়ে বিএমডিএ কার্যালয়ের সামনে থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের গালাগালিও করেছেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অনতিবিলম্বে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। অন্যথায় বিএমডিএর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।”
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি।
বিএমডি’র চেয়ারম্যান আখতার জাহানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে অন্য একজন ফোন রিসিভ করেন। তিনি “ম্যাডাম ব্যস্ত আছেন” বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, “সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে । বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”